প্রসঙ্গ ইআরও নিয়োগ
Election Commission Of India

রাজ্যকে চাপ কমিশনের

এসআইআরে সদ‍্য প্রকাশিত খসড়া তালিকায় অনেক ত্রুটি-গরমিল ধরা পড়েছে। ফলে শুনানি পর্বে পদ্ধতিগত কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না কমিশন। সেই কারণে সে কাজ শুরুর আগেই এই তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে কমিশন সূত্রের বক্তব্য।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৩
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এসডিও (মহকুমাশাসক) পদমর্যাদার নন, এমন আধিকারিকদের হাতে শুনানির দায়িত্ব ছাড়তে নারাজ জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তাদের বিধি অনুযায়ী, শুনানির মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের (ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ইআরও) এসডিও পদমর্যাদার হতে হয়। কিন্তু এ রাজ্যে শতাধিক ইআরও রয়েছেন জুনিয়র পদমর্যাদার। তাই শুনানির আগে এই ‘ত্রুটি’ দূর করতে রাজ্যের উপর চাপ বাড়াল কমিশন। রাজ্যের অবস্থান তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে, নিজেদের মতো অফিসার নিয়োগের নজির আগেই রেখেছে কমিশন। তাই চলতি পরিস্থিতিতে কমিশন কী অবস্থান নেবে, তা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে, শুনানি পর্বের আগে এ নিয়ে নতুন কোনও জটিলতা তৈরি হবে কি না, কৌতূহল রয়েছে তা নিয়েও। তবে বিধি মান‍্যতার প্রশ্নে কমিশনের মধ‍্যেকারই গড়িমসি শুনানি পর্বে কতটা প্রভাব ফেলবে, চর্চা চলছে তা নিয়েও।

এসআইআরে সদ‍্য প্রকাশিত খসড়া তালিকায় অনেক ত্রুটি-গরমিল ধরা পড়েছে। ফলে শুনানি পর্বে পদ্ধতিগত কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না কমিশন। সেই কারণে সে কাজ শুরুর আগেই এই তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে কমিশন সূত্রের বক্তব্য।রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে এক জন করে ইআরও রয়েছেন। কমিশনের বিধি অনুযায়ী, কোনও ভোটার যোগ‍্য কি না, জেলাস্তরে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তাঁদেরই। ফলে এই পদে কাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়। বাস্তবে সব এসডিও পদে আইএএস অফিসারকে নিয়োগ করা সম্ভব নয়। তাই ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের মধ্যে যাঁরা এসডিও পদমর্যাদার হয়ে গিয়েছেন, তাঁদেরও সেই দায়িত্ব দেওয়া রীতি। কিন্তু কমিশন লক্ষ করেছে, এ রাজ্যে অন্তত দেড়শো ইআরও রয়েছেন, যাঁরা এসডিও পদের নন। এমনকি, বহু ডব্লিউবিসিএস সেই পদমর্যাদার হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে অতীতে একাধিক বার রাজ্য-কমিশনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এই অবস্থায় কমিশন ফের এক বার এমন নিয়োগ নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপের বার্তা দিচ্ছে রাজ্যকে।

চলতি এসআইআরের খসড়া তালিকায় ইতিমধ্যেই অনেক ধরনের ত্রুটি ধরা পড়েছে। আবার সেই তালিকায় নানা মানদণ্ডে প্রায় ১.৩৬ কোটি ভোটার রয়েছেন আতশকাচের তলায়। কমিশনের বক্তব্য, এতগুলি ত্রুটি অনিচ্ছাকৃত ভুল বা ‘হিউম্যান এরর’ হিসেবে দেখা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ, বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বার বার বলার পরেও যথাযথ যাচাই হয়নি। তথ্য নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রেও বেসরকারি ডেটা-এন্ট্রি-অপারেটরদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। ফলে সব ত্রুটিগুলি পুনর্যাচাই করতে হচ্ছে। কিন্তু শুনানি পর্বে ‘ম‍্যাপিং’ না থাকা এবং সন্দেহজনক তথ্য থাকা ভোটারদের শুনানি হবে। ফলে কোনও ভোটারকে বাদ দেওয়া বা অন্তর্ভুক্ত করার কাজটা যত্ন এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে করা জরুরি। নথি যাচাইয়ের প্রশ্নেও সতর্ক থাকতে হবে। আবার রাজনৈতিক বা বাহ্যিক চাপ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখাও প্রয়োজন। তাই শুনানি পর্বটিকে হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না।

আধিকারিকদের অনেকেই মনে করাচ্ছেন, অতীতে এমন নিয়োগের প্রশ্নে টানাপড়েন হয়েছিল রাজ্য ও কমিশনের মধ্যে। তাতে রাজ্যের অবস্থানে সন্তুষ্ট না হলে কমিশন নিজের মতো করে আধিকারিক নিয়োগ করেছিল বিভিন্ন সময়ে। এমনকি, জেলাভিত্তিক ১২ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগেও আইন প্রয়োগ করেছিল কমিশন। তাই ইআরও-প্রশ্নে কমিশনের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়েও যথেষ্ট কৌতূহল দানা বাঁধছে। তবে সাধারণ মানুষ চাইছেন নির্বিঘ্ন ও স্বচ্ছ পদ্ধতি। সেটা নিশ্চিত করতে কমিশন কী পদক্ষেপ করে, তা দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন