সুরক্ষার জন্য গোপন বিচার চাইছে এনআইএ

সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে সিআরপি ক্যাম্প তথা এনআইএ-র অস্থায়ী অফিস-লাগোয়া বাসস্টপে সোমবার সন্ধ্যায় বিকট শব্দে কী ফাটল, সেই ব্যাপারে রাজ্যের কাছে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্ত করছে এনআইএ। সোমবারের ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, এনআইএ-র অফিসার ও কর্মীদের জন্য রাজ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হবে। ইতিমধ্যে এনআইএ-র অস্থায়ী অফিসের সামনে পুলিশি প্রহরা বাড়ানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৪
Share:

সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে সিআরপি ক্যাম্প তথা এনআইএ-র অস্থায়ী অফিস-লাগোয়া বাসস্টপে সোমবার সন্ধ্যায় বিকট শব্দে কী ফাটল, সেই ব্যাপারে রাজ্যের কাছে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্ত করছে এনআইএ। সোমবারের ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, এনআইএ-র অফিসার ও কর্মীদের জন্য রাজ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হবে। ইতিমধ্যে এনআইএ-র অস্থায়ী অফিসের সামনে পুলিশি প্রহরা বাড়ানো হয়েছে।

Advertisement

খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার বিচার প্রক্রিয়া ‘ইন ক্যামেরা’য় (গোপনে) করার জন্য এনআইএ মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করেছে। এ দিন কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খানের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ। আবেদনে এনআইএ বলেছে, খাগড়াগড় মামলায় অভিযুক্ত, সাক্ষী, আইনজীবী সকলেরই নিরাপত্তা জরুরি। আদালতে নাশকতামূলক ঘটনা এড়াতেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া ‘ইন ক্যামেরা’ হওয়া উচিত।

এনআইএ-র এক কর্তা এ দিন জানান, তাঁদের হাতে যা যা মামলা রয়েছে, প্রতিটির বিচার প্রক্রিয়াই ‘ইন ক্যামেরা’য় হচ্ছে। তা ছাড়া, ওই অফিসার বলেন, “আমাদের মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। আদালতে অনেক বিষয় আলোচনা হয়, যা তদন্তের ক্ষেত্রে গোপন রাখা জরুরি। তাই, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার বিচার প্রক্রিয়াও ‘ইন ক্যামেরা’য় না হলে সমস্যা হচ্ছে। বহু সাধারণ মানুষও আদালতে ঢুকে পড়ছে।” আবেদনের শুনানি ২০ নভেম্বর। খাগড়াগড়ে ডেরা বাঁধা জঙ্গিদের বিস্ফোরক তৈরির কাঁচা মাল সরবরাহের অভিযোগে ধৃত, কীর্ণাহারের আমজাদ আলি শেখ ওরফে কাজলকে এ দিন আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকেও ২০ নভেম্বর পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এনআইএ-র একটি সূত্রের খবর, বিস্ফোরক তৈরির কাঁচা মাল বা রাসায়নিক আমজাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করত হোসেন শেখ ওরফে রবি নামে এক যুবক। রবিকেও খাগড়াগড়-কাণ্ডে খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

আমজাদকে সোমবার বীরভূম থেকে গ্রেফতার করে এনআইএ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সল্টলেকে এনআইএ দফতরের কাছে বিকট শব্দ। এ নিয়ে এনআইএ-র অফিসারদের একাংশ তাঁদের উদ্বেগ গোপন করেননি। তাঁদের বক্তব্য, কোনও শক্তিশালী দেশি বোমাই ফেটেছে। ওই ঘটনায় বাসস্টপের দেওয়ালে টিনের একটি অংশ তুবড়ে যায়। পিছনে পাঁচিলের পলেস্তরা খসে পড়ে। নীচের একটি অংশে সিমেন্টে ফাটল ধরে। তবে সেটা কাউকে জখম করার জন্য নাকি ভয় দেখাতে কিংবা নিছক বার্তা দিতে ব্যবহার করা হয়েছে, সেই ব্যাপারে এনআইএ এখনই কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। এনআইএ-র ওই কর্তার কথায়, “এটা দেখা বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের কাজ।”

তবে পুলিশের দাবি, মনে হচ্ছে, কেউ শব্দবাজি জাতীয় কিছু বা কম শক্তিধর দেশি বোমা জাতীয় বস্তু ফাটিয়েছে। কিন্তু সেটাই বা কে বা কারা কেন ওই জায়গায় ফাটাতে গেল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন এনআইএ-র অফিসারদের একাংশ। পুলিশ সূত্রে খবর, পাহারারত সেন্ট্রি এবং কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, একটি গাড়ি ‘বিস্ফোরণস্থলের’ খুব কাছে গিয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়। ওই গাড়ি থেকে এক জনকে কিছু ছুড়তে দেখা গিয়েছিল। তার পরেই ওই শব্দ। পুলিশ সিসিটিভির ফুটেজ দেখছে।

এনআইএ-র অফিসারদের একাংশের বক্তব্য, জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর ধৃত চাঁইদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের উপর হামলা বাংলাদেশে অতীতে হয়েছে। জেএমবি-র মজলিস-ই-সুরা অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বোমা মিজান এবং সালেলিন ধরা পড়ার পর তাঁদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল। এমন কী, ওই জঙ্গি গোষ্ঠীর অন্যতম মাথা বাংলাভাই ওরফে সিদ্দিকুল ইসলাম ধরা পড়ার পরে তাঁকেও পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এনআইএ-র এক অফিসারের কথায়, “সোমবার সন্ধ্যায় আমরা তখন ধৃতদের মধ্যে তিন জনকে জেরা করছি। সেই সময়ে ওই শব্দ। ভাবলাম, এটা জেএমবি-র চাঁই সাজিদকে গ্রেফতার করার বদলা নয় তো!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন