— প্রতীকী চিত্র।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) প্রক্রিয়া চলাকালীন মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের ‘সংশয়কে’ সামনে রেখে ইতিমধ্যেই বিজেপিকে নিশানা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আজ, শনিবার নদিয়ার তাহেরপুরে সম্ভাব্য সভা থেকে কোনও বার্তা দেন কি না, সে দিকে তাকিয়ে নানা পক্ষ। এর মধ্যেই এসআইআর, নাগরিকত্বের প্রশ্নে বিজেপির বিরুদ্ধে ফের মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস-সহ অন্যেরা। পক্ষান্তরে, উদ্বাস্তুরা যাতে দ্রুত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) আবেদন করেন, সেই আর্জি জানিয়েছে বিজেপি।
গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি সুব্রত ঠাকুরের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে মতুয়াদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সুব্রত বলেছেন, “সিএএ-তে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হলে ২০১৪-র ৩১ ডিসেম্বরের আগে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে আসতে হয়েছে, এটা বলা হয়েছে। অথচ, এসআইআর-এর শুনানিতে যে নথিগুলি চাওয়া হচ্ছে, সেগুলির ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে কি না, তা নির্বাচন কমিশন পরিষ্কার করে জানায়নি। সমস্যা হতে পারে।” সিএএ-তে আবেদন করলেও শুনানির আগে নাগরিকত্ব মেলা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন গোষ্ঠ মণ্ডল, গণেশ বিশ্বাস-সহ কয়েক জন মতুয়া।
এসআইআর-প্রক্রিয়া ও বিজেপিকে নিশানা করেছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, “এসআইআর-এর নামে উদ্বাস্তু, মতুয়া, নমঃশূদ্রদের নাম বাদ পড়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে মোদী এসে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে চলে যাবেন।” যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের পাল্টা দাবি, “কোনও হিন্দু উদ্বাস্তু ভোটারের নাম ভোটার তালিকার বাইরে থাকবে না। মতুয়া, নমঃশূদ্রদের নাগরিকত্বের দাবি সিএএ দিয়ে পূরণ করা হয়েছে।” দ্রুত উদ্বাস্তুদের সিএএ-তে ফর্ম পূরণ করার জন্যও আর্জি জানিয়েছেন শমীক।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে ফের ‘অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার’ অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও অনুপ্রবেশ-প্রশ্নেই বিজেপিকে পাল্টা নিশানা করেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “বিজেপি যে প্রচার অনুপ্রবেশ নিয়ে করেছে, খসড়া ভোটার তালিকায় অন্তত তা দেখা যায়নি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “প্রান্তিক, গরিব মানুষের অধিকার কাড়তে চায় আরএসএস। এই জন্য কমিশনকে ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে। মতুয়া, পরিযায়ী শ্রমিক, উদ্বাস্তুদের নাম সব থেকে বেশি ম্যাপিংয়ে পাওয়া যায়নি।” কার্যত এই সুরেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে ‘বিজেপির অলিখিত সভাপতি’ বলে কটাক্ষ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার! পশ্চিমবঙ্গে এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীরও বলেছেন, “প্রতি বছর দু’বার ভোটার তালিকার সংশোধন হওয়ার পরেও এখানে ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার নাম-বাদের মধ্যে প্রায় ২৪ লক্ষ মৃত কেন? কমিশন অপদার্থতার প্রমাণ দিয়েছে। আর কত জন অনুপ্রবেশকারী পাওয়া গেল?”
মতুয়া-অধ্যুষিত উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগর থেকে নদিয়ার ধুবুলিয়া পর্যন্ত শনি ও রবিবার, দু’দিনের ‘ভোটাধিকার যাত্রা’র ডাক দিয়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন। দলের রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদারের অভিযোগ, “নির্বাচন কমিশন জন-বিরোধী কায়দায় এসআইআর করছে। মতুয়া, নমঃশূদ্র, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, প্রান্তিক মানুষেরা নথি জোগাড় করতে গিয়ে দিশাহারা।” পাশাপাশি, মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন এসআইআর-প্রক্রিয়ার শুনানি-পর্ব করা চলবে না বলে দাবি তুলেছে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেছেন, “পরীক্ষা চলাকালীন বিভিন্ন দায়িত্ব সামালবেন শিক্ষকেরাই। অনেক ক্ষেত্রেই শুনানি হবে স্কুলগুলিতে। পরীক্ষার ব্যাঘাত ঘটিয়ে শুনানি-পর্ব চালানো যাবে না।”
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে