মাছের অসুখ ঠিক কোথায়, বাতলে দেবে নতুন কেন্দ্র

মস্তিষ্কের অসুখ নাকি কিডনির সমস্যা? কী ধরনের আলসার হয়েছে? নিশ্চিত বলে দেবে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা রোগ নির্ণয় কেন্দ্র। রোগগ্রস্তের রক্ত, টিস্যু পরীক্ষা করে। নতুন কিছু নয়। রোগ নির্ণয় কেন্দ্র এমনই হয়। কিন্তু এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার মানুষের নয়। মাছের।

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৫
Share:

হেমারেজ আক্রান্ত মাছ। লেজে জমাট বেঁধে রয়েছে রক্ত। — নিজস্ব চিত্র

মস্তিষ্কের অসুখ নাকি কিডনির সমস্যা? কী ধরনের আলসার হয়েছে? নিশ্চিত বলে দেবে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা রোগ নির্ণয় কেন্দ্র। রোগগ্রস্তের রক্ত, টিস্যু পরীক্ষা করে।

Advertisement

নতুন কিছু নয়। রোগ নির্ণয় কেন্দ্র এমনই হয়। কিন্তু এই ডায়াগনস্টিক সেন্টার মানুষের নয়। মাছের।

বাগনানে একটি পুকুরে মাছের গায়ে রক্ত জমাট বাঁধা ছোপ-ছোপ দাগ পড়ছিল। নষ্ট হচ্ছিল পুকুর ভর্তি মাছ। আবার, দিঘার কাছে রামনগরে ডিম ফুটে চারা বেরোলেও দিন কয়েকের মধ্যে মরে যাচ্ছিল। কেউ কিছু বুঝতে পারছিলেন না। একই ভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক জলাশয়ের মাছেদের শরীর কেন বেঁকে যাচ্ছিল, ধরা পড়ছিল না কিছুতেই।

Advertisement

এই তিনটি ক্ষেত্রেই রোগ ধরে দিয়েছে ‘ফিশ ডিজিজ ডায়াগনস্টিক সেন্টার’। যা তৈরি হয়েছে পঞ্চসায়র এলাকার বুধেরহাটে, মৎস্য বিজ্ঞান ফ্যাকাল্টির ক্যাম্পাসেই। মূলত রোগগ্রস্ত মাছের রক্ত, টিস্যু, ফুলকা ও পাখনার অংশ নিয়ে পরীক্ষা করে রোগ ধরেন এখানকার বিশেষজ্ঞেরা। রোগ বুঝতে ‘টেস্ট’ করানোর খরচ নেই এখানে।

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের জলজ প্রাণী স্বাস্থ্য বিভাগের অন্তর্গত এই প্রকল্পে মাছেদের এমন রোগ নির্ণয় কেন্দ্র দেশে প্রথম। যা মৎস্যপ্রিয় বাঙালির সঙ্গে মানানসই।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এত দিন মাছেদের চিকিৎসা কেন্দ্র থাকলেও আলাদা করে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ছিল না। যার ফলে ঠিক কী রোগ হয়েছে এবং কোন পথে চিকিৎসা এগোবে, তা নিয়ে প্রায়ই সমস্যায় পড়তেন মাছচাষিরা। বুধেরহাটে এই কেন্দ্রটি তৈরি হওয়ার পরে রাজ্য থেকে তো বটেই, রাজ্যের বাইরে থেকেও মাছচাষিরা নিয়মিত ভাবে যোগাযোগ করছেন মাছেদের সমস্যা নিয়ে। তবে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিলেও এই কেন্দ্রে চিকিৎসা করা হয় না।

তথ্য বলছে, এ রাজ্যে যত মাছ চাষ হয়, তার ২৬ শতাংশই অসুখের কারণে নষ্ট হয়ে যায় প্রতি বছর। দ্রুত ও নির্ভুল ভাবে রোগ নির্ণয় করা গেলে মাছচাষিদের এই ক্ষতি অনেকটাই পূরণ করা যাবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোমেন সাহু। প্রকল্পটির মুখ্য ব্যবস্থাপক টি জে আব্রাহাম জানান, ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক অনুদানে এই প্রকল্প শুরু হয়। পরিকাঠামো তৈরি হয়ে যাওয়ার পর, এই বছর থেকে পুরোদমে কাজ চলছে।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মাছেদের মূলত কিডনি, মস্তিষ্ক ও ফুলকার অসুখ সব চেয়ে ক্ষতি করে চাষে।

শুধু চাষের বা খাওয়ার মাছই নয়। কারও বাড়ির অ্যাকোয়ারিয়ামের কোনও মাছের সমস্যা হলেও তার পরীক্ষা করা হয় এখানে। সব সময়ে অসুস্থ মাছকেই যে হাজির করতে হবে তা নয়। মাছের ছবি পাঠালেও বিশেষজ্ঞরা সেটা দেখে রোগ নির্ণয় করেন। প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দল কখনও পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। সে জন্যও কোনও খরচ নেই। রবীন্দ্র সরোবর ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পুকুরে সম্প্রতি মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনাতেও তাঁরা রাজ্য সরকারের তরফে অনুসন্ধান করতে গিয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান ফ্যাকাল্টির ডিন শ্যামসুন্দর দানা বলেন, ‘‘রাজ্য ও রাজ্যের বাইরে থেকেও সেরা মেধার ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়ার সুযোগ পান। তাই গবেষণার ক্ষেত্রেও সেরাটাই পাওয়া যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন