সভায় বিক্রি হল না মমতার ছবি, হতাশ অশোক-কৃষ্ণেরা

মঙ্গলবার রাতেই জেলায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বহরমপুর সার্কিট হাউসে রাত কাটিয়ে বুধবার দুপুরে সাগরদিঘির ডুমারপাহাড়ে প্রশাসনিক সভা করেন তিনি। ঘোষণা ও শিলান্যাস হয় একাধিক প্রকল্পের।

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৪৮
Share:

সাগরদিঘিতে মমতার বই হাতে আগরপাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণ হালদার। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার রাতেই জেলায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বহরমপুর সার্কিট হাউসে রাত কাটিয়ে বুধবার দুপুরে সাগরদিঘির ডুমারপাহাড়ে প্রশাসনিক সভা করেন তিনি। ঘোষণা ও শিলান্যাস হয় একাধিক প্রকল্পের। দুপুর একটা থেকে মিনিট চল্লিশের বক্তব্যে রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান থেকে শুরু করে বিরোধীদের তোপ— বাদ গেল না কিছুই। সফরের চব্বিশ ঘণ্টায় উঠে এল এমনই টুকরো কিছু ঘটনা, বিচ্ছিন্ন কিছু ছবির—

Advertisement

সাকুল্যে ১৪০

Advertisement

বুধবার সাগরদিঘির সভাস্থলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ও জীবনী-সহ বই নিয়ে বসেছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার আগরপাড়ার কৃষ্ণ হালদার। পাশেই ছিলেন আর এক বিক্রেতা বারাসতের অশোক সরকার। তাঁর হাতেও মমতাকে নিয়ে একগাদা বই। ভিড়ে ঠাসা সভাতেও সে সব বিক্রি করতে না পেরে হতাশ দু’জনেই। দু’জনেরই দাবি তাঁরা তৃণমূলের সভায় সভায় মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ফেরি করে ফেরেন। কৃষ্ণবাবুর কথায়, ‘‘মাত্র সাড়ে চারশো টাকার ছবি বিক্রি হয়েছে। মালদহের গাজলের সভায় সেটুকুও হয়নি।’’ আরও খারাপ অবস্থা অশোকবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘এ দিন বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৪০ টাকার। গাজলে অবশ্য তাঁর ছ’শো টাকার বিক্রিবাটা হয়েছিল।’’ সরকারি সভা বলেই ছবি বিক্রিতে মন্দা, মত তাঁদের। একই সঙ্গে দু’জনে জানাচ্ছেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, তালডাংড়ায় ছবি বিক্রি হয়েছিল কয়েকগুণ— প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও দিদির ছবি ভাল বিকিয়েছে।

এই সংক্রান্ত আরও খবর...
• নজরে অধীর-গড়, ফিরিস্তি টেনে বোঝালেন মুখ্যমন্ত্রীও

ভোটপ্রচারে জাকির

দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাকে হাতিয়ার করে জঙ্গিপুর বিধানসভা এলাকায় ‘পরিবর্তনের ডাক’ দিয়ে কার্যত ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন শিল্পপতি জাকির হোসেন। মমতার যাতায়াতের পথে অজস্র ফ্লেক্স ফেস্টুন টাঙানো থাকতে দেখা গিয়েছে। তাতে লেখা ছিল ‘সোনার বাংলা গড়তে ভাই, এ বার জঙ্গিপুরে পরিবর্তন চাই’। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি ছিল জাকিরের।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বহু আগেই শিল্পপতি জাকিরকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছেন জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন। শনিবার দলীয় কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকেও জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী জানিয়ে দেন জঙ্গিপুর বিধানসভায় দলের প্রার্থী জাকিরই। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সভাতেও হাজির ছিলেন তিনি। তবে শ্রোতার আসনে। জাকির অবশ্য বলেন, ‘‘সবটাই দল প্রচার করছে। দলের সিদ্ধান্ত আমার কাছে চূড়ান্ত।’’ মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মান্নান এতে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না।

প্রশংসা মতিঝিলের

প্রশাসনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি সম্পর্কে জানানো হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে সাগরদিঘি থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু, মত পাল্টে মুখ্যমন্ত্রী চলে যান বহরমপুরে। পরে মতিঝিলের প্রশংসা করে মমতা বলেন, ‘‘এটি আদর্শ টুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে উঠেছে। চার মাসে প্রায় ৪ লক্ষ দর্শনার্থী গিয়েছেন সেখানে। তা দেখে রাজ্য সরকার আদিনা মসজিদ, পাথরচাপড়ি, তারাপীঠ-সহ অন্য পীঠস্থানগুলির পরিকাঠামোও নতুন করে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’

পাশে সরকার

লালগোলার ময়াতে পদ্মার ভাঙন রোধে ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। সাগরদিঘিতে এ কথা জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সেখানে ৭৫০ মিটার স্পার বাঁধানোর কাজ দ্রুত শুরু হবে।’’ বুধবার থেকেই উত্তরবঙ্গ পরিবহণের আটটি নতুন বাস বালুরঘাট পর্যন্ত চালানোর কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন সরকারি বাসে চড়তে এখন থেকে আর ভাড়া দিতে হবে না সাংবাদিকদের। তা শুনে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন, বাম আমল থেকেই সরকারি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারি সাংবাদিকেরা বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসে যাতায়াত করতে পারেন। ফ্রি পাশের কার্ডও রয়েছে তাদের।তা হলে নতুন করে ঘোষণা কেন?

বাড়তি সুবিধা

সিভিক ভলেন্টিয়ার্সদের ভাতা ছিল ৩৫০০ টাকা। রাজ্য সরকার এসে তা বাড়িয়ে ৫৫০০ টাকা করেছে। পরে পুলিশের চাকরিতেও অগ্রাধিকারের সুযোগ দেওয়া হবে তাদের। এমনটাই জানিয়েছেন মমতা। মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা শুনে হতবাক হয়ে যান সভার আশেপাশে ডিউটিরত সিভিক কর্মীরা। এঁদেরই একজনের প্রশ্ন, ‘‘মুর্শিদাবাদে কোনও দিনই ৫৫০০ টাকা হাতে পাই না আমরা। সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মারফত বেতনের টাকা নামে নামে জমা হয়। বেতন দেওয়া হয় ৫১৪৫ টাকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন