অরণ্যশহরে মমতার ঠাঁই বদল, জল্পনা

ঐতিহ্যের রাজবাড়ি ছেড়ে সরকারি পর্যটক আবাস! অরণ্যশহরে মুখ্যমন্ত্রীর রাত্রিযাপনের ঠাঁই বদলকে ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। দ্বিতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জঙ্গলমহল সফরে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৬:০০
Share:

ঐতিহ্যের রাজবাড়ি ছেড়ে সরকারি পর্যটক আবাস!

Advertisement

অরণ্যশহরে মুখ্যমন্ত্রীর রাত্রিযাপনের ঠাঁই বদলকে ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। দ্বিতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জঙ্গলমহল সফরে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম এসপি অফিসের সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখমন্ত্রী। তার আগে সোমবার নারায়ণগড়ের প্রশাসনিক জনসভা সেরে ঝাড়গ্রামে রাত্রিযাপন করবেন তিনি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজবাড়ির অতিথিশালায় থাকছেন না মমতা। গত ফেব্রুয়ারির মতো এবারও রাজবাড়ির সিংহদরজার বাইরে তৈরি হওয়া পর্যটন দফতরের ঝাড়গ্রাম ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের ভিআইপি স্যুইট ‘সুবর্ণরেখা’য় রাত্রিযাপন করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

গত বারের মতো এ বারও ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের গোটা চত্বরটা বাঁশ আর নীল-সাদা কাপড় দিয়ে প্রায় ১৬ ফুট উঁচু পাঁচিলের মতো ঘিরে ফেলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের পরিভাষায় এটি ‘ভিউ-কাটার’। অর্থাৎ, বাইরে থেকে যাতে কমপ্লেক্স চত্বরটা দেখা না যায়। ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের ভিআইপি স্যুইট ছাড়াও বাকি ২২ টি ঘর মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের জন্য প্রশাসনের তরফে বুকিং করে রাখা হয়েছে।

Advertisement

অথচ প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে ২০১১ থেকে ২০১৫-র অক্টোবর পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতবার ঝাড়গ্রামে এসেছেন, ততবারই তিনি ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির অতিথিশালার ডিলাক্স ঘরে রাত কাটিয়েছেন। রাজবাড়ির হিসেব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ১৭ বার রাজবাড়ির অতিথিশালায় থেকেছেন মমতা। ছন্দপতন হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। চার মাস আগে ওই সময় নয়াগ্রামের জঙ্গলকন্যা সেতু উদ্বোধনের আগের রাতে ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর রাত্রিযাপনের ঠিকানা বদলে যায়। সেই প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী রাজবাড়ির বাইরে পর্যটন দফতরের সদ্য চালু হওয়া ঝাড়গ্রাম ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সের ‘সুবর্ণরেখা’ স্যুইটে উঠেছিলেন। বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর রাত্রিযাপনের ঠিকানা বদলকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়।

ঝাড়গ্রাম রাজপরিবারের সদস্য দুর্গেশ মল্লদেব হলেন ঝাড়গ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান। এ ছাড়া দুর্গেশবাবু ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতিও। দুর্গেশবাবুর ভাই জয়দীপ মল্লদেব অবশ্য সক্রিয় রাজনীতি করেন না। বিধানসভা ভোটের আগে ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা প্রাক্তন আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার উপর নানা কারণে মুখ্যমন্ত্রী অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে দলের অন্দরে জোর গুঞ্জন ছিল। ফলে, ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের একটি অংশের প্রত্যাশা ছিল, ঝাড়গ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে রাজপরিবারের কোনও সদস্যকে প্রার্থী করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্গেশবাবুকে ঝাড়গ্রাম আসনে প্রার্থী করার জন্য তাঁর অনুগামীরা দলের অন্দরে সরব হয়েছিলেন বলে খবর। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী রাজবাড়িতে না-থাকায় হতাশ হন দুর্গেশবাবুর অনুগামীরা। মুখ্যমন্ত্রী যথারীতি সুকুমার হাঁসদাকেই ঝাড়গ্রাম আসনে ফের টিকিট দেন। তবে সুকুমারবাবু বড়সড় ব্যবধানে জয়ী হলেও তাঁকে আর মন্ত্রী করেননি মমতা। তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, গত ফেব্রুয়ারিতে বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার আগে মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলে এসেছিলেন। বিধায়ক পদে অনেক দাবিদার থাকায় দলীয় বিতর্ক এড়াতে সঙ্গত কারণেই মুখ্যমন্ত্রী রাজবাড়িতে থাকেননি বলে ওই মহলের দাবি। তাহলে এখন কেন মুখ্যমন্ত্রী রাজবাড়িকে এড়িয়ে যাচ্ছেন? প্রশাসনিক মহলের অবশ্য ব্যাখ্যা, রাজবাড়ির বেসরকারি অতিথিশালাটি ঐতিহ্যবাহী হলেও সেটি বেশ পুরনো। কিন্তু সরকারি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক পরিষেবা রয়েছে। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে রাত্রিযাপনের ঠিকানা বদলেছে।

তৃণমূলের দুর্গেশ-বিরোধী শিবিরের অবশ্য দাবি, বিধানসভা ভোটের সময় দুর্গেশবাবুর ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী অসন্তুষ্ট। ভোটের সময় আশানরূপ সক্রিয়ভাবে তাঁকে দেখা যায়নি। দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে এ ব্যাপারে স্থানীয় নেতৃত্বকে সতর্কও করা হয়েছিল। তৃণমূলের একাংশের দাবি, সেই কারণে রাজবাড়ি থেকে মুখ্যমন্ত্রী দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। এ প্রসঙ্গে দুর্গেশবাবুর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী কোথায় থাকবেন সেটা একেবারেই তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। পর্যটন দফতরের ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সটা নতুন তৈরি হয়েছে বলে হয়তো তিনি ওখানে থাকছেন।”

এ বার মুখ্যমন্ত্রী কী মত বদল করে শেষ মুহূর্তে রাজবাড়িতে যাবেন? জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার জবাব, “তেমন সম্ভবনা দেখছি না। আবার অসম্ভবও বলছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন