সাত দিন ধর্মঘট সমর্থনে নারাজ শ্রমিকরা

বিড়ি মালিকদের ধর্মঘটে সায় দিল না শাসক, বিরোধী কোনও শ্রমিক সংগঠনই। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত মালিকদের সঙ্গে বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতাদের এ নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক চললেও অনড় মনোভাবের জন্য শেষ পর্যন্ত ওই বৈঠক ভেস্তে যায়।

Advertisement

বিমান হাজরা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৪
Share:

বিড়ি মালিকদের ধর্মঘটে সায় দিল না শাসক, বিরোধী কোনও শ্রমিক সংগঠনই। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত মালিকদের সঙ্গে বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতাদের এ নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক চললেও অনড় মনোভাবের জন্য শেষ পর্যন্ত ওই বৈঠক ভেস্তে যায়।

Advertisement

১ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশ জুড়ে ধর্মঘট ডেকেছেন বিড়ি কারখানার মালিকরা। কেন্দ্রীয় সরকার ‘টোবাকো আইন ২০০৩’ চালু করে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে বিড়ির প্যাকেটের গায়ে ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তির ছবি ছাপানো বাধ্যতামূলক করে। বিড়ি কারখানার মালিকদের আশঙ্কা ওই নিয়ম কার্যকরী হলে সারা দেশে বিড়ি বিক্রির হার কমে যাবে। ওই নিয়ম প্রত্যাহার করার জন্য মালিক পক্ষ সপ্তাহজুড়ে ওই ধর্মঘটের ডাক দেন। কিন্তু একটানা সাত দিন বিড়ি কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকেরা সঙ্কটে পড়বেন সেই দাবি তুলে বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলি ওই সমর্থনে সায় দেয়নি। এ দিনের ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত খান। তিনি বলেন, “সাত দিন ধরে ধর্মঘটের নামে শ্রমিকদের রুজি বন্ধ রেখে আন্দোলন করলে কোনও মতে তা সমর্থন করা যায় না।” তিনি জানান, ওই সিদ্ধান্ত কোনও মতে সমর্থন করবে না সিটু। একই ভাবে মালিকদের ডাকা ধর্মঘটকে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী বলে জানিয়েছেন আইএনটিইউসির রাজ্য কমিটির সদস্য বাদশার আলি। তিনি বলেন, “বৈঠকে ধর্মঘটের পক্ষে শ্রমিক সংগঠনের সমর্থন চেয়েছিলেন মালিকেরা। কিন্তু ধর্মঘট ডাকার আগে মালিকদের ভাবা উচিত ছিল কাজ বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের দিন চলবে কী করে।” তিনি আরও বলেন, “বিড়ি মালিকেরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। অন্য পথে আন্দোলন করুন। কিন্তু কাজ বন্ধ হলে শ্রমিক অশান্তি হলে তার দায় নিতে হবে কারখানার মালিকদের।” তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, “আইএনটিটিইউসি সমস্ত রকম ধর্মঘটের বিরোধী। মালিক পক্ষের ডাকা বৈঠকে হাজির হয়ে সংগঠনের তরফে এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক নিয়ে বিধিনিষেধ কার্যকরী করতে অভিযানে নামে। তাতে ভারত-সহ ১৫০টি দেশ একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। খোলা স্থানে ধূমপান, এই সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রকাশ, ১৮ বছরের কম বয়েসিদের কাছে তামাকজাত সামগ্রী বিক্রি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত সামগ্রী বিক্রি চুক্তি বদ্ধ দেশগুলিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে প্রতিবছর ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় তামাকজনিত কারণে। শুধুমাত্র তামাকজনিত রোগের শুশ্রূষা করতে প্রতি বছর ভারত সরকারকে খরচ করতে হয় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা যা তামাক থেকে আদায়ীকৃত রাজস্বের অন্তত ৪ গুণ বেশি। যেহেতু যাঁরা বিড়ি পান করেন তাঁদের সিংহভাগই লেখাপড়া জানেন না বা কম জানেন তাই ২০০৬ সালের ৫ জুলাই প্রতিটি বিড়ির প্যাকেটে তামাকজনিত কারণে ক্যানসারে আক্রান্তদের একটি ছবি দিয়ে সতর্কীকরণ সংক্রান্ত প্রচার বাধ্যতামূলক করার জন্য নির্দেশ জারি করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। পরে অন্তত ১০ বার ওই নির্দেশ কার্যকরী করার সিদ্ধান্ত স্থাগিত রাখা হয় নানা কারণে। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার আর তা স্থগিত রাখতে চাইছে না।

Advertisement

বিড়ি উৎপাদনে জঙ্গিপুর মহকুমা দেশের মধ্যে অন্যতম কেন্দ্র। সারা ভারতে ৩০০টি বিড়ি কারখানার মধ্যে ৮২টি রয়েছে ধুলিয়ান ও অরঙ্গাবাদে। প্রায় ১০ লক্ষ শ্রমিক ওই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। স্বাভাবিকভাবে ওই বিরাট সংখ্যক শ্রমিকদের নিজেদের সমর্থনে পেতে চেয়েছিল কারখানার মালিকেরা। বিড়ি মালিক সংগঠনের সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, “এত দিন বিড়ির প্যাকেটের গায়ে ৪০ শতাংশ জায়গা জুড়ে ওই ছবি ছাপা হত। বর্তমান সরকারের নির্দেশ, প্যাকেটের ৮৫ শতাংশ জায়গা জুড়ে ছাপতে হবে সেই ছবি। কিন্তু ওই ছবি প্যাকেট জুড়ে ছাপালে বিড়ি বিক্রি কমবে। বিড়ি শিল্প সঙ্কটে পড়বে। শ্রমিকরা কাজ হারাবেন।” তিনি আরও বলেন, “আমরা শ্রমিক সংগঠনের সাহায্য চেয়ে বৈঠক ডেকেছিলাম। কিন্তু কোনও সংগঠনই আমাদের সাত দিনের বিড়ি শিল্প ধর্মঘটকে সমর্থন করতে রাজি হননি। ফলে আমরা নিজেরাই কারখানা বন্ধ রাখব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন