সভার অনুমতি দেওয়া নিয়ে হিমশিম প্রশাসন

সবাই চান সন্ধ্যার সময়। বহরমপুরের বড় মোড় বলতে কিন্তু প্রধানত পাঁচটি। অথচ যুযুধান দল চার। শহরের নিমতলা মোড়, কালেক্টরি মোড়, কল্পনা মোড়, খাগড়া চৌরাস্তা ও সৈয়দাবাদ কুঞ্জঘাটা মোড়ে ছুটির দিনগুলিতে বিশেষ করে শনি ও রবিবার পথসভা করার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির চাহিদা থাকে।

Advertisement

শুভাশিস সৈয়দ

বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০০:৪০
Share:

সবাই চান সন্ধ্যার সময়। বহরমপুরের বড় মোড় বলতে কিন্তু প্রধানত পাঁচটি। অথচ যুযুধান দল চার।

Advertisement

শহরের নিমতলা মোড়, কালেক্টরি মোড়, কল্পনা মোড়, খাগড়া চৌরাস্তা ও সৈয়দাবাদ কুঞ্জঘাটা মোড়ে ছুটির দিনগুলিতে বিশেষ করে শনি ও রবিবার পথসভা করার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলির চাহিদা থাকে। জনবহুল ও ব্যস্ততম ওই মোড় দখলের জন্য প্রশাসনের কাছে আগাম আবেদন জানিয়ে রাখতেও তারা কসুর করছে না। সেই সঙ্গে রয়েছে স্বর্ণময়ী বাজার মোড়, কাশিমবাজার লালসড়ক মোড়, রাধারঘাটের মত মোড়।

তাই কাকে কখন কোন মোড়ে সভা করতে দেওয়া হবে, তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন। জনসভার বদলে পথসভাতেই সব দলই জোর বেশি দেওয়ায় চিন্তা আরও বেড়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক সন্দীপ দত্তের কথায়, “সব দলই চাইছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে সভা করতে। এ বার তার জন্য আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়। সেক্ষেত্রে একই দিনে দু’টি বা তিনটি দল একই জায়গায় সভা করতে চাইলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” আগে-পরে সভার অনুমতি দেওয়া যায় না? প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “সকালে ও সন্ধ্যায় আলাদা করে দু’টি দলকে অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যা গরম পড়েছে, তাতে সবাই তো চাইছে সন্ধ্যার সময়টাই। একই সময়ে দু’দলকে অনুমতি দেওয়া যাবে কী করে?” প্রশাসনের এক কর্তার কথা, “শ্যাম রাখি না কুল রাখি, এমন ঝঞ্ঝাটে পড়েছি।”

Advertisement

মাইকে প্রচার: পক্ষে-বিপক্ষে
ভোটের মুখে নিয়ম করে মাইক বাজিয়ে সভা করলে কী ভোগান্তি বাড়ে, না সেটাই তৈরি করে দেয় ভোটের মেজাজ?

মাইক বাজিয়ে ভোট প্রচারের কোনও দরকার নেই। অনেকের বাড়িতে অসুস্থ রোগী রয়েছেন। যাঁরা নিরিবিলি ভাবে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চান, তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সাধারণ ভোটারদের একটা বড় অংশ বাদমাধ্যম কিংবা বৈদ্যুতিন মাধ্যমের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন না। তবে বক্তব্যের মধ্যে নতুনত্ব বা বৈচিত্র্য কিছু না থাকলে বিরক্তি উদ্রেক করে।

উন্নত দেশগুলিতে যা সম্ভব, তা আমাদের দেশে কখনই সম্ভব নয়। এ দেশে আমরা মাইকে প্রচার শুনতেই বেশি অভ্যস্ত। আমার অন্তত ভাল লাগে। এখানেই সংসদীয় ভোট-রাজনীতির মজা।”

গৌতম বিশ্বাস, চিকিৎসক

সন্দীপন মজুমদার, প্রাবন্ধিক

রঞ্জিতা মণ্ডল, শিক্ষিকা

এই অবস্থায় বহরমপুর মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাত দিনের কর্মসূচি জানিয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করলে, তবেই তা মঞ্জুর করা হবে। এসডিও সুপ্রিয়বাবু বলেন, “কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল যদি একই সঙ্গে ৩০ দিনের কর্মসূচি জানিয়ে আবেদন করে, সে ক্ষেত্রে অন্য রাজনৈতিক দলগুলির কর্মসূচি ব্যাহত হবে। এ জন্য সাত দিন অন্তর রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের কর্মসূচি জানিয়ে আবেদন করার কথা বলা হয়েছে। তবে একই দিনে কোনও বিশেষ জায়গায় একাধিক রাজনৈতিক দল যদি পথসভা করার জন্য আবেদন করে, তখন কোন রাজনৈতিক দল আগে আবেদন জমা দিয়েছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এমনও হতে পারে ওই একই জায়গায় সময়ের পরিবর্তন ঘটিয়ে সকাল ও বিকেলে পথসভা করার অনুমোদন দেওয়া হতে পারে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল দু’টিকে।”

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু আইসিএসই চলছে। তাই মাইক আপাতত তেমন ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। কিন্তু শহরের মোড়গুলিতে ছোট ছোট পথসভা হচ্ছে। তাতে শব্দসীমা নিয়ন্ত্রণে রেখে ভোটের প্রচার করছে একরকম সব দলই। তাই প্রশাসনকে শব্দসীমার উপরেও নজর রাখতে হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “শব্দ নিয়ে সচেতনতা এখন সব দলের মধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়ে খুবই কড়া। তা ছাড়া কেউই চান না, পরীক্ষার্থীরা অসুবিধায় পড়ুক। কেননা তা হলে ভোটাররাই যে বিরূপ হয়ে যাবেন।” আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ওই পরীক্ষা শেষ না হওয়া অবধি মাইক ব্যবহার করা যাবে না বলে প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আগামী ২৪ এপ্রিল জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন। ফলে মাইকে প্রচারের জন্য ওই দুটি লোকসভা কেন্দ্রের রাজনৈতিক দলগুলি ১২ দিন সময় পাবে। সেই তুলনায় অবস্থা ভাল বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের। আগামী ১২ মে রয়েছে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন।

বহরমপুরের মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, “তবে উচ্চমাধ্যমিক শেষ হওয়ার সঙ্গেই মাইকে প্রচারের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি।”

বহরমপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কানাই রায় অবশ্য বলেন, “আগামী ৬ এপ্রিল থেকে মাইকে সভা করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের কথা বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য শহরের ওই মোড়গুলির বিকল্প কিছু নেই। গুরুত্বপূর্ণ ওই মোড়গুলিতে সভা করার জন্য প্রশাসনের কাছে আমরা আগাম আবেদনও জানিয়ে রাখছি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যও বলেন, “মাইকে প্রচার আমরা শুরু করে দিয়েছি। বহরমপুরে সভা করার কথাও প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। তার মধ্যে আগামী ১৬-১৯ এপ্রিল বৃন্দা কারাত, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার জেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে সভাও করবেন।” জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের বক্তব্য, “এখনও মাইকে প্রচারের বিষয়টি সেই ভাবে আসেনি। তবে আগামী ৪ঠা এপ্রিল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বহরমপুরে আসবেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে সভার দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। সেই সঙ্গে ৪-৬ এপ্রিল জেলার তিনটে লোকসভা কেন্দ্রের অধীর চৌধুরী সভাও করবেন।”

বহরমপুর থানারক আইসি অরুণাভ দাস জানান, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে সভা হলে যানজট তো হবেই। তার জন্য পুলিশ-প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন