Dengue

মায়ের থেকে শিশুর ডেঙ্গি মানুষে, মশারও, নয়া তথ্য গবেষণায়

এত দিন ধারণা ছিল, মায়ের ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া হলে তা গর্ভস্থ শিশুর শরীরে সংক্রামিত হয় না। প্লাসেন্টার ছাকনিতে সে আটকে যায়। কিন্তু গত সপ্তাহে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে এক ডেঙ্গি আক্রান্ত মায়ের নবজাতকের ডেঙ্গি ধরা পড়ায় চিকিৎসকেরা বিস্মিত।

Advertisement

দেবদূত ঘোষ ঠাকুর

নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৫৭
Share:

নানা জটিলতার মধ্যে এ বার নতুন জোড়া বিপদ ডেকে আনল ডেঙ্গি।

Advertisement

মায়ের শরীর থেকে নবজাতকের মধ্যে ডেঙ্গি জীবাণুর সংক্রমণ যে ঘটতে পারে, অনেক দিন ধরেই আশঙ্কা ছিল চিকিৎসকদের মধ্যে। সেটাই এ বার সত্যি হল। আবার, পতঙ্গবিদদের গবেষণা বলছে— কোনও এডিস ইজিপ্টাই মশা ডেঙ্গির জীবাণু বহন করলে তার পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও জিনগত ভাবে ডেঙ্গি সংক্রমণ ঘটছে। অর্থাৎ সংক্রামিত হওয়ার জন্য ডেঙ্গি আক্রান্ত মানুষকে কামড়ানোর দরকার পড়ছে না নতুন প্রজন্মের ওই মশাদের।

এত দিন ধারণা ছিল, মায়ের ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া হলে তা গর্ভস্থ শিশুর শরীরে সংক্রামিত হয় না। প্লাসেন্টার ছাকনিতে সে আটকে যায়। কিন্তু গত সপ্তাহে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে এক ডেঙ্গি আক্রান্ত মায়ের নবজাতকের ডেঙ্গি ধরা পড়ায় চিকিৎসকেরা বিস্মিত।

Advertisement

আরও পড়ুন:উদ্বেগের কিছুই নেই, ডেঙ্গি নিয়ে ভুল প্রচার, মত মমতার

৩৭ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলা জ্বর ও তলপেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। দেখা যায় গর্ভস্থ শিশুর হৃদস্পন্দনের হার অত্যধিক বেশি। মহিলার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। সন্তানের জন্মের পরে মায়ের রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গি ধরা পড়ে। এ দিকে জন্মের দ্বিতীয় দিনেই নবজাতকের জ্বর হওয়ায় তার রক্তের এনএসওয়ান পরীক্ষা হয়। তবে তা নেগেটিভ হয়। কিন্তু নবজাতকের প্লেটলেট কমতে থাকায় ফের পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায় ডেঙ্গি পজিটিভ। এক সময়ে শিশুর প্লেটলেটের সংখ্যা ৮ হাজারে নেমে যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি, ডেঙ্গির জীবাণু শরীরে ঢোকার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর আসে। পাঁচ থেকে সাত দিন পরে রক্ত পরীক্ষা করলে এলাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গি পজিটিভ হয়। এ ক্ষেত্রে জন্মের চার দিনের মধ্যেই এলাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গি পজিটিভ হয়েছে। সুতরাং সংক্রমণ মায়ের কাছ থেকেই এসেছে।

নবজাতকের উপরে নজর

• শিশুটি খুবই অস্থির থাকছে কি না

• গায়ে লাল লাল দাগ বেরলো কি না

• ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে কি না

• মায়ের দুধ খেতে অসুবিধা হচ্ছে কি না

• ঘন ঘন বমি হচ্ছে কি না

•মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত বেরোচ্ছে কি না

পরজীবী বিজ্ঞানী অমিতাভ নন্দী বলছেন, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা কোনও মহিলা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে তাঁর সন্তানের মধ্যে ওই জীবাণু যে চলে যাচ্ছে তার উদাহরণ আমরা আগেও পেয়েছি। তাই প্রসূতি মায়েদের খুব সাবধানে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকি আমরা।’’

এডিস মশার চরিত্র বদলও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে নতুন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কলকাতার পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানাচ্ছেন, কোনও এডিস মশা এক বার ডেঙ্গি আক্রান্ত মানুষকে কামড়ালে অনেক ক্ষেত্রেই তার জিন ওই মশার জিনের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সেই নির্দিষ্ট জিনটি থাকলে ওই মশাটি জন্ম থেকেই ডেঙ্গির জীবাণু বাহক হয়ে পড়ে। সেই মশা কাউকে কামড়ালে তাঁরও ডেঙ্গি হয়। তাই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে মশা নিধনের উপরেই পুরসভা সব থেকে বেশি জোর দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন