হাসপাতাল সুপারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ ক্ষুব্ধ নার্সদের

নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এ বার শুধু অভিযোগই নয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে সুপারকে দিনভর ঘেরাও বিক্ষোভ দেখালেন খোদ হাসপাতালের নার্সরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হাসপাতালে যান নবদ্বীপের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। তাঁর হস্তক্ষেপে ঘেরাও তুলে নেন নার্সরা। মন্ত্রী বলেন, “ওঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৪
Share:

বিক্ষোভ চলছে। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ছবিটি তুলেছেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এ বার শুধু অভিযোগই নয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে সুপারকে দিনভর ঘেরাও বিক্ষোভ দেখালেন খোদ হাসপাতালের নার্সরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হাসপাতালে যান নবদ্বীপের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। তাঁর হস্তক্ষেপে ঘেরাও তুলে নেন নার্সরা। মন্ত্রী বলেন, “ওঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

সোমবার সন্ধ্যায় নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ওটিতে কর্তব্যরত নার্সের সঙ্গে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। সেই রাতেই বিষয়টি সুপারকে জানিয়ে কোনও ফল না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নার্সরা মঙ্গলবার সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে দেন। দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান। পরে ওই হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপারকে সারাদিন ঘেরাও করে রাখেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই হাসপাতালে উপস্থিত রোগীর আত্মীয় পরিজনেরাও ওই বিক্ষোভে সামিল হন। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও জানান ওই নার্স। আরও একগুচ্ছ অভিযোগ জানিয়ে আরও একটি লিখিত অভিযোগপত্র এদিন নার্সদের তরফে সুপারের কাছে দেওয়া হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নার্সদের অভিযোগের তালিকাটা নেহাত কম নয়। তাঁদের অভিযোগ, চিকিৎসকেরা ঠিক সময়ে হাসপাতালে আসেন না। ‘কলবুক’ পাঠালেও তাঁরা তা উপেক্ষা করেন। পরে যখন চিকিৎসক আসেন ততক্ষণে রোগীর অবস্থা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। সেই অবস্থায় রোগীর বাড়ির লোকের যাবতীয় চাপ নিতে হয় নার্সদের। হেনস্থা থেকে গালিগালাজ সবই তখন নার্সদের শুনতে হয়। তাঁরা নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন বলেও অভিযোগপত্রে জানান নার্সরা।

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক নার্স জানান, এই হাসপাতালে ভিজিটিং আওয়ার বলে কিছু নেই। রাতদিন ওয়ার্ডে রোগীর বাড়ির লোকজন থাকেন। রাতের দিকে অনেকে মদ্যপ অবস্থাতেও হাসপাতালে আসেন। নার্সদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। বারবার জানিয়েও কোনও পদক্ষেপ করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উল্টে মূল ওয়ার্ড থেকে বহু দূরে নতুন করে চালু করা হয়েছে ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’। সেখানে রাতে নিরাপত্তা কর্মী দূরে থাক, কোনও জিডিএ স্টাফ পর্যন্ত নেই। ফলে সারারাত কার্যত একা একজন নার্সকে ডিউটি করতে হয়। হাসপাতালে বর্তমানে সব থেকে বড় সমস্যা শিশুবিভাগ নিয়ে। চিকিৎসকেরা ঠিক মতো সময় না দেওয়ায় প্রতিনিয়ত রোগীর বাড়ির পরিজনদের অভিযোগের মুখে পড়তে হচ্ছে নার্সদের। চিকিৎসকদের গাফিলতির দায় কেন নার্সদের নিতে হবে বলে এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন নার্সরা।

প্রসঙ্গত গত পনেরো দিনে নবদ্বীপ হাসপাতালে বেশ কয়েকজন শিশু মারা গিয়েছে। হাসপাতালের এক শিশু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে মামলা করেছেন মৃত শিশুর বাবা। তবে শুধু চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগই নয়। নবদ্বীপ হাসপাতাল নিয়ে মানুষ এখন কার্যত আতঙ্কিত। কখনও শিশুমৃত্যু, কখনও দিনের পর দিন চিকিৎসা না করেই রোগীকে শয্যায় ফেলে রাখার মতো বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, সব জেনেও হেলদোল নেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

গত শনিবার কাটোয়ার ডাঙাপাড়া থেকে অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বিজলি কোনার। ছেলে জহর কোনারের অভিযোগ, “মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনও ডাক্তার মাকে দেখেননি। আমি মাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাব। কিন্তু ওরা ছাড়তেও চাইছেন না।” শুক্রবার দুপুরে চার বছরের মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন স্বপন দাস। তিনি বলেন, “জ্বর কমছে না দেখে সোমবার থেকে ছুটির জন্য ঘুরছি। কিন্তু ওঁরা কোনও পাত্তাই দিচ্ছেন না।”

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার আশিস রঞ্জন কুঁয়ার কার্যত সব অভিযোগই মেনে নিয়ে বলছেন, “বার বার নোটিস ঝুলিয়েও ডাক্তারবাবুদের হাসপাতালের ডিউটিতে নিয়মিত ঠিক সময়ে হাজির করানো যাচ্ছে না।” তাহলে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছেন না কেন? সে বিষয়ে অবশ্য আশিসবাবুর কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। নার্সদের অভিযোগ প্রসঙ্গে সুপার বলেন, “ওই চিকিৎসককে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন