গোয়েন্দাদের ঘোল খাইয়েই পালিয়েছিল খাগড়াগড়ের কওসর

ছদ্মবেশ ধরতেও সে তুখোড়। আর কাজ? বাংলাদেশে প্রধানত বোমা-মিজান বা বোমারু মিজান নামেই সে পরিচিত। এবং সেই নামেই তার কর্মগত পরিচয় পরিষ্কার!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১২
Share:

—ফাইল চিত্র।

কখনও সে সুমন তো কখনও পলাশ। কখনও হারুন তো কখনও মুন্না। এমনই তার নামাবলি! এবং গা-ঢাকা দেওয়ার কাজেই লাগত এত নাম। ছদ্মবেশ ধরতেও সে তুখোড়। আর কাজ? বাংলাদেশে প্রধানত বোমা-মিজান বা বোমারু মিজান নামেই সে পরিচিত। এবং সেই নামেই তার কর্মগত পরিচয় পরিষ্কার!

Advertisement

অথচ সাদাসিধে গ্রামীণ চেহারা। হাল্কা দাড়িগ‌োঁফ! সাড়ে পাঁচ ফুটের ৩৮ বছরের যুবকটিকে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা যে হন্যে হয়ে খুঁজছেন, কখনওই সেটা আঁচ করতে পারেননি বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বাসিন্দারা।

কওসর বলে পরিচিত যুবকটির ‘অশেষ গুণপনা’ যখন মালুম হল, তত দিনে এ দেশের গোয়েন্দাদের ঘোল খাইয়ে সে ভাগলবা!

Advertisement

খাগড়াগড়ের বোমা কারখানায় ‘জড়িত’ ধৃত পুরুষ-মহিলাদের জেরা করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র গোয়েন্দারা জানতে পারেন, কওসর নামে এক যুবকই মোটরবাইকে এসে ‘মাল’ (বোমা-গ্রেনেড) নিয়ে যেত। কখন কত দেশি গ্রেনেড লাগবে, তার নির্দেশও দিত সে। বোরখা তৈরির কারখানা গড়ার কথা বলে খাগড়াগড়ের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল কওসর। কেউ জানতেই পারেননি, ওই যুবকই এ দেশে জেএমবি-র মডিউলের প্রধান চাঁই। বাংলাদেশের সংগঠনের সঙ্গে এ দেশের শাখার যোগসূত্রও কওসর! খাগড়াগড় বিস্ফোরণের কয়েক মাস আগে, ২০১৪-র ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়ে রোমহর্ষক ঢঙে কওসরকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জেএমবি জঙ্গিরা। কওসরের সঙ্গে ছিল অন্য দুই জঙ্গি— সালাউদ্দিন সালেহিন ওরফে সানি এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ। হাফেজ পরে গুলিযুদ্ধে মারা যায়। কওসর বা সানি ধরা পড়েনি।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আদতে জামালপুরের মেলান্দহের বাসিন্দা মিজান ওরফে কওসর তেজগাঁও পলিটেকনিকের ছাত্র। বিস্ফোরক তৈরি, তার ফাঁদ পাতার কৌশল— দুইয়েতেই চৌকস সে। সেই জন্যই সে জেএমবি-র বোমা-বিশারদ। ২০০৫ সালে ঢাকার চার দলীয় জোট সরকারের শাসন কালের শেষ দিকে মিজানের তৈরি বোমাতেই গোটা বাংলাদেশে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। চট্টগ্রামের হামলায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় সে। খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে মিজান ওরফে কওসরের নামে ইন্টারপোলে ‘রেড কর্নার’ নোটিস জারি করে এনআইএ। তার মাথার দাম ঘোষণা করা হয় পাঁচ লক্ষ টাকা।

আরও পড়ুন: জন্মাষ্টমী এবং এনআরসি ঘিরে রাজ্যে অশান্তির শঙ্কা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের

২০০৯-এ মিরপুরে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী ‘র‌্যাব’ প্রথম বার মিজানের বাড়িতে হানা দিয়ে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক উদ্ধার করে। পরে তাকে ধরলেও বেশি দিন আটকে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ। ময়মনসিংহে পুলিশের প্রিজ়ন ভ্যান থেকে জঙ্গিদের সহায়তায় পালানোর আগে নাশকতার বিভিন্ন ঘটনায় কওসরকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়েছিল। তার পরেই সে ভারতে ঢুকে পড়ে। খাগড়াগড়-কাণ্ডে তার ভূমিকা জানাজানি হওয়ার পরেও কওসর ওরফে মিজান ইচ্ছামতো বাংলাদেশে বা এ দেশে গা-ঢাকা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার, দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তার গতিবিধির কথা জানা গিয়েছে। খাগড়াগড়-কাণ্ডের ঠিক পরেই বীরভূমের নানুর-বোলপুর অঞ্চলে দেখা গিয়েছিল কওসরকে। একটুর জন্য তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

গত কয়েক বছরে এ রাজ্যে নব্য জেএমবি গঠনের মাথা হিসেবেই কওসরকে দেখছেন এনআইএ-র গোয়েন্দাদের একাংশ। ওই সময়ে আইএস-এর সঙ্গেও কওসরের সংস্রবের কিছু আভাস মিলেছে বলে এনআইএ সূত্রের খবর। বুদ্ধগয়ার বিস্ফোরণের সূত্র ধরে ফের তার খোঁজ শুরু হয়। সোমবার ধরা পড়ার আগে বেঙ্গালুরুর কাছে মুন্না নাম ভাঁড়িয়ে বসবাস করছিল সে। ২০১৪ থেকেই সেখানে হকারি করছিল কওসর। কয়েক মাস ধরে তার আসল পরিচয় টের পাননি স্থানীয় বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন