রক্ত আর হাহাকারে এক ভূস্বর্গ-জঙ্গলমহল

শিলদার স্মৃতিতে পুলওয়ামার শোক

সিআইডি এই মামলায় চার্জশিট দিয়ে দিয়েছে। বেশিরভাগ অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরা আত্মসমর্পণ করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলদা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৪
Share:

শিলদা কাণ্ডের বর্ষপূতিতে শ্রদ্ধা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ঘাতকের পরিচয় ও জায়গা আলাদা হলেও দু’ক্ষেত্রেই হামলার লক্ষ্য ছিল জওয়ানেরা। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিনপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হামলায় ২৪ জন ইএফআর জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল।

Advertisement

শুক্রবার ছিল সেই ঘটনার নবম বর্ষপূতি। সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে এল বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় সিআরপি কনভয়ে গাড়িবোমা হামলার কথা। সেই হামলার দায় নিয়েছে জঙ্গি সংগঠন জইশ ই মহম্মদ। এ দিনের অনুষ্ঠানে অনেক পুলিশ কর্মীকে নীচু স্বরে জঙ্গি হামলা নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে ছিল শোকের পরিবেশ।

এ দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) রাজীব মিশ্র। মাওবাদী হামলার ঘটনা স্মরণ করে তিনি জানান, মাওবাদীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে শিলদা ইএফআর ক্যাম্পের ২৪ জন জওয়ান শহিদ হন। জওয়ানদের পাল্টা প্রতিরোধে মারা যায় ৫ জন মাওবাদী। নিহত সঙ্গীদের দেহ হামলাকারী মাওবাদীরা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

সিআইডি এই মামলায় চার্জশিট দিয়ে দিয়েছে। বেশিরভাগ অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরা আত্মসমর্পণ করেছে। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ‘‘পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রচেষ্টায় এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এখন এলাকায় শান্তি এসেছে। আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসনের নতুন নীতি এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে আগ্রহী হয়ে অনেক মাওবাদী আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরেছেন। এখনও যাঁরা আত্মসমর্পণ করেননি তাঁরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসুন এটাই আবেদন রাখছি।’’ একই সঙ্গে আইজি জানান, যারা অন্য রাজ্য থেকে এখানে এসে শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন, তাদের দিকে সতর্ক নজর রাখা হয়েছে।

২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাওবাদী হামলার পরে উদ্ধার হওয়া পোড়া বন্দুক। ফাইল চিত্র

এ দিন সকালে শিলদা নিমতলা চকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে পুরনো শিবিরটির (যেখানে হামলা হয়েছিল) জায়গায় শোক প্যারেড হয়। সেখানে আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) ছাড়াও যোগ দিয়েছিলেন ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ, ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) কুঁয়র ভূষণ সিংহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) বিশ্বজিৎ মাহাতো প্রমুখ। ছিলেন সিআরপি এবং ইএফআর-এর কর্তারাও। সেখানে জওয়ানদের অস্থায়ী শহিদবেদিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তারপর পুলিশ কর্তারা পায়ে হেঁটে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের স্ট্র্যাকো ক্যাম্পে আসেন। সেখানে ‘শহিদ স্মৃতি উদ্যানে’ ২৪টি মেহগনি গাছে জল দেন তাঁরা।

মাওবাদী হামলার দিন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জওয়ানদের দেহ। ফাইল চিত্র

২০১১ সালে জওয়ানদের স্মৃতিতে ওই ২৪টি গাছ রোপন করা হয়েছিল। এদিন শহিদ উদ্যানের স্থায়ী শহিদ বেদীটিতে মালা দেন আইজি সহ পুলিশ আধিকারিকরা। এলাকার প্রায় দু’শো দরিদ্রদের হাতে পোশাক ও কম্বল তুলে দেওয়া হয়। ৫ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্নকে দেওয়া হয় ট্রাই সাইকেল। হয় খুদেদের বসে আঁকো।
জঙ্গলমহলে মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বে শিলদায় ভরা বাজারের মাঝে ইএফআর জওয়ানদের শিবির বসানো হয়েছিল। শিলদা-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কের ধারে নিমতলা চকে শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে ওই ক্যাম্পটি ছিল। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একেবারে দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে ওই ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছিল সশস্ত্র মাওবাদীরা। ওই ঘটনার পরে শিলদার নিমতলা চক লাগোয়া ওই শিবিরটি তুলে নেওয়া হয়েছিল। তার পরিবর্তে শিলদার কিছুটা দূরে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের স্ট্র্যাকো জওয়ানদের শিবির করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন