আকাঙ্ক্ষার বাড়ি

পড়শির জটলা, তবু দরজা বন্ধই

মেয়ে আর নেই। এই খবরটা আসার পর থেকেই দরজা এঁটে বাড়িতে পড়ে রয়েছেন আকাঙ্ক্ষা শর্মার বাবা-মা। ভোপালে বন্ধুর বাড়ির মেঝে খুঁড়ে পুলিশ আকাঙ্ক্ষার দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে খবর পেয়ে বাঁকুড়ার রবীন্দ্র সরণিতে তাঁর ভাড়াবাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন পড়শিরা। কিন্তু দরজা খোলেনি।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৮
Share:

বাঁকুড়ায় আকাঙ্ক্ষাদের ভাড়া বাড়ি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

মেয়ে আর নেই। এই খবরটা আসার পর থেকেই দরজা এঁটে বাড়িতে পড়ে রয়েছেন আকাঙ্ক্ষা শর্মার বাবা-মা। ভোপালে বন্ধুর বাড়ির মেঝে খুঁড়ে পুলিশ আকাঙ্ক্ষার দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে খবর পেয়ে বাঁকুড়ার রবীন্দ্র সরণিতে তাঁর ভাড়াবাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন পড়শিরা। কিন্তু দরজা খোলেনি।

Advertisement

আমেরিকা যাচ্ছেন বলে মাস সাতেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বছর আঠাশের আকাঙ্ক্ষা। তার পর থেকে বাড়ির লোকের ফোন ধরেননি। ফোনও করেননি। তাঁর অস্তিত্ব ছিল শুধু হোয়াটস অ্যাপে আসা মেসেজে। এত দিন মেয়ের সঙ্গে কথা না বলেও কী ভাবে নিশ্চিন্ত রইলেন আকাঙ্ক্ষার বাবা-মা, সেই প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠেছে, মেয়ে কোথায়, কী চাকরি করতে গেল, সে সম্পর্কে সবিস্তার খবর না নিয়েই মেয়েকে তাঁরা ছেড়ে দিলেন কী ভাবে, তা নিয়েও কিন্তু কোনও প্রশ্নেরই জবাব মেলেনি। কারণ বৃহস্পতিবার মেয়ের মৃত্যুসংবাদ জানার পর থেকেই স্ত্রীকে নিয়ে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন বাঁকুড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চিফ ম্যানেজার শিবেন্দ্র শর্মা। শনিবার বিকেলে বিহার থেকে এসে পৌঁছন রাকেশ শর্মা নামে তাঁদের এক আত্মীয়। তাঁর সাড়া পেয়ে অবশ্য দরজা খুলে দেন দম্পতি।

রাকেশবাবু পরে বলেন, ‘‘শিবেন্দ্রবাবুরা কথা বলার অবস্থায় নেই। কী ভাবে সান্ত্বনা দেব, ভেবে পাচ্ছি না।’’ সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে যান শিবেন্দ্রবাবুর বিশেষ পরিচিত, বাঁকুড়ার পুলিশ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার প্রবীরকুমার চক্রবর্তী। বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে স্বামী-স্ত্রী কেউই মুখে কিছু তোলেননি। তবে আত্মীয়স্বজন আসায় মনে হলো এ দিন কিছুটা ভরসা পেয়েছেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন

রায়পুরের পুরনো বাড়িতে দুই দেহ, কবুল উদয়নের

শিবেন্দ্রবাবুর পড়শিরা জানাচ্ছেন, নিশুত রাতে বন্ধ দরজার ও পার থেকে ভেসে আসছিল ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ। তাই উদ্বেগ ছড়িয়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর অনন্যা রায় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মেয়েকে হারানোর খবর আসার পর থেকেই ওঁদের দরজা বন্ধ। খাওয়াদাওয়া করছেন কি না, কেমন আছেন, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।

ওঁদের নিয়ে খুব চিন্তায় রয়েছি।’’

বছর দুয়েক আগে পটনার বাসিন্দা শিবেন্দ্রবাবু চাকরি-সূত্রে বাঁকুড়ায় আসেন। আকাঙ্ক্ষা অবশ্য এ বাড়িতে খুব বেশি দিন থাকেননি। পড়শিরাও তাঁকে তেমন দেখেননি। তবে গত দু’দিন ধরে খবরের শিরোনামে থাকা অচেনা মেয়েটাই পড়শিদের কাছে যেন ঘরের মেয়ে হয়ে গিয়েছেন। গণেশ বাগদি, কৃষ্ণপদ বাগদিরা তাই বলেন, ‘‘আকাঙ্ক্ষাকে চোখে দেখিনি। কিন্তু ওঁর বাবা-মাকে কাছ থেকে দেখেছি। খুবই ভদ্র। সেই বাড়ির মেয়ের এমন পরিণতি বিশ্বাস হচ্ছে না!’’

শিবেন্দ্রবাবুদের একমাত্র ছেলে আয়ুষ পুলিশের সঙ্গে ভোপালে গিয়েছেন। এ দিন সেখানেই আকাঙ্ক্ষার শেষকৃত্য হয়। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “ওঁর মা দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনতে বলেছিলেন। পরে মত বদলান। তাই ওখানেই সৎকার করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন