রাজ্যে এখন যে-ভাবে সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়ে থাকে, সেটা আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ঠিক কেমন নিয়মে সিভিক পুলিশ নিয়োগ হতে পারে, রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে তা জানাতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে সিভিক পুলিশ নিয়োগ নিয়ে মামলার শুনানি ছিল। আদালতে হাজির ছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জয়ন্ত মিত্রও। এজি-র উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘যে-কোনও ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রেই কিছু নিয়মনীতি থাকা দরকার। সিভিক পুলিশ নিয়োগের জন্য কী কী নিয়ম করা যায়, সেই ব্যাপারে গঠনমূলক কিছু প্রস্তাব হলফনামার আকারে পেশ করুন।’’ ১৬ মে পর্যন্ত এই মামলার শুনানি মুলতুবি রেখেছেন বিচারপতি।
তৃণমূল সরকারের আমলে কী ভাবে সিভিক পুলিশ নিয়োগ হয়েছে?
এই মামলার শুনানিতে সরকারি আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায় এর আগে আদালতে যে-হলফনামা পেশ করেছেন, তাতে বলা হয়: প্রতিটি জেলায় এক জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে জেলার পাঁচ পুলিশকর্তাকে নিয়ে একটি কমিটি গড়া হয়। প্রতিটি থানা এলাকায় ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা হয় প্রার্থীদের। সেই পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে তৈরি হয় প্রার্থীদের তালিকা। তার পরে নিয়োগ। হলফনামায় আরও বলা হয়, নিয়োগের পরে ছ’মাস অন্তর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বিভিন্ন থানা এলাকায় কাজে লাগানো হচ্ছে সিভিক পুলিশের কর্মীদের। তবে তাঁদের সমস্ত নিয়োগই অস্থায়ী। হলফনামা পড়ে বিচারপতি জানান, নিয়োগ অস্থায়ী হলেও এর পদ্ধতি ঠিক নয়। সিভিক পুলিশ নিয়োগ হয়েছে খেয়ালখুশি মতো। এতে জনগণের টাকা অপচয় হয়েছে। এ দিনের শুনানিতে তাই নিয়োগের নিয়মনীতি নিয়ে সরকারকে নতুন হলফনামা দিতে বলেছেন বিচারপতি।
নবান্নের এক কর্তা জানান, ২০১৩ সালে সব থানায় সিভিক পুলিশ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল সরকার। থানার পুলিশকে সাহায্য করার জন্যই এই ব্যবস্থা। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোটা রাজ্যে এক লক্ষ ৩০ হাজার সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়। তার মধ্যে বাঁকুড়া জেলায় ওই পদে নেওয়া হয় পাঁচ হাজার ১০০ জনকে। নিয়োগের পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সারেঙ্গা ও বারিকুল থানা এলাকার দশ জন প্রার্থী গত মাসে হাইকোর্টে পৃথক দু’টি মামলা করেন। মামলার আবেদনে অভিযোগ করা হয়, ওই নিয়োগে স্বচ্ছতা নেই।
সিভিক পুলিশ নিয়ে টানাপড়েন বাড়ে ভোট ঘোষণার পরে। শাসক শিবির তাদের দিয়ে নিজেদের কাজ করিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত তাদের ভোটের কাজে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।