গয়েশপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
তিনি এলেন। কর্মীদের সাহস জোগালেন। এবং ফিরে গেলেন।
কিন্তু তারপরেও বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের ভয় যে কতটুকু ভাঙল তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সোমবার নদিয়ার গয়েশপুর, কল্যাণী, মদনপুর ও হরিণঘাটায় (এই চারটি এলাকাই বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত) কর্মিসভা করে গেলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা এ রাজ্যে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।
এ দিন প্রতিটি সভায় তিনি কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে বললেন, “আপনারা নির্বাচনের জন্য লড়াই করুন। যে কোনও সমস্যায় দল আপনার পাশে থাকবে। নির্বাচনের কাজ করতে গিয়ে আইনগত সমস্যা দেখা দিলে কিংবা কেউ আক্রান্ত হলে দল পাশে থাকবে।” দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নির্ভয়ে কাজ করুন। ভয় পেলে জিততে পারবেন না। প্রয়োজনে রুখে দাঁড়ান।”
তিনি ফিরে যাওয়ার পরেই দলীয় কর্মীদের একাংশকে বলতে শোনা গেল, “উনি তো বলে দিয়েই চলে গেলেন। কিন্তু কাজের কাজ যে কতটুকু হবে তা তো বুঝতে পারছি না।” ঠিক যেমন বুঝতে পারছে না গয়েশপুরও। কেন? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গয়েশপুরের জনাকয়েক বাসিন্দা সমস্বরে বলছেন, “ভোটের দিন যে এই এলাকায় কী হয় তা নিজে চোখে না দেখলে বুঝতে পারবেন না মশাই। বুথ জ্যাম থেকে, ছাপ্পা ভোট বাদ যায় না কিছুই। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও শুনতে হয়, ‘অহেতুক দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনাদের ভোট হয়ে গিয়েছে। বাড়ি ফিরে বিশ্রাম করুন।’ পাল্টা কিছু বলার জো পর্যন্ত থাকে না।”
কথাটা যে শুধু কথার কথা নয় তা টের পাওয়া গেল ওই এলাকার অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে। স্থানীয় এক প্রৌঢ় বলছেন, “কোনও নির্দিষ্ট দল নয়। যখন যে ক্ষমতায় থাকে তখনই সেই দল ওই একই পথ বেছে নেয়। সেখানে তৃণমূল, সিপিএম সবই সমান। এখন বিজেপির ওই নেতা তো অনেক কথাই বলে গেলেন। দেখা যাক ভোটের সময় সেই চেনা ছবির বদল হয় কি না।”
এ দিন কেন্দ্রীয় ওই নেতার সামনে নির্বাচনের সময় এমন ঘটনার কথা জানিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন খোদ দলের কর্মীরাই। যা শুনে সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “আসন্ন বনগাঁ লোকসভার উপনির্বাচনে ১০০ কোম্পানিরও বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। রাজ্য পুলিশ বুথের ২০০ মিটার দূরে থাকবে। আপনারা নির্ভয়ে থাকতে পারেন।” তাঁর সংযোজন, “যে সময় গয়েশপুরের মানুষ ভোট দিতে পারতেন না, সেই সময় কেন্দ্রে মনমোহন সিংহের সরকার ছিল। এখন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ফলে এখন কেউ কিছু করতে পারবে না।”
গয়েশপুরের সভা শেষে কর্মীদের একাংশ জানান, তাঁদের অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। ভোটের সময় বুথের ভিতরে ছাপ্পা ভোট চলে, অধিকাংশ বুথে শাসক দলের এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনও দলের এজেন্টরা ঢুকতেই পারেন না। প্রতিবাদ করলে জোটে মারধর। শাসক দল পাল্টে গেলেও গয়েশপুরের এই ভোট-চিত্রের কোনও পরিবর্তন হয়নি। এ বারও যে কী হবে তা নিয়ে একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। দলের রাজ্য কমিটির সম্পাদিকা তথা গয়েশপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দীপা বিশ্বাস বলেন, “আমাদের কাছে খবর আছে যে, তৃণমূল এখন থেকেই সন্ত্রাসের জন্য ছক করতে শুরু করেছে। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও জানিয়েছি।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “যেখানে বিজেপির কোনও অস্তিত্বই নেই, সেখানে এই ধরনের অভিযোগের কোনও মানেই হয় না।”
এ দিন সিদ্ধার্থনাথ যখন কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে নদিয়ার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন, তখন কৃষ্ণগঞ্জে সভা করছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহ। এ দিন কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুলের খেলার মাঠের ওই সভায় কৃষ্ণগঞ্জের প্রয়াত বিধায়ক তৃণমূলের সুশীল বিশ্বাসের কন্যা, আইনজীবী সুনয়না বিশ্বাস (ঘোষ) আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপিতে যোগ দেন গাজনা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের এক সদস্যও।