ভোগান্তি হাওড়ায়

ঘোষণা ছাড়াই ট্রেন লেট, ক্ষোভ

দিন দুয়েক আগেই হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে রেল বোর্ডের সদস্য (ট্র্যাফিক) বলেছিলেন, ‘‘যখন তথ্য-প্রযুক্তিতে রেল ক্রমশ এগোচ্ছে, সে সময়ে খড়দহ স্টেশনে ভুল ঘোষণা করা ঠিক হয়নি।’’ এমনকী চলতি বছরের বাজেটে রেলের তথ্য-প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার জন্য আঠারোশো কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৬
Share:

চলছে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার, হাওড়া স্টেশনে। — নিজস্ব চিত্র

দিন দুয়েক আগেই হাওড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে রেল বোর্ডের সদস্য (ট্র্যাফিক) বলেছিলেন, ‘‘যখন তথ্য-প্রযুক্তিতে রেল ক্রমশ এগোচ্ছে, সে সময়ে খড়দহ স্টেশনে ভুল ঘোষণা করা ঠিক হয়নি।’’ এমনকী চলতি বছরের বাজেটে রেলের তথ্য-প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার জন্য আঠারোশো কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Advertisement

কিন্তু কোথায় কী? দূরপাল্লার একটি ট্রেন হাওড়া থেকে কখন ছাড়া হবে, তার কোনও তথ্য না দেওয়ায় চূড়ান্ত নাকাল হতে হল যাত্রীদের। ফলে সারা রাত ধরে উৎকণ্ঠা নিয়ে প্ল্যাটফর্মে বসেই রাত কাটালেন তাঁরা। এখানেই শেষ নয়, এ ভাবে কাটল পরদিন সারা সকালও। শেষে ট্রেন ছাড়ল দুপুর পৌনে ১টায়। রেলের এহেন কর্মকাণ্ডের জন্য বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে ওই ট্রেনের যাত্রীরা স্টেশন মাস্টারের ঘরের সামনে দু’দফায় বিক্ষোভও দেখান। কিন্তু এত কাণ্ডের পরেও সামান্য দুঃখপ্রকাশ করেননি পূর্ব রেলের কর্তারা।

এমনিতেই পাত (ট্রেন চালানোর সময়) না থাকলেও পুজোর সময়ে জোর করে আয় বাড়ানোর চেষ্টায় গাদা গাদা ট্রেন চালিয়েছে রেল। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। বেশির ভাগ ট্রেনই দেরি করে চলছে। শতাব্দী থেকে সুবিধা এক্সপ্রেস, সব ট্রেনই যাওয়া-আসা করছে দেরি করে। বুধবার রাতে হাওড়া থেকে যে সুবিধা এক্সপ্রেসটি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল, সেটি ছাড়ার কথা ছিল রাত ১১-৫৫ মিনিটে। কিন্তু যাত্রীরা সময় মতো স্টেশনে পৌঁছে দেখেন ইলেট্রনিক্স ডিসপ্লে বোর্ডে ওই ট্রেনটি সংক্রান্ত কোনও তথ্য দেওয়া হচ্ছে না।

Advertisement

ট্রেনটি ছাড়ার সময় পর্যন্ত স্টেশনে অপেক্ষার পরে যাত্রীদের অনেকে প্রথমে অনুসন্ধান ও পরে স্টেশনের মাস্টারের ঘরে গিয়ে ট্রেনের সময় জানতে চান। কিন্তু কেউই সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। রাত প্রায় ১টা নাগাদ যাত্রীরা ডেপুটি স্টেশন মাস্টারের ঘরে গিয়ে জানতে পারেন, ট্রেনটি ছাড়ার সময় পাল্টে গিয়েছে। রাতের বদলে ছাড়বে সকালে। কিন্তু ততক্ষণে রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় স্টেশনেই থাকতে বাধ্য হন যাত্রীরা। সকালে ফের কয়েকবার তাঁরা স্টেশন মাস্টারের ঘরে গিয়ে ট্রেন ছাড়ার সঠিক সময় জানতে চান। তখনও তা জানতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। শুরু হয় বিক্ষোভ। কিছুক্ষণ বিক্ষোভ চলার পরে রেলকর্মীরা জানান, ট্রেন ছাড়বে দুপুর ১২টায়। কিন্তু তার পরেও দেখা যায় ট্রেনটি ছাড়ে আরও ৪৫ মিনিট পরে, দুপুর পৌনে ১টায়।

রেল কর্তাদের বক্তব্য, ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে আসতে দেরি হওয়ায় হাওড়া থেকেও ছাড়তে দেরি হয়েছে। এই ঘটনাটি ঘটাও উচিৎ নয়। তবুও তর্কের খাতিরে মেনে নিলেও যাত্রীদের কেন ওই তথ্য সঠিক সময়ে জানাবে না রেল? এর উত্তরে রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানান, যাত্রীদের বলা হয়েছিল ট্রেনটি ছাড়ার সময় বদল হয়েছে। যাত্রীরা অবশ্য রেলের ওই আধিকারিকের কথা মানতে চাননি। তাঁরা বলেন, ‘‘কোথাও জানানো হয়নি। এমনকী আসন সংরক্ষণের সময়ে নথিভুক্ত করা আমাদের মোবাইলেও নয়।’’ তাঁদের বক্তব্য, স্টেশনের ডিসপ্লে বোর্ডেই তো তথ্য দিতে পারেনি। রেলকর্মীরা নিজেরাই জানতেন না কী হয়েছে ট্রেনটির। খোঁজ রাখতেও চেষ্টা করেননি তাঁরা।’’

শিয়ালদহের খড়দহের ঘটনায় ট্রেন আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু হাওড়ায় বিক্ষোভ দেখালেও ট্রেন আটকানো হয়নি। তাই ‘শাক দিয়ে মাছ’ ঢাকলেন রেল কর্তারা। কিন্তু যাত্রীরা জানিয়েছেন, ঘটনাটি তাঁরা মানছেন না। রেলের ট্রাইবুনালে মামলা করবেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন