নির্মল হয়েছে মালদহ জেলা। এ জন্য গত মঙ্গলবার গাজোলের হাইস্কুল মাঠে ঘটা করে অনুষ্ঠানও হয়েছিল। সেখানে হাজির ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে যাঁদের সাহায্যে প্রশাসন বাড়ি বাড়ি শৌচাগার তৈরি করিয়েছিল, ব্লকে ব্লকে থাকা সেই স্যানিটারি মার্টগুলিরই নাকি প্রায় ৪০ কোটিরও বেশি টাকার বকেয়া এখনও মেটায়নি প্রশাসন।
দু’বছর ধরে তাঁদের কাজও বন্ধ। বকেয়া আদায়ের জন্য মার্টগুলির তরফে সমন্বয় কমিটি গড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এ নিয়ে আন্দোলনে নামারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। প্রশাসন অবশ্য দাবি মানতে নারাজ।
সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান কর্মসূচিতে মালদহ জেলার গ্রামীণ এলাকার যে বাড়িগুলিতে শৌচাগার নেই, সেই বাড়িগুলিতে সরকারের ভর্তুকিযুক্ত শৌচাগার তৈরির কাজ বাম আমল থেকেই চলছে। ব্লকে একটি করে স্যানিটারি মার্ট গড়ে তাঁদের মাধ্যমেই সেই শৌচাগার তৈরি হত। তৃণমূল সরকার আসার পর একই পদ্ধতিতে সেই কাজ চলছিল। প্রকল্পের নামকরণ হয় নির্মল বাংলা মিশন। তাতে উপভোক্তা ৯০০ টাকা দিতেন এবং সরকারের তরফে ১০ হাজার টাকা ভর্তুকি দিয়ে সেই শৌচাগার তৈরি হত। মালদহ জেলায় এই কাজের তদারকির দায়িত্ব ছিল জেলা পরিষদের উপর। শৌচাগার তৈরির কাজ সামাল দিতে ব্লকে একটি করে স্যানিটারি মার্ট থাকলেও অনেকক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্যানিটারি মার্টও চালু করা হয়েছিল।
জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের জুন মাস নাগাদ জেলা পরিষদের তরফে এক নির্দেশিকা জারি করে মার্টগুলির সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই থেকে শুরু হয় কমিউনিটি লেড টোটাল স্যানিটেশন (সিএলটিএস) পদ্ধতিতে শৌচাগার তৈরির কাজ। অর্থাৎ উপভোক্তা নিজেই নিজের শৌচাগার তৈরি করবে, পরে সেই বাবদ সাত হাজার টাকা সরকারের থেকে পাবেন।
প্রশাসনের দাবি, ২০১৫ সালে জেলায় যে সমীক্ষা হয়েছিল তাতে ৪ লক্ষেরও বেশি বাড়ি শৌচাগারহীন ছিল এবং সেগুলি সিএলটিএস পদ্ধতিতে তৈরি করে জেলাকে নির্মল করা হয়েছে।
জেলার স্যানিটারি মার্টগুলির সমন্বয় কমিটির সম্পাদক শেখ সারেক জানান, ২০১৫ সালের জুন মাসে আচমকা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে স্যানিটারি মার্টগুলির প্রচুর সিমেন্ট, বালি ও শৌচাগার তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম পড়ে থেকে নষ্ট হয়। যে শৌচাগারগুলি তৈরি করা হয়েছিল তার জন্য গত দু’বছরে কিছু বিল মেটানো হলেও প্রায় ৪০ কোটি টাকা এখনও বকেয়া পড়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘জেলাকে নির্মল করার কাজে আমরাই ছিলাম অগ্রণী। অথচ আমাদের বকেয়া মিটল না। আমরা দেনার দায়ে জর্জরিত। এ দিকে জেলাকে নির্মল ঘোষণা করা হল। দু’বছর ধরে জেলা প্রশাসনকে বকেয়া মেটানোর দাবি জানানো হচ্ছে। এ বার মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আন্দোলনে নামা হবে।’’
মালদহ জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক মলয় মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা বেসলাইন সার্ভের হিসেব অনুযায়ী ৪ লক্ষেরও বেশি শৌচাগার সিএলটিএস পদ্ধতিতে করে জেলাকে নির্মল করেছি। মার্টগুলি শৌচাগার তৈরির জন্য বিল পেশ করেছিল তার মধ্যে যে শৌচাগারগুলির অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে সেগুলির বিল মেটানো হয়েছে। যে কাজ হয়নি তার বিল মেটানোর দায়বদ্ধতা আমাদের নেই।’’