প্রয়োজনীয় নথি না থাকায় মাঝপথেই হাসপাতাল সুপারের সাক্ষ্য স্থগিত রাখার আবেদন করেছিলেন আইনজীবী। শুক্রবার নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জজ সুধীর কুমারের আদালতে তাঁকে দিয়েই ফের শুরু হল সজল ঘোষ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ।
এ দিন শুরুতেই নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসলপাতালের সুপার প্রদীপকুমার দাসকে প্রশ্ন করা শুরু করেন নবদ্বীপের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায়। আগের দিনের প্রসঙ্গ টেনে প্রথমেই জানতে চান গত ০৯/০১/১২ তারিখ নবদ্বীপ স্টেট জেনারল হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে ভর্তি হওয়া সন্তু ভৌমিক, হালিম শেখ, সৌভিক আইচ এবং সজল ঘোষের ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’ কে লেখেন। সুপার জানান, হাসপাতালের স্টাফ নার্স তৃপ্তি ব্যানার্জি। বিকাশবাবু জানতে চান, আহতদের ‘ইনজুরি রিপোর্ট’ কে লেখেন। প্রদীপবাবু জানান, সন্তু ভৌমিক, হালিম শেখ এবং সৌভিক আইচের ‘ইনজুরি রিপোর্ট’ লেখেন হাসপাতালের চিকিৎসক বিমলকুমার হোড়। আর সজল ঘোষের ‘ইনজুরি রিপোর্ট’ লেখেন আর এক চিকিৎসক পবিত্রকুমার করণ।
এরপরে জেরা করতে উঠে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী প্রতিম সিংহ রায় প্রথমেই প্রদীপবাবুর কাছে তাঁর এমবিবিএস পাশের সাল, অনান্য ডিগ্রি, কতদিন ধরে সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত প্রভৃতি জানতে চান। তারপর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খুনের ঘটনার রাতের নানা বিষয় জানতে চান। যেমন, ওই রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালে কতজন ডাক্তার ছিলেন, মেল সারজিক্যাল ওয়ার্ডে কতজন নার্স কর্তব্যরত ছিলেন, একজন নার্সের উপর কতজন রোগীর দায়িত্ব থাকে ইত্যাদি। হাসপাতাল সুপার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই বলেন, জানি না বা বলতে পারব না। তবে ওই ধরনের প্রশ্ন করা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশবাবু। তিনি বলেন, ঘটনার সময় সাক্ষী নবদ্বীপ হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলেন না। ১৩/০৫/১৩ তারিখে ওই হাসপাতালের দায়িত্ব নিয়েছেন সাক্ষী। এরপরে প্রতিমবাবু হাসপাতালে কটা বেড রয়েছে, কত জন নার্স ও জিডিএ স্টাফ রয়েছেন এ সব জানতে চান। বেড সংখ্যা বলতে পারলেও কতজন নার্স এবং জিডিএ স্টাফ আছে তার উত্তরে সুপার বলেন, জানি না। প্রতিমবাবু জানতে চান, নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সরকারি নিয়ম মেনে চলে কি না। সাক্ষী বলেন, হ্যা।ঁ পরের প্রশ্ন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বাড়ির লোককে ভিজিটিং কার্ড দেওয়া হয় কি না। সুপার বলেন, হ্যাঁ। কিন্তু স্টাফের অভাবে নবদ্বীপ হাসপাতালে দেওয়া হয় না কেন? আইনজীবী জানতে চান, স্টাফের অভাবে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে যে সরকারি আইন মানা সম্ভব হচ্ছে না সে কথা সুপার লিখিত ভাবে উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কিনা। সুপার বলেন হ্যাঁ।
এরপর জেরা শুরু করেন সামসুল ইসলাম মোল্লা। সুপার হিসেবে তাঁ কী কী কাজ এবং কী ক্ষমতা ভোগ করেন তিনি সে বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন। শেষে সাক্ষীকে বলেন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রভাবে সাক্ষী এই কাগজপত্র তৈরি করে আদালতে পেশ করেছেন। সাক্ষী বলেন, এ কথা ঠিক নয়।
শেষে জেরা করেন বিষ্ণুপ্রসাদ শীল। তিনি প্রথমে জানতে চান, নবদ্বীপ হাসপাতালে যোগ দেওয়ার আগে প্রদীপকুমার দাস কোথায় কাজ করেছেন। সাক্ষী জানান, নামখানা, মগরাহাট, দার্জিলিং প্রভৃতি জায়গায়। বিষ্ণুবাবু প্রশ্ন করেন চিকিৎসাধীন রোগী সুস্থ হলে কে তাকে ছুটি দেন? যার কাছে ভর্তি হয়ে ছিলেন সেই ডাক্তারবাবু কি? সুপার বলেন। না। বড় হাসপাতালে এমন হলেও ছোট হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকই ছুটি দেন। আইনজীবী জানতে চান, তার মানে কর্তব্যরত চিকিসক রাউন্ডে গিয়ে রোগীকে পরীক্ষা করে সুস্থ মনে করলে ছুটি দেন। সাক্ষী বলেন হ্যা।ঁ জেরার শেষে বিষ্ণুবাবু বলেন, ডাক্তারবাবুরা হাসপাতালে রাউন্ড দেন সকালে আটাটা থেকে সাড়ে আটটা এবং সন্ধ্যা ছটা থেকে সাড়ে ছটার মধ্যে। সুপার বলেন হ্যা।ঁ আইনজীবীর প্রশ্ন, এই সময়ে বাইরের কাউকে ছুটি দিতে হলে লিখতে হয় ‘অন রিকোয়েস্ট অফ পেশেন্ট পার্টি’ এবং রোগীর বাড়ির তরফে যিনি এসেছেন তাকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয়। স্বাক্ষরকারীকে লিখতে হয়, তার সঙ্গে রোগীর কি সম্পর্ক। সাক্ষী বলেন, হ্যা।ঁ এরপর এদিনের শুনানি শেষ হয়ে যায়।