রেস্তোরাঁর খাবারে রোগজীবাণু, নেই নজরদার

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত ফুড সেফটি অফিসারেরা স্বাস্থ্য দফতরের অধীন। পদ থাকা সত্ত্বেও এ-হেন অফিসারের ঘাটতিতে সেই স্বাস্থ্য দফতরও উদ্বিগ্ন। ২০০৬ সালে তৈরি কেন্দ্রীয় আইন ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট’ কার্যকর হয়েছে ২০১১ সালে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৭ ১২:০০
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

কী খাবেন আর কী খাবেন না, সেটা নিশ্চয়ই যে যার রুচির ব্যাপার। কিন্তু যেটা খাওয়া হচ্ছে, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেই খাবার তৈরি হচ্ছে কি না, দোকানে-রেস্তোরাঁয় ঘুরে ঘুরে তার উপরে নজর রাখবেন কে বা কারা? তার জন্য ফুড সেফটি বা খাদ্য সুরক্ষা অফিসারদের থাকার কথা।

Advertisement

কিন্তু তাঁরা সত্যিই আছেন কি? হিসেব বলছে, পশ্চিমবঙ্গে খাতায়-কলমে এই অফিসারের সংখ্যা ১৮০। বাস্তবে আছেন মেরেকেটে ৩৫ জন!

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত ফুড সেফটি অফিসারেরা স্বাস্থ্য দফতরের অধীন। পদ থাকা সত্ত্বেও এ-হেন অফিসারের ঘাটতিতে সেই স্বাস্থ্য দফতরও উদ্বিগ্ন। ২০০৬ সালে তৈরি কেন্দ্রীয় আইন ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট’ কার্যকর হয়েছে ২০১১ সালে। ওই আইন অনুযায়ী রাজ্যের খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁগুলিকে নথিবদ্ধ করা এবং তাদের লাইসেন্স দেওয়া এবং বেচাল দেখলে লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ফুড সেফটি অফিসারদের (এফএসও)। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় রাজ্যে তাঁদের সংখ্যা খুবই কম। অথচ পড়শি ঝাড়খণ্ডে এফএসও-র সংখ্যা প্রায় ২৫০ বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

১৭ বছর আগে জন্মানো রাজ্য ঝাড়খণ্ড যা পারে, পশ্চিমবঙ্গে সেটা ঠিক ভাবে করার ব্যবস্থা নেই কেন?

এর কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে যা জানা যাচ্ছে, তা সেই গয়ংগচ্ছ মনোভাব। যা বাংলার কর্মসংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলে মনে করেন অনেকে। খাদ্য সুরক্ষা অফিসারের ঘাটতি কেন? স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এটা তো নতুন আইনে সৃষ্ট পদ। আগে এই পদ ছিল না। এত নতুন পদ তৈরি করে নিয়োগ করতে সরকারের অনুমোদন দরকার। তাতে কিছুটা সময় তো লাগবেই।’’

‘কিছুটা সময়’ মানে কতটা? ওই আইন রূপায়ণের ছ’বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ৫ অগস্ট। ১১ বছর আগে ওই আইন তৈরির সূচনা পর্বেই জানা গিয়েছিল, খাদ্য সুরক্ষায় ফুড সেফটি অফিসারেরা বড় ভূমিকা নিতে চলেছেন। অর্থাৎ প্রায় এক যুগ ধরে কার্যত চুপচাপ বসে ছিল পশ্চিমবঙ্গ! এমনকী যে-অল্প সংখ্যক এফএসও কাজ করছেন, তাঁদের কেউই নতুন ভাবে নিযুক্ত নন। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, ওঁদের সকলেই ছিলেন ১৯৫৪ সালের কেন্দ্রীয় আইন ‘প্রিভেনশন অব ফুড অ্যাডাল্টারেশন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী নিযুক্ত ফুড ইনস্পেক্টর। নতুন আইনে বলা আছে, পুরনো আইনে যাঁরা ফুড ইনস্পেক্টর হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের এফএসও হিসেবে নিয়োগ করা যাবে। যদি এফএসও-পদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ থাকে। রাজ্য এই ধরনের ৩৫ জনকে পেয়েছে। নতুন কাউকে নিয়োগ করেনি।

এই অবস্থায় সম্প্রতি কলকাতা ও লাগোয়া বিভিন্ন পুরসভার অভিযানে ধরা পড়েছে, বহু খাবারের দোকান, এমনকী নামী রেস্তোরাঁতেও নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রান্না হচ্ছে। আগের দিনের তৈরি খাবারে ছত্রাক জন্মেছে। রেফ্রিজারেটর অকেজো। রান্না করা মুরগির ঠ্যাঙে পাওয়া যাচ্ছে কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া, খোয়া ক্ষীরে মিলেছে ফর্মালিন...।

সরেজমিনে এই ধরনের রেস্তোরাঁয় গিয়ে তাদের লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার কথা এফএসও-দের। রান্না করা মুরগির ঠ্যাঙে কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়া, খোয়া ক্ষীরে ফর্মালিনের উৎস কী, তা খুঁজে বার করে ব্যবস্থা নেওয়াও তাঁদের কাজ। কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যায় তাঁরাই নেই। ফল যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে। অর্থাৎ রাজ্যে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। এবং সে-কথা স্বীকার করছেন স্বাস্থ্য দফতরের অনেক কর্তাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন