জনতার মন বুঝতে হবে, বলতেন নকুলদা

লাল রাস্তায় সাইকেলে স্কুলে পড়াতে যেতেন এক যুবক। গ্রামবাসীদের বোঝাতেন, গাছ না কেটেও কী ভাবে জ্বালানি সংগ্রহ করা যায়। এ ভাবেই ছোট্ট বনপথের দু’পাশের লোকেরা তাঁকে চিনে ফেলেন।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৫:১৩
Share:

নকুল মাহাতো। —ফাইল চিত্র

নকুল মাহাতো নেই। বুধ-সকালের খবরটা এক ধাক্কায় ফিরিয়ে নিয়ে গেল পুরুলিয়ার সেই দিনগুলোতে।

Advertisement

লাল রাস্তায় সাইকেলে স্কুলে পড়াতে যেতেন এক যুবক। গ্রামবাসীদের বোঝাতেন, গাছ না কেটেও কী ভাবে জ্বালানি সংগ্রহ করা যায়। এ ভাবেই ছোট্ট বনপথের দু’পাশের লোকেরা তাঁকে চিনে ফেলেন। তাই কয়েক দশক পরে যখন হুড়ার ছাতালালপুর জঙ্গলের শালগাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন অনেকে ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর কাছে। বলেছিলেন, ‘‘হ্যাঁ হে মাস্টার, তুমি তো এখন অনেক বড় নেতা বটে! গাছ কাটা চইলবেক না। ইটা দেইখতেই হবে তুমাকে।’’

সময়টা নয়ের দশকের শেষের দিকে। নামোপাড়ায়, সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসে এক রাতে ডেকে পাঠালেন নকুলদা। বললেন, ‘‘জঙ্গল কেটে ফেলাটা কি ঠিক হবে? একটু গিয়ে দেখবে তো, লোকজন কী বলছে!’’ কিন্তু দলের লোকই তো বনমন্ত্রী। তিনি বললেই তো কাজ হয়ে যায়। তা হলে! নকুলদা বলেছিলেন, ‘‘জানি, সে সবই হবে। আগে জনতার মনটা সকলে জানুক। দল-প্রশাসনের কাছে অনেক সময়ে মানুষের নাড়ির স্পন্দন পৌঁছয় না হে।’’ সে যাত্রায় বন দফতরের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী, বিলাসীবালা সহিসের হস্তক্ষেপে অনেক শালগাছ বেঁচে গিয়েছিল।

Advertisement

তার কয়েক বছর পরের কথা। পুরুলিয়ায় নলকূপ কেলেঙ্কারি নিয়ে খবর করায় অনেকে রুষ্ট হন। এক রাতে নকুলদা আমায় ডেকে রাস্তায় কিছুক্ষণ কথা বলেই চলে যান। পরে কেউ আর বিরক্ত করেনি। পরে এক দিন বলেছিলেন, ‘‘বেনোজল বোঝো! বেনোজলই ধাক্কা দিচ্ছিল তোমাকে।’’ ৪৭ বছর জেলা সম্পাদক থাকাকালীন প্রায় ছ’হাজার গ্রাম ঘুরেছেন। বলতেন, ‘‘যাঁরা হেঁটে গ্রামে ঘোরে, তারা সুখ-দুঃখ সরাসরি বুঝতে পারে।

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পুঞ্চার ন’পাড়া গ্রামের বাড়িতে, নকুলবাবুর সঙ্গে শেষ দেখা হয়। তাঁর আত্মজীবনী লেখার প্রস্তাব দেওয়াই বলেছিলেন, ‘‘তোমাকে অনেক কথা বলেছি। এ সব লিখ না কিন্তু। কথা দাও।’’ কথা দিয়েছিলাম। তাই চোখের সামনে থাকা অনেকের সম্পর্কে অনেক কিছুই লেখা গেল না। সে প্রশংসা হোক, বা নিন্দা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন