জঙ্গলমহলে আদিবাসীদের জন্যও তিনিই চালের ব্যবস্থা করেছেন বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র।
সরকার যে ভাবে প্রান্তিক মানুষের জন্য সক্রিয়, তাতে জঙ্গলমহলে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের অভাব হওয়ার কথা নয় বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার নবান্ন সভাগৃহে কলকাতার সেরা দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে সম্মান জানানোর অনুষ্ঠানে মমতা জানান, অনাহারে মারা যাচ্ছে, এটা কেউ বলতে পারবে না। যাদের চালের দরকার আছে, এমন প্রতিটি মানুষের কাছে চাল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর মূল কথা, রাজ্য সরকারের নীতিই হচ্ছে অভাবী প্রতিটি প্রান্তিক মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করা, চিকিৎসায় সাহায্য করা। জঙ্গলমহল থেকে বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিক, সিঙ্গুরের চাষি থেকে আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ— সকলের পাশে সরকার সব সময় থাকে বলে তাঁর বক্তব্য। জঙ্গলমহলে আদিবাসীদের জন্যও তিনিই চালের ব্যবস্থা করেছেন বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
লালগড়ের পূর্ণাপাণি গ্রামে সম্প্রতি সাত জন শবরের মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেউ যাতে অনাহারে না থাকে, সে জন্য সস্তায় চাল দিচ্ছি। কেউ যদি অসুস্থ হলে ওষুধ না খান, তা হলে কী করব? ওষুধ তো খেতে হবে। ‘সরি টু সে’ সংবাদমাধ্যমের একাংশ বাংলা নিয়ে গর্ব বোধ করে না। বাংলায় ব্যবসা করে, তা করুক। তাতে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু বাংলার বদনাম করাই এদের কাজ। বিবেকানন্দ যত দিন বেঁচেছিলেন, তাঁকে নিয়েও গর্ববোধ করেনি। নেতাজিকে নিয়েও কোনও গর্ববোধ করেনি। অন্য কোনও মনীষীকে নিয়েও গর্ববোধ করে না। শুধু দিল্লির পিছনে দৌড়য়। সারা পৃথিবীর পিছনে দৌড়য়। আর বাংলার বদনাম করে।’’
আরও পড়ুন: শবরদের পাতে আলুপোস্ত-ডিম, হঠাৎ এই আয়োজন কেন?
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘মাথা পিছু ২ টাকা করে আট কেজি চাল ও তিন কেজি গম দেওয়া হয়। এক জন ১১ কেজি পায়। একটা পরিবারে যদি পাঁচ জন থাকে, তা হলে সব মিলিয়ে ৫৫ কেজি পায়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ৫৫ কেজি করে পাওয়ার পরেও খাবারের অভাব থাকতে পারে! তাঁর কথায়, ‘‘খাবারের অভাব নেই। হতেই পারে কোনও একটা পেয়ে গেলে, মানুষ আর একটা চাইতেই পারে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ২ টাকা কেজি দরে যে চাল দেওয়া হয়, তা বাইরে থেকে কিনতে হয় ২৫-২৬ টাকা কেজিতে। তা হলে সরকারকে কত টাকা ভর্তুকি দিতে হয়? মমতা জানান, চা-বাগানেও শ্রমিকদের ৪৭ পয়সা করে ওই চাল দেওয়া হয়। সিঙ্গুর ও আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরাও তা পান। এগুলো স্পেশাল প্যাকেজ হিসেবে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি। যাতে কেউ না খেতে পেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়। অথবা পেটে দুটো ভাত পাবে না, তা যাতে না হয়।’’
আরও পড়ুন: বাংলা’ অনিশ্চিত, ক্ষুব্ধ মমতা
তবে বাম-কংগ্রেস পরিষদীয় দল লালগড় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিধানসভায় আলোচনা করতে হবে। এই মৃত্যু অনাহারে, মদ খেয়ে না আত্মহত্যা তা সরকারকে জানাতে হবে।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘শবরদের মৃত্যুর পরে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হবে জঙ্গলমহল কি হাসছে?’’ আর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বামেদের আমলে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি রাজ্যবাসীর জানা আছে। প্রশাসনের তরফে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’