মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়া জাল নোট। —নিজস্ব চিত্র।
সাত-সকালে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে জনা তিনেক যুবককে ঘুরঘুর করতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল দৌলতপুর সীমান্তের টহলরত বিএসএফ জওয়ানদের। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে আচমকা বেড়ার ওপার থেকে উড়ে আসে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট। বেড়ার দিকে জওয়ানরা দৌড়ে যেতেই ওই তিন যুবক ধা। পরে প্যাকেট খুলতেই মেলে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার জাল নোট।
মঙ্গলবার ধুলিয়ানের দৌলতপুরের ওই ঘটনার পর বিএসএফের ২০ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কোম্পানি কম্যান্ডার প্রেম সিংহ বলেন, ‘‘এই নিয়ে গত আড়াই মাসে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। ২৮ কিলোগ্রাম রূপা, এক কিলোগ্রাম সোনা ও চার কিলোগ্রাম দামি পাথর উদ্ধার করা হয়েছে।” বিএসএফের ওই কর্তা বলেন, “চোরা কারবারের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন জন জড়িত বলে জানতে পেরেছি। তাদের নাম, ঠিকানা বিজিবি-কে (বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ) জানিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছে।”
বিএসএফের এক আধিকারিক বলছেন, “সীমান্ত লাগোয়া একটি এলাকায় জাল নোট ছাপানো হচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। বেশ কয়েকটি গ্রামকে ‘স্মাগলিং জোন’ হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ফরাক্কা রেল স্টেশন ও ধুলিয়ান বাজারকে।
মুর্শিদাবাদে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বেশ কিছু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। সেখানে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে গঙ্গা অথবা পদ্মা। বেশ কিছু এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। ফলে সীমান্ত এলাকায় এই ধরনের পরিকাঠামোগত ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে পাচারকারীরা।
বিএসএফের এক কর্তা বলেন, “নজরদারি বাড়ানোর ফলে গরু পাচার অনেকটাই কমেছে। কিন্তু জাল টাকা পাচারের রমরমা বাড়ছে। পাল্টাচ্ছে পাচারের কৌশলও। কথাবার্তা হয়ে যাচ্ছে ফোনে। তারপর নির্দিষ্ট জায়গায় প্যাকেটটা ছুড়ে ফেলতে পারলেই কাজ হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই খুব সহজে প্লাস্টিকের প্যাকেটে পাচার হয়ে যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার জাল নোট।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত পাঁচ বছরে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় তিন কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৩০০ জনেরও বেশি। জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “পাচার রুখতে বিএসএফের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সতর্ক করা হয়েছে সীমান্তের থানাগুলোকেও।”