নির্মল বাড়ির স্বীকৃতি।— নিজস্ব চিত্র
‘নির্মল জেলা’র স্বীকৃতি পেতে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে জেলার সব বাড়িতে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময়সীমা ছিল চলতি আর্থিক বছরের শেষদিন অর্থাৎ ৩১ মার্চ। তারপর কেটে গিয়েছে আরও তিন তিনটে মাস। শেষ হিসেব বলছে, জেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাড়িতে শৌচাগার তৈরি বাকি এখনও। তাই নদিয়ার মতো ‘নির্মল জেলার’ স্বীকৃতি পেতে মরিয়া পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনও। কোমর বেঁধে চলছে শেষ পর্যায়ের শৌচাগার তৈরির কাজ।
আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে জেলার ওইসব পরিবারে শৌচাগার তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রামপঞ্চায়েতগুলিকে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এমনকি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করতে না পারলে এলাকার উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘জেলার অধিকাংশ বাড়িতে শৌচাগার তৈরির কাজ হয়ে গিয়েছে। আর মাত্র তিন হাজার পরিবারের শৌচাগার তৈরির কাজ বাকি আছে। আগামী অগস্ট মাসের মধ্যে কাজ শেষে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা এই কাজ করতে পারবেন না তাঁদের উন্নয়ন কাজের টাকা কম বরাদ্দ কমিয়ে
দেওয়া হবে।’’
জেলা পরিষদ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার প্রতিটি বাড়ি ও বিদ্যালয়ে শৌচাগার তৈরির জন্য ‘টোটাল স্যানিটেশন ক্যাম্পেন’ কর্মসূচি বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে। ওই কর্মসূচি অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি ও স্কুলে শৌচাগার নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে আর্থিক বরাদ্দ করা হচ্ছিল। কিন্তু তা সত্বেও জেলার অনেক বাড়িতেই শৌচাগার তৈরির কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। ২০১২ সালে জেলা প্রশাসনের করা সমীক্ষা অনুযায়ী পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ২ লক্ষ ১৯ হাজার বাড়িতে শৌচাগার তৈরির কাজ বকেয়া ছিল। এরপর কেন্দ্র সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে রাজ্য সরকারের মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে জেলার বাকি পরিবারে শৌচাগার নির্মাণের জন্য আর্থিক বরাদ্দ করা হয়। শৌচাগার তৈরির খরচ হিসেবে মোট ১০ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে মাত্র ৯০০ টাকা উপকৃত পরিবারকে দিতে হয়। বাকি ১০ হাজার টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ করা হয়।
জেলা পরিষদ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকবছর আগেই এলাকার প্রতি বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করে দেশের মধ্যে প্রথম নির্মল ব্লকের স্বীকৃতি পেয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম-২ ব্লক। তারপর জেলার একাধিক ব্লক ও গ্রামপঞ্চায়েত সেই স্বীকৃতি পেলেও নির্মল জেলার স্বীকৃতি অধরাই থেকে গিয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্যে প্রথম ‘নির্মল জেলার’ স্বীকৃতি পেয়েছে নদিয়া জেলা। এবার সেই স্বীকৃতি হাতছাড়া করতে চাইছে না পূর্ব মেদিনীপুরও।
কিন্তু সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা শেষ হল না কেন?
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস বলেন, ‘‘জেলার অধিকাংশ ব্লক ও পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে কয়েকটি ব্লকের অল্প সংখ্যক বাড়িতে কাজ বাকি রয়েছে। আগামী অগস্ট মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’