জোরাজুরি নয় আবিরে, সংযম কর্মী সংগঠনে

ভোটপর্ব মিটতে না মিটতেই যখন একের পর এক গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটছে, ঠিক তখনই সৌজন্য ও সহনশীলতার বার্তা দিল তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মী সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন’। সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি নেতাদের আবেদন, তৃণমূলের বিপুল জয়ে আবির খেলুন, মিষ্টিমুখ করুন।

Advertisement

অত্রি মিত্র ও সোমনাথ চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

ভোটপর্ব মিটতে না মিটতেই যখন একের পর এক গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটছে, ঠিক তখনই সৌজন্য ও সহনশীলতার বার্তা দিল তৃণমূল সমর্থিত সরকারি কর্মী সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন’। সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি নেতাদের আবেদন, তৃণমূলের বিপুল জয়ে আবির খেলুন, মিষ্টিমুখ করুন। কিন্তু যাঁরা অনিচ্ছুক বা বিরোধী সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য, তাঁদের জোর করবেন না। বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মীদের শান্তি বজায় রাখতে বলেছেন। তা সত্ত্বেও কলকাতা, পুরুলিয়া, বর্ধমান, নদিয়া-সহ বিভিন্ন জেলায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। গণ্ডগোল থামাতে গিয়ে জখম হয়েছে পুলিশও। এই পরিস্থিতিতে শাসক দলের কর্মী সংগঠনের এমন ভাবনা খানিকটা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন নবান্নের কেউ কেউ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ভোটের ফল বেরোবে বলে নবান্ন ছিল কার্যত সুনসান। তৃণমূলপন্থী কর্মীদের অনেকেই ছুটি নিয়ে নিজের নিজের এলাকায় ছিলেন। তাই বিপুল জয়ের আঁচ লাগেনি সরকারি অফিসে। শুক্রবার অফিস শুরু হতেই উৎসবের মেজাজ ছড়িয়ে পড়ে নবান্ন থেকে নিউ সেক্রেটারিয়েট এবং সল্টলেকের বিভিন্ন সরকারি অফিসে। সবর্ত্রই ছবিটা ছিল মোটামুটি এক। কপালে সবুজ আবিরের একটা টিপ। সঙ্গে করমর্দন বা কোলাকুলি। তবে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নয়।

শাসক দলের কর্মী সংগঠনের পক্ষে বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, ‘‘পালাবদল হবে ধরে নিয়ে কো-অর্ডিনেশন কমিটির বেশ কিছু নেতা-কর্মী যেন একটু বেশি ‘সক্রিয়’ হয়ে উঠেছিলেন। স্বভাবতই আমাদের সংগঠনের অনেকেই ক্ষুব্ধ। বিপুল জয়ের পরে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা ছিল। সে জন্যই এসএমএস করে নেতৃত্বের নির্দেশ সব জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

কী সেই নির্দেশ? কোথাও কোনও কর্মীকে আবির মাখতে, আনন্দ-উৎসবে সামিল হতে জোর করা যাবে না। এমনকী, যাঁরা বিরোধী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত, তাঁদেরও কোনও কিছু করতে বাধ্য করা যাবে না। নেতৃত্বের এই নির্দেশ সরকারি অফিসের বিভিন্ন শাখায় টেলিফোন অথবা এসএমএস করে জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই মতো কাজও হয়েছে ম্যাজিকের মতো।

এ দিন নবান্নে দেখা গিয়েছে, সাধারণ কোনও কর্মীকে আবির মাখাতে গিয়েছেন ফেডারেশনের কোনও নেতা। ওই কর্মী আবিরে অ্যালার্জি আছে বলায় নেতা ঘাড় নেড়ে হাসিমুখে পিছিয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ অন্য কোনও সমস্যার কথা বলেছেন। তখনও একই প্রতিক্রিয়া। তবে ফেডারেশনের সদস্য নন, এমন কর্মীদেরও অনেককেও আবার আবির-মিষ্টিমুখে সামিল হতে দেখা গিয়েছে। কিছু অফিসারের কপালেও দেখা গিয়েছে সবুজের ছোঁয়া।

সৌজন্যের এই বাতাবরণ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিরোধী কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতারা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনোজ গুহ বলেন, ‘‘ওঁরা কী বলেছেন, জানি না। এটা একেবারেই ওঁদের ব্যাপার। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ তবে আর এক বাম কর্মী সংগঠন স্টিয়ারিং কমিটির নেতা সঙ্কেত চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ওঁরা যা বলছেন, সত্যিই যদি সেই রাস্তায় হাঁটেন, তা হলে ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন