আধিপত্য ফলাইনি, দাবি শিক্ষামন্ত্রীর

সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে যে টাকা দিচ্ছে তা জনগণের টাকা। সেই টাকা কী ভাবে খরচ হচ্ছে তা জানতে চাওয়াটা কিংবা তার হিসেব রাখাটা কখনওই আধিপত্য কায়েম করা নয় বলে বৃহস্পতিবার দাবি করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে যে টাকা দিচ্ছে তা জনগণের টাকা। সেই টাকা কী ভাবে খরচ হচ্ছে তা জানতে চাওয়াটা কিংবা তার হিসেব রাখাটা কখনওই আধিপত্য কায়েম করা নয় বলে বৃহস্পতিবার দাবি করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

আগের দিন প্রেসিডেন্সি কলেজের বিশেষ সমাবর্তনে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, ‘‘প্রেসিডেন্সির সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু আধিপত্য নয়।’’ এর মধ্য দিয়ে অমর্ত্যবাবু সাম্প্রতিক কালে নানা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ নিয়ে বিতর্কের দিকে ইঙ্গিত করেছেন বলে শিক্ষাবিদদের অনেকেই মনে করছেন। অমর্ত্যবাবুর বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু এবং প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াও।

শুধু প্রেসিডেন্সি নয়, সরকার রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন বিষয়ে ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করে আসছে বলে বারবারই অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অবস্থান আগেই একাধিক বার স্পষ্ট করে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্য ছিল, ‘‘আমরা টাকা দিই, তাই আমরা নাক গলাব।’’

Advertisement

কিন্তু অমর্ত্য সেন বুধবার যা বলেছেন, শিক্ষাবিদদের ধারণা, সেটা রাজ্য সরকারের এই নীতির সমালোচনা। বুধবার পার্থবাবু এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। এ দিন কিন্তু তিনি বললেন, তিনিও অমর্ত্যবাবুর কথার সঙ্গে সহমত। অর্থাৎ শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি আধিপত্যের বিরোধী। তবে রাজ্য সরকার তেমনটা করেছে বলে তিনি মনে করেন না।

পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘অমর্ত্যবাবু ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আমরা তো আধিপত্য কায়েম করছি না। টাকা দিয়ে তার খোঁজখবর রাখাটা মোটেই আধিপত্য নয়।’’ ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে টাকা দেবে এটা তো অমর্ত্যবাবুও বলেছেন। এটাও ভাবতে হবে যে সেটা জনগণের টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়কে টাকা দিয়ে যদি বলা হয় কোন খাতে খরচ হয়েছে জানাও, সেটা স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ হয়ে যাবে?’’ ওয়াকিবহাল মহলের মতে, পার্থবাবু তাঁর এই বক্তব্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গটি মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন। ওই নিয়ে আন্দোলন এবং শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় পার্থবাবু তৎকালীন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে বিকাশ ভবনে তলব করেছিলেন। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করেছিলেন শিক্ষাজগতের একাংশ।

এ দিন পার্থবাবুর জবাব শোনার পরে আর্থিক ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার মধ্যে আধিপত্য ফলানোর প্রশ্ন নেই, এ কথা মেনে নিয়েছেন শিক্ষাবিদরাও। কিন্তু তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, রাজ্য সরকার মোটেই শুধু আর্থিক বিষয়ে নজরদারির মধ্যে নিজেকে বেঁধে রাখেনি। এবং সেই নজরদারিও লাগামছাড়া হতে পারে না বলেই তাঁদের মত। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘আর্থিক ব্যাপারে সরকার আইনের মধ্যে থেকে নজরদারি করতে পারে। কিন্তু তার বাইরে যে সমস্ত বিষয় আছে, সে সব ক্ষেত্রেও তো হস্তক্ষেপ চলছে। ছাত্র নির্বাচন বন্ধ করাটা তার মধ্যে একটি।’’ পবিত্রবাবুর ইঙ্গিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার দিকে। এই যাদবপুরেই আগের বছর মুখ্যমন্ত্রী নিজে গিয়ে প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের কথা ঘোষণা করে এসেছিলেন। তার সঙ্গেও আর্থিক নজরদারির কোনও সম্পর্ক ছিল না। রাজ্য সরকার যে ভাবে উপাচার্য মনোনয়নের প্রশ্নে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ধাপে ধাপে বাড়িয়েছে, তার সঙ্গেও টাকাপয়সার যোগ নেই। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু আর্থিক বিষয় নয়, সরকার সমস্ত বিষয়েই হস্তক্ষেপ করছে।’’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য সুগত মারজিত এ দিন পার্থবাবু কী বলেছেন, তা শোনার সুযোগ পাননি। এর আগে ‘সরকারের ইচ্ছায়’ উপাচার্য হয়েছেন বলে প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছিলেন সুগত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নিয়ম ভেঙে টাকা খরচ হচ্ছে কি না তা জানার অধিকার কি সরকারের নেই? সেখানে সরকার হস্তক্ষেপ করলে যদি স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয় তবে ওই স্বাধিকার ভেঙে ছুড়ে ফেলে দেওয়া উচিত।’’ অর্থাৎ তিনিও আর্থিক বিষয়ের মধ্যেই আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

আগের দিন অমর্ত্য সেনের কথাকে সমর্থন করেছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান, তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু। তিনি এ দিন আর এই বিতর্কে অংশ নিতে চাননি। বলেন, ‘‘আমি জয়পুরে রয়েছি। মন্ত্রী কী বলেছেন না জেনে কিছু বলব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন