Narendra Modi

কলকাতায় সকলেই তো বিশিষ্টজন, আবার দেখা হবে, ভিক্টোরিয়ার চা-চক্রে বললেন প্রধানমন্ত্রী

কেন্দ্রের তরফে টলিউডের নামজাদাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠানে। হাজির ছিলেন প্রসেনজিৎ থেকে শুরু করে ইন্দ্রাণী হালদার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:০৬
Share:

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিজের এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন রুদ্রনীল। ছবি: রুদ্রনীলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সংগৃহীত।

কলকাতা শহরে তো সকলেই বিশিষ্ট! তিনি আসতেই থাকবেন। দেখা হতেই থাকবে। শনিবার সন্ধ্যায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের চা চক্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উবাচ।

Advertisement

যা থেকে স্পষ্ট, বাংলায় বিধানসভা ভোটের আগে প্রচারে আসার নান্দীমুখটি শনিবার করে গেলেন তিনি। ভিক্টোরিয়া প্রাঙ্গণে নেতাজি জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের পর টলিপাড়ার লোকজনেদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অধুনা বিজেপি-তে নাম লেখানো অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু যখন তাঁর টলিপাড়ার সহকর্মীদের দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘‘স্যার, এঁরা হলেন কলকাতার ইন্টেলেকচুয়াল’’, মোদী স্মিত হেসে বলেছেন, ‘‘কলকাত্তা মে তো সব হি ইন্টেলেকচুয়াল হ্যায়। হম আতে রহেঙ্গে। মুলাকাত ভি হোতি রহেঙ্গি।’’

কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে টলিউডের নামজাদাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠানে। হাজির হয়েছিলেন প্রসেনজিৎ থেকে শুরু করে ইন্দ্রাণী হালদার। অধুনা বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে-পড়া রুদ্রনীল ঘোষ থেকে শুরু করে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। শেষোক্তজন অবশ্য নেতাজি জন্মজয়ন্তী কমিটির সদস্য।

Advertisement

অনুষ্ঠান শুরুর আগেই ভিক্টোরিয়ার সাউথ গেটে হাজির হয়েছিলেন বিশিষ্টরা। সেখানেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে দেখা হয়ে যায় রুদ্রনীলের। তখন সেখানে হাজির রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, রুদ্রনীলকে দেখেই বাবুল রসিকতা করে বলে ওঠেন, ‘‘তোমার সঙ্গে ঢুকলে তো আবার লোকে বলবে, তুমি বিজেপি-তে যোগ দিয়েই দিয়েছো! আমি বরং রাজ্যপালের সঙ্গে ঢুকি!’’

প্রধানমন্ত্রী পৌঁছনোর পর তাঁকে স্বাগত জানান মমতা শঙ্কর এবং প্রসেনজিৎ। ছিলেন পায়েল সরকার, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, সস্ত্রীক তন্ময় বসু, তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, বিক্রম ঘোষ, জয়া শীল ঘোষ এবং ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়রা। প্রত্যেককেই আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে আহ্বান করা হয়েছিল ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে। তবে আমন্ত্রণ পেয়েও আসেননি আবির চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত এবং প্রযোজক মহেন্দ্র সোনি। তবে তাঁদের না আসার কারণ ‘রাজনৈতিক’ কি না, তা জানা যায়নি।

যে তারকারা গিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশের সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক যথেষ্ট নিকট। সে কারণে তাঁদের অনেকে খানিক বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন বলেও খবর। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এর কোনও সমর্থন মেলেনি। যেমন প্রকাশ্যে প্রায় সকলেই বলেছেন, ওই অনুষ্ঠান ছিল একেবারেই সরকারি। নেতাজির মতো নায়ককে শ্রদ্ধা জানানোর ওই অনুষ্ঠানে তাঁরা হাজির হয়েছিলেন সরকারি অতিথি হিসাবেই। এর সঙ্গে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে ‘নৈকট্য বা দূরত্ব’— কোনওটিরই কোনও সম্পর্ক নেই। তবে একান্ত আলাপচারিতায় তাঁরা জানাচ্ছেন, অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য তাঁদের মুগ্ধ করেছে। কারও কারও তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তোলার আর্জিও ‘জরুর’ বলে মিটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি টেবিলে ঘুরে ঘুরে অভ্যাগতদের সঙ্গে নমস্কার বিনিময় করেছেন। আইএনএ-র প্রাক্তন সদস্যদের গৃহকর্তার মতো প্রশ্ন করেছেন, ‘‘আপনারা চা-টা খেয়েছেন তো? কোনও অসুবিধা হয়নি তো?’’ আর অন্তে বলেছেন, কলকাতায় সকলেই বিশিষ্ট। ইন্টেলেকচুয়াল।

ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন প্রবীণ সঙ্গীতশিল্পী ঊষা উত্থুপ। তাঁর কথায়, ‘‘গান গাইতে গিয়ে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। নিজের দেশের নায়কের জন্য গান গাইছিলাম তো। মনে হচ্ছিল, কোথাও ভুল না হয়ে যায়! ঈশ্বরকে ধন্যবাদ এমন একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর সামনে পারফর্ম করতে পেরে উচ্ছ্বসিত।’’

একই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করা সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিৎ জুটির কথায়, ‘‘আইএনএ-র গান নিয়ে আগেই আলাদা করে সুগত’দার (নেতাজি পরিবারের সদস্য সুগত বসু) সঙ্গে কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠানের পর কথা হল। আমাদের কাজের জন্য শুভেচ্ছা জানালেন। আমরা তাঁকে একটি ‘গীতাঞ্জলি’ উপহার দিয়েছি। এমন এক অরাজনৈতিক মঞ্চে পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে একটু উত্তেজিতও লাগছিল।’’

মুখ্যমন্ত্রী নিজেও ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান শুনে উত্তেজিত ছিলেন বইকি! যার প্রতিবাদে তিনি বক্তৃতা না করেই পোডিয়াম ছাড়েন। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্য আগাগোড়াই নিরুত্তাপ এবং নিরুদ্বেগ দেখিয়েছে। যিনি যাওয়ার বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, বাংলায় আসতেই থাকবেন। দেখাসাক্ষাৎ হতেই থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন