Mamata Banerjee

সিবিআই প্রশ্নে মমতাকে তীব্র কটাক্ষ করে মোদী বললেন, তৃণমূলের বিদায় নিশ্চিত

পুরোপুরি নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপ যেমন দপ করে জ্বলে ওঠার চেষ্টা করে, তৃণমূলও এখন তেমনটাই করছে বলে মন্তব্য করেন মোদী। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘তৃণমূল বুঝে নিক, এ সব করে লাভ নেই। অশান্তি করে বিজেপিকে রোখা যাবে না। যত আটকাবেন, বিজেপি তত বাড়বে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:০৩
Share:

দুর্গাপুরের জনসভায় নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

যে বাংলা থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মহাগঠবন্ধনের অঙ্গীকার হয়েছে, সেই বাংলা থেকেই ভোটযাত্রা শুরু করছেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে কলকাতার জনসভায় এক মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন বিরোধী শিবিরের ২৩ নেতা, সেই মমতাকে তীব্র আক্রমণে বিঁধেই শুরু হল নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচার। ঠাকুরনগরের জনসভায় সংক্ষিপ্ত ভাষণেই আভাস দিয়েছিলেন, আক্রমণের সুরটা কেমন হতে চলেছে। দুর্গাপুরে দীর্ঘ ভাষণে অতএব প্রত্যাশিত ভাবেই আরও চড়ল নরেন্দ্র মোদীর সুর। মমতার বিরুদ্ধে প্রবল তোপ দেগে মোদী বললেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূলের বিদায় নিশ্চিত।’’

Advertisement

শুক্রবার সংসদে পেশ হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট। শনিবার পশ্চিমবঙ্গের জোড়া জনসভা থেকে সেই বাজেটকেই সব চেয়ে বড় নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গেই তীক্ষ্ণ আক্রমণ শানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। প্রথম জনসভা ছিল উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে, সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসঙ্ঘের ডাকে। জমায়েত বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠায় দ্রুত সেই সভা শেষ করতে হয় মোদীকে। কিন্তু সংক্ষিপ্ত অবকাশেই রাজনৈতিক হিংসার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। ভিড়কে শান্ত হতে বলে মোদী সে সভায় বলেন, ‘‘এই দৃশ্য দেখে আমি বুঝতে পারছি, দিদি কেন হিংসার আশ্রয় নিচ্ছেন।’’

পরে দ্বিতীয় জনসভায় পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে গিয়েও একই অভিযোগ তোলেন মোদী। তবে দুর্গাপুরে মোদীর সুর ছিল আরও চড়া। শুক্রবার রাত থেকেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের কী পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, সে খবর তার কাছে রয়েছে বলে মোদী জানান। মঞ্চের কাছাকাছি বসে থাকা এক বিজেপি কর্মীকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি দেখতে পাচ্ছি, আমাদের এক কর্মীর নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ দুর্গাপুরের জনসভা থেকে দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি নরেন্দ্র মোদীর আশ্বাস, ‘‘প্রত্যেক বিজেপি কর্মীকে আমি আশ্বাস দিচ্ছি, আপনাদের বলিদান বিফলে যাবে না। বাংলায় পরিবর্তন হবেই, তৃণমূলের বিদায় নিশ্চিত।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: হিংসার আশ্রয়ে দিদি: ঠাকুরনগর থেকে আক্রমণে মোদী, বাংলা থেকেই বাজিয়ে দিলেন ভোটের দামামা

ঠাকুরনগর এবং দুর্গাপুর, দুই সভাতেই জমায়েত নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন মোদী। বিজেপির সভায় ভিড় দেখে তৃণমূল ভয় পেয়ে গিয়েছে বলে মোদী দাবি করেন। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, ‘‘দিল্লিতে বসে ভাবছিলাম, বাংলায় কেন এমন হচ্ছে? আসলে এই ভালবাসাতেই তৃণমূলের ঘুম ছুটে গিয়েছে।’’ পুরোপুরি নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপ যেমন দপ করে জ্বলে ওঠার চেষ্টা করে, তৃণমূলও এখন তেমনটাই করছে বলে মন্তব্য করেন মোদী। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘তৃণমূল বুঝে নিক, এ সব করে লাভ নেই। অশান্তি করে বিজেপিকে রোখা যাবে না। যত আটকাবেন, বিজেপি তত বাড়বে।’’

