বাংলায় পরিবর্তন নিশ্চিত, সভা থেকেই বড় চ্যালেঞ্জ মোদীর, নস্যাৎ মমতার

সরকার বদলের ভবিষ্যদ্বাণী করে জানিয়ে গেলেন, ‘‘আমার কথা লিখে রাখুন, এই সরকারের যাওয়ার সময় এসে গিয়েছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, বাংলায় পরিবর্তন নিশ্চিত।’’

Advertisement

রোশনী মুখোপাধ্যায়

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১০
Share:

চ্যালেঞ্জ: দুর্গাপুরে নেহরু স্টেডিয়ামের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

লোকসভা নির্বাচন বড়জোড় মাস দুয়েক দূরে। রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচনের বাকি অন্তত দু’বছর। কিন্তু শনিবার এখানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে সরকার বদলের ভবিষ্যদ্বাণী করে জানিয়ে গেলেন, ‘‘আমার কথা লিখে রাখুন, এই সরকারের যাওয়ার সময় এসে গিয়েছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, বাংলায় পরিবর্তন নিশ্চিত।’’

Advertisement

যা শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আগে ওরা দিল্লি সামলাক। মোদী বেনারস থেকে জিততে পারবেন তো? রাজনাথ নিজের আসন থেকে জিতবেন তো? যোগী আগে উত্তরপ্রদেশ সামলান। আমাদের রাজ্যের সরকার কবে যাবে না যাবে, তা বাংলার মানুষ ঠিক করবে।’’

দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়াম সংলগ্ন মাঠে শনিবার মোদীর বক্তৃতা বারে বারেই সন্ত্রাস, গণতন্ত্র হত্যা, দুর্নীতি এবং সিন্ডিকেটের অভিযোগে বিদ্ধ করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এবং দলকে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় কালো টাকা রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার যে আইন করেছে, তা এ রাজ্যে প্রয়োগ করতে নারাজ তৃণমূল সরকার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সেই আইনে বলা হয়েছে, আবাসন তৈরি হয়ে গেলে উপযুক্ত সময়ে ক্রেতাকে দিতে হবে। কোনও কাঁচা-পাকা’ করা যাবে না। মমতাদিদির সরকার যে এটা চালু করছে না, সেখান থেকেই তার ভূমিকা বোঝা যাচ্ছে।’’ এর পরেই মোদীর তির, ‘‘চিটফান্ড, সারদা, পেন্টিং থেকে শুরু করে সব টাকা এক দরজাতেই যাচ্ছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মোদী তো দুর্নীতির ঠাকুরদাদা: মমতা

গত ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে কংগ্রেস-সহ ২৩টি দলকে ডেকে মমতা যে মোদী বিরোধী সভা করেছেন, তাকেও এ দিন কটাক্ষ করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দাবি, যে দলগুলি কিছু দিন আগে পরস্পরের মুখ দেখতে চাইত না, তারাই এখন তাঁর বিরুদ্ধে একজোট হয়ে গালি দিচ্ছে। কারণ, তিনি কালো টাকা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন। মোদীর কথায়, ‘‘মধ্যবিত্তদের শোষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশকে লুণ্ঠন করে যারা বিদেশে পালিয়ে গিয়েছে, তাদের তুলে আনা হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষমতাশালী পরিবারকেও কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে আদালতে ঘুরতে হচ্ছে। এই চা-ওয়ালা কালো টাকা, অসাধু কারবার বন্ধ করে দিয়েছে। তাই দেখুন, চৌকিদারকে হঠাতে কলকাতায় কী ধরনের লোকেরা জড়ো হয়েছিল!’’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, কলকাতায় যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে সমাবেশ করেছিলেন, তাঁদের কেউ নিজে, কারও ভাইপো, কারও ভাই, কারও ছেলে অভিযুক্ত।

আরও পড়ুন: তৃণও থাকবে না, মূলও না: রাজনাথ

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচি করার গণতান্ত্রিক অধিকারও এ রাজ্যে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কখনও যাত্রায় বাধা আসছে, কখনও হেলিকপ্টার নামতে দেওয়া হচ্ছে না। এ রাজ্যে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এলেও সরকার ভয় পাচ্ছে। মমতার পাল্টা জবাব, ‘‘শাহ তো রাজনৈতিক ব্যক্তি। সরকারি লোক তো নন। চাইলে নিজে হেলিপ্যাড তৈরি করে নিন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘আমরা লোকসভা ভোটের প্রচারের জন্য দল থেকে দু’টো কপ্টার ভাড়া করে রেখেছিলাম। যারা ভাড়া দিয়েছিল, তাদের ভয় দেখানো হয়েছে। ওরা আমাদের টাকা ফেরত দিয়েছে। এতটাই প্রতিহংসাপরায়ণ দেশের শাসকরা!’’

বাংলায় ‘জগাই মাধাই সিন্ডিকেট’ চলছে বলে কটাক্ষ করে মোদী এ দিন বলেন, ‘‘এখানে বাচ্চারাও ট্রিপল টি, মানে ‘তৃণমূল তোলাবাজি ট্যাক্সের’ সঙ্গে পরিচিত। কলেজে ভর্তি, শিক্ষকের বদলি— সব ক্ষেত্রেই ওই কর চালু আছে।’’ মমতা অবশ্য সিন্ডিকেট-অভিযোগ নস্যাৎ করতে গিয়ে বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট নানা রকম হয়। সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কও তো আছে!’’

শুক্রবার রাতে এক বিজেপি কর্মীর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে মোদী বলেন, ‘‘এক কর্মীর মুখে দেখছি ব্যান্ডেজ বাঁধা। তাঁর নাকে আঘাত লেগেছে। কিন্তু তার পরেও যে এই সভায় তিনি এসেছেন, একেই বলে হিম্মৎ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন