দার্জিলিঙে মন্ত্রিসভা বৈঠকের দিন মোর্চা-পুলিশ সংঘর্ষ। ফাইল চিত্র।
সকাল থেকেই সকলের নজর ছিল নবান্নের দিকে। বিকেলে ছোট ছোট জমায়েতে আলোচনা শুরু হয়েছে, কবে নাগাদ বন্ধ উঠতে পারে। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ বন্ধ এখনই উঠছে না বলে জানানোয়, কিছুটা আশাভঙ্গ হয়েছে। তবে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের ধারণা, আলোচনা শুরু হওয়ায় আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ফের ছন্দে ফিরবেই।
এই মনোভাবের জন্যই মঙ্গলবার সকাল থেকে পাহাড়ের মেজাজ ছিল ভাল। তাই দিনের শেষে বন্ধ না উঠলেও ইতিউতি দোকানপাট খুলে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। রাস্তায় দেখা গিয়েছে ছোট গাড়ি। পণ্যবোঝাই মিনি ট্রাক পাহাড়ি পথে যাতায়াত করতে দেখেও কেউ বাধা দেননি। সুকনার অদূরে রোহিণী যাওয়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে নবীন ছেত্রী বললেন, ‘‘আলোচনা শুরু হলে বন্ধ উঠবে সেটা তো গুরুঙ্গই বলে দিয়েছিলেন। রাজ্য তো ডেকে আলোচনা শুরু করেছে। আবার বসবে।’’ গৌতম লামা বলেন, ‘‘কেন্দ্র-রাজ্যের আলোচনাও হতে পারে। কাজেই বন্ধ উঠবেই। হয়তো আর ক’টা দিন লাগবে।’’
আরও পড়ুন: বন্ধ তুলছি না, হুঙ্কার গুরুঙ্গের
মঙ্গলবার দুপুর থেকেই পাহাড়ের চোখ ছিল নবান্নের দিকে। কালিম্পঙে ডম্বর চকে প্রায় দু’শো জনের ভিড়। কেউ থানার মধ্যে থাকা টিভিতে চোখ রাখতে ব্যস্ত। আবার কেউ আশেপাশের হোটেলে ঢুকে পড়েছেন। বৈঠক শেষ হতে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী, পরে বিনয় তামাঙ্গের বক্তব্য শোনার পরে অত্যুৎসাহীরা দু-একজন হাততালিও দিয়েছেন। কিন্তু যখন পর্দায় হরকাবাহাদুর ছেত্রী ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবিতে সওয়াল করেছেন, হাততালিতে ভেসে গিয়েছে ডম্বর চক।
একনজরে পাহাড় পরিস্থিতি
৮ জুন: দার্জিলিঙে মন্ত্রিসভার বৈঠক। মোর্চা-পুলিশ সংঘর্ষ, আগুন, মন্ত্রীরা আটকে দীর্ঘ ক্ষণ।
১২ জুন: অনির্দিষ্ট কালের বন্ধ ডাকল মোর্চা। দু’দিন পরে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন সমন্বয় কমিটি (জিএমসিসি) তৈরি।
১৭ জুন: সিংমারি, চকবাজারে মোর্চার মিছিল ঘিরে উত্তেজনা। আগুন, গুলি। নিহত ৪।
২২ জুন: শিলিগুড়িতে রাজ্যের ডাকা সর্বদলে নেই পাহাড়ের কোনও প্রধান দলই।
৮ জুলাই: পাহাড়ে ফের সংঘর্ষ, মৃত ৪। আলোচনার ডাক মমতার।
২৫ জুলাই: দিল্লিতে মমতা-রাজনাথ বৈঠক ঠিক হয়, পাহাড় নিয়ে কথা বলবে রাজ্যই।
২২ অগস্ট: জিএনএলএফের চিঠির প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ২৯ অগস্ট সর্বদল বৈঠক ডাকলেন মমতা।
২৭ অগস্ট: বিনয় তামাঙ্গের নেতৃত্বে মোর্চা যাবে বৈঠকে। গুরুঙ্গের ক্ষোভ।
২৯ অগস্ট: মোর্চা, জাপ, জিএনএলএফের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর। বন্ধ তোলা নিয়ে আলোচনার আশ্বাস পাহাড়ের প্রতিনিধিদের।
দার্জিলিং সদরে অবশ্য তেমন দোকানপাট খোলেনি। কিন্তু, ম্যাল চৌরাস্তায় জটলা দেখা গিয়েছে। এরপরে কী হবে, গুরুঙ্গ কী করবেন, বিনয়ই বা কোন রাস্তা ধরবেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বৈঠকের খবরাখবর আদানপ্রদান হতেই কয়েকজনকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা গেল। কয়েকজন গাড়ির চালক তখনই জানিয়ে দিলেন, বুধবার সকালে তাঁরা শিলিগুড়িতে নামবেন। কারণ, গাড়ির কিছু যন্ত্রাংশ কিনতে হবে। দর্জিলিঙের চকবাজারে যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছিল সেখানেও খুচখাচ দোকান খোলা দেখা গিয়েছে।
সিংমারিতে মোর্চার পার্টি অফিসে বসে বিকেল থেকেই ফোনে খবর আদানপ্রদান করেছেন মোর্চা সমর্থকেরা। তবে গুরুঙ্গ গোপন ডেরায় থাকায় নতুন নেতা বিনয় তামাঙ্গের প্রসঙ্গ উঠতেই মোর্চার কর্মীদের মুখে কুলুপ। যেমন মিরিক পুরসভায় সকেট বোমা পড়া নিয়েও তেমন কোনও কথাবার্তা কেউ বলতে চাননি।
তবে কার্শিয়াং, সুকনা, মিরিকে কিন্তু অনেক মোর্চা সমর্থকই জানিয়ে দিলেন, বিনয়ের হাতে নেতৃত্ব গেলে দুমদাম ফতোয়া জারির প্রবণতা কমতে পারে। তাঁরাও আশা করছেন, বন্ধ তাড়াতাড়ি উঠতে পারে।