সিন্ডিকেট-রাজ এবং তোলাবাজির অভিযোগ তুলেও এ দিন তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন মোদী। তাঁর দাবি, একাধিক বড় বড় কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণ বাংলায় আটকে রয়েছে। তৃণমূল সরকার কেন্দ্রের সঙ্গে ন্যূনতম সহযোগিতাটুকুও করছে না বলে মোদী অভিযোগ করেন। তার পরেই কটাক্ষের সুরে বলেন, ‘‘যে কাজে সিন্ডিকেটের কোনও লাভ নেই, সে কাজে তৃণমূলের সরকার হাতই দেয় না।’’ রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে এখন ‘ট্রিপল টি’ নামের কর চালু হয়েছে বলেও কটাক্ষ করেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘ট্রিপল টি’ হল ‘তৃণমুল তোলাবাজি ট্যাক্স’। মোদীর ব্যাখ্যা—কলেজে ভর্তি হতে হলে বা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে বা বদলির প্রয়োজন হলে এখন ‘তৃণমূল তোলাবাজি ট্যাক্স’ দিতে হয়।

আরও পড়ুন: কেমন আছেন আপনি? ‘বড়মা’র ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করলেন মোদী

দুর্গাপুরের জনসভা থেকে নাম না করে এ দিন গাঁধী পরিবারকেও আক্রমণ করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘দেশের সব চেয়ে শক্তিশালী আর নামদার পরিবারও আজ করফাঁকি আর ধোকাবাজির অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে আদালতের চারপাশে ঘুরছে।’’ ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভাকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, ‘‘আপনারা দেখেছেন কলকাতায় কেমন সব লোকজন এই চৌকিদারকে সরানোর জন্য এক হয়েছিলেন। ছবি দেখেই নিশ্চয়ই বুঝেছেন, ওঁরা সবাই ভয় পেয়ে রয়েছেন।’’ নাম না করে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই দুর্নীতির তির ছোড়ার চেষ্টা করেছেন মোদী। তিনি বলেছেন, ‘‘চিট ফান্ড হোক, সারদা হোক, ছবি আঁকা হোক— সব তার একটা দরজায় গিয়েই মিশছে।’’ দুর্নীতি যদি না করেন, তা হলে সিবিআইকে ভয় কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে এ দিন এই প্রশ্নই ছুড়েছেন নরেন্দ্র মোদী। সিবিআইকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে, অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আরে দিদি, যদি খারাপ কিছু করে না থাকেন, তা হলে এত ভয় পাচ্ছেন কেন? কেন এত ভয় লাগছে?’’ তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁকেও সিবিআই জেরা করেছিল, টানা ন’ঘণ্টা বসিয়ে রেখে জেরা করেছিল— বলেন মোদী। ইউপিএ সরকার তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই-এর অপব্যবহার করেছিল বলে মোদী অভিযোগ করেন। তা সত্ত্বেও সিবিআইকে তিনি কখনও বাধা দেননি বলে মোদী দাবি করেন।

দুর্গাপুরের ভাষণে নরেন্দ্র মোদী এ বারের বাজেটেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। কৃষক, শ্রমিক বা মধ্যবিত্ত— সব শ্রেণির কথা যে ভাবে ভাবা হয়েছে এ বারের বাজেটে, তা আগে কখনও হয়নি বলে মোদী এ দিন দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে ‘নির্দয় সরকার’ হিসেবেও আখ্যা দেন মোদী। শুধু মাত্র ভোট হারানোর ভয়ে আয়ুষ্মান ভারতের মতো প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করতে চাইছেন বলে নরেন্দ্র মোদী এ দিন অভিযোগ করেছেন।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন