কাহিল উত্তরবঙ্গে আশা নেই বৃষ্টির

তিন দিনের অনাবৃষ্টিতেই শিলিগুড়িতে এখন যেন সেই ছোটনাগপুরের মালভূমির আবহাওয়া। সাতসকালেই তাপমাত্রার পারদ ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে যাচ্ছে। বেলা ১০টাতেই বইছে গরম বাতাস। হয়তো লু নয়। কিন্তু লু-এর চেয়েও কম শক্তিশালী নয়। চোখমুখ ঝলসে যাচ্ছে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০১:৪৯
Share:

প্রচণ্ড গরমে সুনসান শিলিগুড়ির রাস্তা। (ডান দিকে) গরম থেকে বাঁচতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

তিন দিনের অনাবৃষ্টিতেই শিলিগুড়িতে এখন যেন সেই ছোটনাগপুরের মালভূমির আবহাওয়া।

Advertisement

সাতসকালেই তাপমাত্রার পারদ ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে যাচ্ছে। বেলা ১০টাতেই বইছে গরম বাতাস। হয়তো লু নয়। কিন্তু লু-এর চেয়েও কম শক্তিশালী নয়। চোখমুখ ঝলসে যাচ্ছে। পুরুলিয়া, রাঁচি, গিরিডি, বোকারো কিংবা জামশেদপুরে যেমন মাথায় গামছা, চোয়ালে জড়িয়ে ঘোরাফেরা করেন বাসিন্দারা, তেমন দৃশ্য সোমবারের শিলিগুড়ি নগরীতে চোখে পড়েছে অনেক রাস্তায়। কারণ, গত এক দশকের মধ্যে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে তাপমাত্রা এতটা বাড়েনি। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, সোমবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, অনুভূতিটা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। ফলে, দাবদাহে লবেজান হয়ে পড়া শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা য়েন সকলেই এখন চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।

তবে চটজলদি আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের বিশেষজ্ঞরা অনেকেই। যেমন, ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক রঞ্জন রায় বললেন, ‘‘মৌসুমি অক্ষরেখা এখন দক্ষিণবঙ্গে সক্রিয়। তা উত্তরমুখো হতে একটু সময় লাগবে। এর মধ্যে স্থানীয় নিম্নচাপ তৈরি হলে একটু-আধটু বৃষ্টি হতে পারে। তাতে সাময়িক ভাবে স্বস্তি মিলতে পারে। কিন্তু, গুমোট বাড়তে পারে। তবে সব ঠিকঠাক চললে চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয়ার্ধে হয়তো ফের বৃষ্টির দেখা মিলবে।’’

Advertisement

বস্তুত, কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরও মানছে, জুলাইয়ের শেষে শিলিগুড়ির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয়েছে। শুধু শিলিগুড়ি নয়, গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রির কিছুটা বেশি। যা চলতি মরসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ তো বটেই, গত দশ বছরের মধ্যেও সর্বোচ্চ বলে দফতরের প্রকাশিত তথ্যে উঠে এসেছে। তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত সম্পর্কে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের থেকে নিয়মিত যে বুলেটিন প্রকাশিত হয় তাতে সোমবার বিকেলে জলপাইগুড়ি এবং লাগোয়া এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.৪ বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আধিকারিককদের একাংশ জানিয়েছেন, এ দিন শিলিগুড়ির তাপমাত্রাও প্রায় ৩৮ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই ছিল। দুই শহরের তাপমাত্রার পারদ ৩৭ ডিগ্রির আশেপাশে থাকলেও, অনুভূত তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রির মতো। এ দিন কোচবিহারের তাপমাত্রা ছিল ৩৭.১। স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি বেশি। দার্জিলিঙের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ ডিগ্রি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহার কথায়, ‘‘পারদে যে তাপমাত্রা থাকে এবং আমরা যে রকম উষ্ণতা অনুভব করি তার মধ্যে কিছুটা ফারাক থাকে। আমরা যে তাপমাত্রা অনুভব করি তাকে অনুভূত তাপমাত্রা বলা হয়।’’ আবহাওয়া দফতরের প্রকাশিত বুলেটিনে ২০০৫ সাল থেকে জুলাই মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার উল্লেখ্য রয়েছে। সে অনুযায়ী এ দিনের ৩৭.৪ ডিগ্রি সর্বোচ্চ। দফতর জানিয়েছে, জুলাই মাসে এই এলাকায় স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৩১ ডিগ্রি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গের আকাশে কোনও নিম্নচাপ না থাকতেও বৃষ্টির দেখা মিলছে না।

তুলনায় কিছুটা শীতল দার্জিলিং। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সেখানে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছিই রয়েছে। কালিম্পঙে অবশ্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। ফলে, কালিম্পঙেও বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। পাহাড়ে তবু অল্পস্বল্প বৃষ্টি হচ্ছে। সমতলে বৃষ্টির প্রায় দেখা নেই। ফলে, সকাল থেকেই রাস্তাঘাট সুনসান। দুপুরের দিকে তো যানবাহনও কম চলেছে। সরকারি-বেসরকারি বাসে ভিড় ছিল তুলনায় অনেক কম। হাসপাতালে গরমে অসুস্থ হয়ে অন্তত ৩০ জন চিকিৎসা করিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন