খোঁজ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বভারতী

পৌষমেলার স্টল নিয়ে নতুন জট, একতরফা খুঁটি পোঁতা শুরু ব্যবসায়ীদের

রবিবার অবধি দোকান তৈরির খুঁটির দেখা মেলেনি পৌষমেলার মাঠে। সোমবার অবশ্য খুঁটি পোঁতার ছবি দেখা গেল। তবে তা নিয়েই বেধেছে বিতর্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২৭
Share:

ব্যবসায়ীদের উদ্যোগেই পৌষমেলার মাঠে শুরু হল স্টল তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

রবিবার অবধি দোকান তৈরির খুঁটির দেখা মেলেনি পৌষমেলার মাঠে। সোমবার অবশ্য খুঁটি পোঁতার ছবি দেখা গেল। তবে তা নিয়েই বেধেছে বিতর্ক।

Advertisement

তারা নিজেরাই পৌষমেলা করবে বলে সোমবার একতরফা ঘোষণা করে দিল ব্যবসায়ী সমিতি। শুধু ঘোষণাই নয়, সোমবার বিকেল থেকে তারা মেলার মাঠে খুঁটি পুঁতে রীতিমতো পৌষমেলার কাজও শুরু করে দিল। বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, আধিকারিক, কর্মী, ছাত্র- ছাত্রী থেকে শুরু করে প্রবীণ আশ্রমিকেরা সকলেই এক বাক্যে জানাচ্ছেন, এমন ঘটনা আগে কোনওদিন ঘটেনি। তাঁদের কথায়, ‘‘যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং নজিরবিহীন।’’ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ব্যবসায়ী সমিতি কীভাবে এককভাবে মেলার মাঠে খুঁটি পুঁততে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ বলেন, ‘‘মেলা করার জন্য আমরা বারবার বিশ্বভারতীর দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনও কথা না শোনায় আমরা নিজেরাই মেলা করতে উদ্যোগী হয়েছি। বিশ্বভারতীর যদি মনে করে আমরা বেআইনিভাবে মেলা করছি তাতে বিশ্বভারতী আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।’’ বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার কেবল বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’’

পৌষমেলা নিয়ে প্রথম থেকেই বিশ্বভারতী ও ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে সংঘাত বেধেছিল। বারবার বৈঠক হলেও কোনওভাবেই উদ্ভুত সমস্যার সমাধান হয়নি। শনিবার বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী-সহ বিশ্বভারতীর বিভিন্ন আধিকারিক, মেলা কমিটি ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টার বৈঠকেও কোনও সমাধানসূত্র বের হয়নি। রবিবার ফের চার দফা দাবি দাওয়া নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপিও দেয় ব্যবসায়ী সমিতি। সেই দাবির মধ্যে ছিল, মেলায় স্টল বসানোর ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ছাড় দেওয়া, স্টল বসানোর ক্ষেত্রে সিকিউরিটি মানি পুরোপুরি মকুব করা, চার দিনের মেলা ও দু’দিনের ভাঙা মেলা করতে দেওয়া ও আগের বছরের মতো মেলা প্রাঙ্গণে যে জায়গায় ব্যবসায়ীদের স্টল করতে দেওয়া হয়েছিল সেই জায়গাতেই তাদেরকে বসতে দেওয়া। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সেই মতো ব্যবসায়ী সমিতিকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন। রবিবার রাত পর্যন্ত ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বিশ্বভারতীর আধিকারিকদের আলোচনাতেও কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি।

Advertisement

এ দিন সকালে বোলপুরের সমস্ত ব্যবসায়ী ও মেলায় অংশগ্রহণকারী দোকানদারেরা মেলার মাঠে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছিলেন। আলোচনা শেষে এ দিন তাঁরা ফের বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে পৌষমেলা নিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে যান। ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় এ দিন তাঁরা নিজেরাই মেলা পরিচালনা কথা ঘোষণা করে দেন। এ দিন মেলার মাঠে সমিতির পক্ষ থেকে বাঁশ নামানো থেকে শুরু করে খুঁটি পোঁতার কাজও শুরু করে দেয় সমিতি। যদিও বিশ্বভারতীর জায়গায় বিশ্বভারতীর অনুমতি ছাড়া ব্যবসায়ী সমিতি কীভাবে মেলা করতে পারে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সিংহ অবশ্য স্পষ্টই বলছেন, ‘‘মেলা করার অধিকার আমাদেরও রয়েছে। তাই ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে এ বার আমরাই পৌষ মেলা পরিচালনা করব। সমিতি গত ভাবে আমরা প্রশাসনকে জানিয়েই এই মেলা করতে বসেছি।’’

প্রশ্ন উঠছে, যে সমস্ত দোকানদার এখনও অনলাইনে টাকা জমা দিয়ে পৌষমেলার জন্য স্টল বুকিং করেছেন সেক্ষেত্রে তাঁরা কী করবেন? তাঁরা মাঠের যে জায়গাটি স্টল করার জন্য অনলাইনে বুক করেছিলেন আদৌ কি তাঁরা সেই জায়গাতেই স্টল করতে পারবেন? বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে এই সব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদকের আশ্বাস, ‘‘আমরা সবাইকে নিয়ে মেলা করবো। তবে বিগত দিনগুলিতে আমরা মেলা প্রাঙ্গণের যে জায়গায় স্টল করে এসেছি, সেই সেই জায়গায় এ বারও স্টল করবো। সেই জায়গা বাদ দিয়ে বাকি যারা মেলা করতে আসবেন তাদের জায়গা দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন