বকেয়া মেটেনি, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ

গত দশ বছর ধরে তেলের প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা বকেয়া বিল না মেটানোয় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) একাধিক বাস, জিপ, গাড়ি এবং কম্পিউটার সেট বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এরমধ্যে নিগমের উত্তরবঙ্গের একাধিক ডিপোর বাস ছাড়াও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ব্যবহারের কোচবিহারের গাড়িটিও রয়েছে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০২:৫৬
Share:

গত দশ বছর ধরে তেলের প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা বকেয়া বিল না মেটানোয় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) একাধিক বাস, জিপ, গাড়ি এবং কম্পিউটার সেট বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এরমধ্যে নিগমের উত্তরবঙ্গের একাধিক ডিপোর বাস ছাড়াও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ব্যবহারের কোচবিহারের গাড়িটিও রয়েছে। বিহারের এক তেল সরবরাহকারী সংস্থা মামলার ভিত্তিতে বিহারের বেগুসরাই-র আদালত পাঁচ বছর আগেই ওই রায় দিয়েছিল। কিন্তু তা শিলিগুড়ি আদালতের মাধ্যমে নির্দেশ কার্যকারী করতে মাঝের এই পাঁচ বছর চলে যায়। অবশেষে গত ৪ মে শিলিগুড়ির সিভিল জজ (সিনিয়র ডিভিশন) নীলাঞ্জনা দে দ্রুত আদালতের নির্দেশ কার্যকারী করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটকে সাহায্য করার জন্য পুলিশ ফোর্সের প্রয়োজনীয় টাকাও আবেদনকারী সংস্থাটি জমা করে দিয়েছে।

Advertisement

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই অস্বস্তিতে পড়েছেন এনবিএসটিসি কতৃর্পক্ষ। সংস্থার চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বাম আমলের অব্যবস্থাকেই এই অবস্থায় জন্য দায়ী করেছেন। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘বাম আমলে সংস্থায় যা হয়েছে, ভাবাই যায় না। বহু মামলা, বকেয়া, নিয়ম ভেঙে নিয়োগ সব হয়েছে। এই মামলার বিষয়টি আমরা দেখছি। ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের সঙ্গে কথা বলছি। সমস্যার সমাধান করা হবে।’’ নিগম সূত্রের খবর, নব্বই-এর দশকে নিগমের বহু বাস ভিন রাজ্যের রুটে চলত। বিহারের দ্বারভাঙা, পটনা, মজফরপুর, ছাপড়া এবং রাঁচি রুটে বাস ছিল। বর্তমানে এরমধ্যে শিলিগুড়ি থেকে রাঁচি এবং দিনহাটা থেকে মজফরপুরের বাসটি ছাড়া অন্য রুটগুলি লোকসান, বাসের অভাবে বন্ধ। ১৯৯৮ সালে বিহারের বেগুসরাই-র ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটি পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংস্থার তেল এবং লুব্রিক্যান্ট সরবরাহের চুক্তি হয়। ঠিক হয়েছিল, বাসের চালকেরা ডিপো ইনচার্জের সই-সহ তেল বা লুব্রিক্যান্টের স্লিপ জমা দিলেও পাম্প কর্তৃপক্ষ তা দিয়ে দেবেন। প্রতিমাসের ৫ তারিখের মধ্যে বকেয়া মেটানো হবে বলে চুক্তিতে ঠিক হয়। বেশ কয়েক বছর ঠিকঠাক চললেও ২০০৪ সালে সমস্যার সূত্রপাত।

পাম্প সংস্থাটির বকেয়া গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকার মত। সংস্থাটির দাবি, শিলিগুড়ি, কোচবিহার, দিনহাটা, আলিপুরদুয়ার ডিপো মিলিয়ে ওই বকেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। একাধিক বার চিঠি, আইনজীবীর নোটিশ পাঠানোর পর শিলিগুড়ি বাদে অন্য ডিপোর কিছু কিছু নতুন, পুরানো বকেয়া মেটানো হলেও ওই সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা বকেয়াই থেকে যায়। শেষে ২০০৫ সালের ২৬ এপ্রিল সংস্থাটি বিহারের বেগুসরাই আদালতে মামলা করে। পাঁচ বছর মামলা চলার পর ২০১০ সালের মার্চ মাসে আদালত এনবিএসটিসি-র সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে টাকা উদ্ধারের নির্দেশ দেয়। পাম্প কতৃর্পক্ষের তরফে হরিশচন্দ্র সিংহ জানান, আমরা রাজ্যের আদালতের নির্দেশ কার্যকরী করার জন্য শিলিগুড়ি আদালতে এসে আবেদন করি। সম্প্রতি আদালত নিগমের বাস গাড়ি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে। কোনও সরকারি সংস্থাকে তেল দিয়ে এমন ভোগান্তিতে পড়ব তা ভাবতেই পারিনি।

Advertisement

হরিশবাবুর আইনজীবী সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘আদালতও নিগমের জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ দিয়ে হরিশবাবুদের হেফাজতে দিতে নির্দেশ দিয়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশকে সাহায্যের জন্য দুই দফায় প্রায় ৫০ হাজার টাকাও জমা করে দিয়েছি। আগামী ৯ জুলাই-র মধ্যে নির্দেশ কাযর্করী করতেও বলা হয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেছেন, ‘‘আদালতের বিষয়গুলি আমাদের লিগ্যাল সেলে প্রথমে দেখে। এই বিষয়টি দেখতে হবে। তবে আদালতের কোনও নির্দেশ থাকলে তা অবশ্যই মানা হবে।’’

গত ৪ মে শিলিগুড়ি আদালতের রায়ের পর নিগমের অন্দরে বিষয়টি নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়। কীভাবে বকেয়া মেটানো হবে তা নিয়ে এদিনও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সুবল চন্দ্র রায় নিগমের অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সুবলবাবু জানান, নানা কারণে বকেয়া সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা মত হয়। একসময় আমরা ৮ লক্ষ টাকার চেক আদালতে জমা করেছিলাম। কিন্তু তা সংস্থাটির অ্যাকাউন্ট জমা হয়নি। আমরা তা দীর্ঘদিন জানতাম না। ওই টাকা সুদে আসলে প্রায় ১৮ লক্ষ হয়ে গিয়েছে। আমরা আদালয়ের কাছে সময় চাইছি। বকেয়া মেটানোর জন্য যা করনীয় করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন