অরাজকতা চলবে না বিশ্ববিদ্যালয়ে, দরকারে ভাঙব শিক্ষাবন্ধু সমিতি: পার্থ

মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর বারংবার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও শিক্ষার আঙিনায় হাঙ্গামা থামছে না। এবং গোলমালের বেশির ভাগ ঘটনাতেই আঙুল উঠছে শাসক দল তৃণমূলের কর্মী ও ছাত্র সংগঠনের দিকে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় কড়া দাওয়াই প্রয়োগের রাস্তা নিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্ত রাখতে প্রয়োজনে ওখানে শিক্ষাবন্ধু সমিতির সংশ্লিষ্ট শাখা ভেঙে দেওয়া হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫
Share:

মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর বারংবার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও শিক্ষার আঙিনায় হাঙ্গামা থামছে না। এবং গোলমালের বেশির ভাগ ঘটনাতেই আঙুল উঠছে শাসক দল তৃণমূলের কর্মী ও ছাত্র সংগঠনের দিকে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় কড়া দাওয়াই প্রয়োগের রাস্তা নিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্ত রাখতে প্রয়োজনে ওখানে শিক্ষাবন্ধু সমিতির সংশ্লিষ্ট শাখা ভেঙে দেওয়া হবে।

Advertisement

শিক্ষা শিবির ও শাসক দল সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল-সমর্থক কর্মী সংগঠন শিক্ষাবন্ধু সমিতি প্রায়ই গোলমাল পাকাচ্ছে, জড়িয়ে পড়ছে গোষ্ঠী-কাজিয়ায়। কেন তাদের রাশ টানা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন করা হয়েছিল শিক্ষামন্ত্রীকে। জবাবে পার্থবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূলের মহাসচিব হিসেবেই বলছি, শিক্ষাবন্ধু সমিতির নাম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অরাজকতা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যাচর্চার জায়গা। অরাজকতার জায়গা নয়।’’

ক্ষমতায় আসার ঠিক আগে ও পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছিলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনীতি ও হিংসা, ঘেরাও-বিক্ষোভ বরদাস্ত করা হবে না। কিন্তু তৃণমূল-শাসনের প্রায় ছ’বছরে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গন, বিশেষত ঐতিহ্যবাহী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দৌরাত্ম্য নয়, কর্মীদেরও নিত্যনতুন গোলমালে জড়িয়ে পড়ার নজির অজস্র। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসক দলের সমর্থক কর্মীদের কাজকর্মে তিতিবিরক্ত হয়েই পার্থবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলের মহাসচিব হিসেবে তিনি অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবেন।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক মাস ধরেই তৃণমূল-সমর্থক কর্মচারীদের মধ্যে বারবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে চলছে ঘেরাও-বিক্ষোভ। গত সপ্তাহেই বিভিন্ন পেশাগত দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্যেরা উপাচার্য আশুতোষ ঘোষকে ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, সে-দিনের সিন্ডিকেট বৈঠক শুরু হতে এক ঘণ্টারও বেশি দেরি হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের ব্যূহ ভেঙে উপাচার্য নিজের দফতর ছেড়ে সিন্ডিকেট কক্ষে যেতেই পারছিলেন না। উপাচার্যের ঘরে শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্যদের প্রবল বিশৃঙ্খলার খবর যথাসময়ে পৌঁছে যায় শিক্ষামন্ত্রীর কানে। যদিও সে-দিন ঘেরাওয়ের কথা অস্বীকার করেছিলেন শিক্ষাবন্ধু সমিতির কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুবল শীল। তাঁর দাবি ছিল, ঘেরাও-টেরাও নয়। পেশাগত দাবিদাওয়া পেশ করতেই তাঁরা নাকি এক ঘণ্টারও বেশি সময় দল বেঁধে উপাচার্যের ঘরে ছিলেন!

উপাচার্যকে ঘেরাও করা ছাড়াও কর্মচারীদের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে আকছার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের খবর, শাসক দলের ছাতার নীচে প্রতিটি গোষ্ঠীই আধিপত্য কায়েম করার জন্য হুটহাট গোলমাল পাকিয়ে তাল ঠুকতে থাকে। তাতে শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপাচার্যকে ঘেরাওয়ের এক দিন পরে, গত শুক্রবার শিক্ষাবন্ধু সমিতির এক নেতার বিরুদ্ধে এক প্রবীণ কর্মচারীকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এমন ঘোরালো হয়ে ওঠে যে, উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে দফতর ছেড়ে নীচে নেমে আসতে হয়।

ঠিক সময়ে শিক্ষামন্ত্রীর কানে সেই পৌঁছে যায় বিশৃঙ্খলার সেই বৃত্তান্তও। পার্থবাবু জানান, গোলমালে অভিযুক্ত সকলকেই তিনি ডেকে পাঠাচ্ছেন। ‘‘সব খবরই পাচ্ছি। তৃণমূলের নাম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের কাজকর্ম বরদাস্ত করব না,’’ হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন