সুনসান সজল ঘোষের বাড়ি।—নিজস্ব চিত্র
স্বামীর ‘খুনি’ সাজা পেল কি না তা জানতে কৌতুহল, ভয় ছিল নাকি ধরেই নিয়েছিলেন খালাস হয়ে যাবে অভিযুক্তেরা সজল ঘোষের স্ত্রী ইন্দ্রাণী ঘোষের মুখ দেখে কিছুই বোঝার উপায় ছিল না।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় রায় ঘোষণার আগে থেকেই তাঁর খোঁজ নেই। ফোন করলেও ধরছেন না। বাড়ির লোক বলতে চাইছেন না তিনি কোথায়। আর পাড়া-পড়শিও কেউ জানেন না তাঁর হদিস। অবশেষে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে যে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা তিনি, সেখানেই খোঁজ মিলল তাঁর। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের কুবাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় নিঃসাড়ে ঢুকে দেখা গেল চাদর মুড়ি দিয়ে বেঞ্চে বসে রয়েছেন ইন্দ্রাণী ঘোষ। সঙ্গে আর এক শিক্ষিকা। পাশে কয়েকজন পড়ুয়া ছুটোছুটি করছে। সংবাদমাধ্যমের লোক দেখেই অবশ্য চমকে উঠলেন ইন্দ্রাণীদেবী। ডুকরে বলে উঠলেন, ‘আমি কোনও কথা বলব না। এখানেও ছাড়লেন না আমায়’। তারপরেই ছুটে ঢুকে পড়লেন পাশের একটি ক্লাসে। স্কুলের অন্য শিক্ষিকারাও কেউ মুখ খুলতে চাইলেন না।
এ দিন নিহত সজল ঘোষের বাড়ির দরজায় বারবার ডাকাডাকি করেও কেউ দরজা খোলেন নি। পাড়াটাও যেন কেমন থমথমে। তারই ফাঁকে সজলবাবুর এক আত্মীয়, শ্যামল ঘোষ শুধু বললেন, “বাড়ির সবাই মিলে ঠিক করব, এরপরে কী করা হবে।” পরে ফোনে পাওয়া গেল সজল ঘোষের এক দাদা সমীর ঘোষকে সঙ্গে। তিনি বলেন, “কীভাবে যে ভাই খুন হল অজানাই রয়ে গেল।” তাঁর অভিযোগ, “পুলিশ যদি আর একটু সক্রিয় হতো, তাহলে ভাইকে যারা খুন করেছে তারা শাস্তি পেত।” তিনি বলেন, “সিআইডি বা সিবিআই যাতে তদন্ত করে তার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বর্ধমান বা নদিয়া পুলিশ কেউই সাহায্য করেনি।” স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও পুলিশকেই দুষছেন। তদন্তকারী অফিসারের তদন্ত সন্তুষ্ট নন তাঁরা। তিনি ঠিকঠাক রিপোর্ট দেন নি বলেও তাঁদের অভিযোগ। এলাকার তৃণমূল নেতা ও ওই ঘটনার অন্যতম সাক্ষী পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়ও রায় শুনে হতাশ। তিনি বলেন, “যা দেখেছিলাম তাই আদালতকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু আইনজীবীদের মারপ্যাঁচে সঠিক বিচার পেলাম না। তবে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।” পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপনবাবুর সঙ্গেই ঘটনার রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালে গিয়েছিলেন সজল ঘোষ। এ দিন তপনবাবু বলেন, “তদন্তকারী অফিসার বিভাস সেন মামলার অনেক জরুরি নথি পেশ করতে পারেন নি। তারই মাসুল দিতে হচ্ছে আমাদের।”