খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প

কেন্দ্র ভর্তুকি বন্ধ করায় রাজ্য বিপাকে

কেন্দ্র খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের নতুন বিনিয়োগে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এ রাজ্যের প্রায় ৫০টি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। রাজ্যের দাবি, প্রকল্পগুলি রূপায়ণ হলে ২৭০ কোটি টাকা লগ্নি হত।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৪
Share:

কেন্দ্র খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের নতুন বিনিয়োগে ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এ রাজ্যের প্রায় ৫০টি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। রাজ্যের দাবি, প্রকল্পগুলি রূপায়ণ হলে ২৭০ কোটি টাকা লগ্নি হত। কর্মসংস্থান হত অন্তত আট হাজার মানুষের। এই পরিস্থিতিতে দফতরের মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রকে চিঠি লিখলে বিষয়টি অন্য গুরুত্ব পাবে।’’

Advertisement

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে কোনও সংস্থা নতুন বিনিয়োগ করলে দুই সরকারের ভর্তুকি দেওয়ার রেওয়াজ বহু দিনের। দফতরের এক কর্তা জানান, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মোট ভর্তুকির ৭৫% অর্থ দিত কেন্দ্র। তার ‘ম্যাচিং গ্র্যান্ট’ হিসাবে ২৫% অর্থ দেয় রাজ্য। এটা এককালীন। মন্ত্রীর অভিযোগ, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রক ভর্তুকি-ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য রাজ্য চিঠি দিলে কেন্দ্র পরিষ্কার জানিয়ে দেয়— নতুন প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দেওয়া আর সম্ভব নয়। এর ফলে রাজ্য সরকারও নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রে তাদের অংশ দিতে পারছে না। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে।’’

অনেকগুলি প্রকল্পের সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে নতুন প্রকল্পে ভর্তুকির ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয় ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় বাজেটে। তার পর থেকে রাজ্য কেন্দ্রকে অনেক বার চিঠি দেয়। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রও রাজ্যের সমস্যা জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০১২-১৭) রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য ৫৬ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিল কেন্দ্র। তার মধ্যে কয়েকটি ধাপে ২২ কোটি টাকার মতো পাওয়া গিয়েছে। বাকিটা মেলেনি। অথচ, রাজ্যে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়ছে বলেই দাবি সরকারের। কী রকম? দফতরের দেওয়া তথ্যের দাবি, এই সরকারের প্রথম দফায় ২০১২-২০১৫ সালের মধ্যে রাজ্যে নতুন বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বড়-মাঝারি-ছোট মিলিয়ে ৬৮টি সংস্থায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। রাজ্য এখন মাছ, মাংস, দুধ-সহ ফল ও সব্জির মতো পণ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পে নতুন বিনিয়োগ টানতে চাইছে। রাজ্যের বক্তব্য, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বড়-মাঝারি বেশ কিছু সংস্থা পণ্য উৎপাদন করলেও আরও বড় মাপের প্রকল্প গড়ার সুযোগ রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হল, এই শিল্পে বৃহৎ বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে রাজ্যে টেনে আনা। আর সেটা করতে হলে সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি দিতেই হবে।

Advertisement

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পর, কয়েকটি রাজ্য নিজেরাই শিল্প সংস্থাগুলিকে ভতুর্কি দিতে শুরু করেছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্য নিজেরা ভর্তুকি দেওয়ার নিয়ম-নীতি তৈরি করে ফেলেছে। কিন্তু রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের যা বাজেট তাতে কেন্দ্রের ভর্তুকির অংশ মেটানো সম্ভব নয়। তাই ফাইল পাঠানো হয়েছে অর্থ দফতরে। রাজ্য একাই পুরো ভর্তুকির টাকা দিয়ে দেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত তারাই নেবে।’’

এর মধ্যেই খানিক আশার আলো দেখছেন দফতরের কর্তারা। কেন্দ্রের ভতুর্কি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দিল্লি হাইকোর্টে কয়েকটি সংস্থা মামলা করেছে বলে জানান এক কর্তা। রাজ্যও সেই মামলায় অংশ নিয়েছে। ওই কর্তার বক্তব্য— ভর্তুকি ফেরাতে বিভিন্ন রাজ্য কেন্দ্রকে চাপ দিচ্ছে। আদালতে মামলাও চলছে। সব মিলিয়ে একটা ইতিবাচক ফল আশা করছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন