রসিদ ছাড়া ফাইনের টাকা দিতে না চাওয়ায় প্রতিবন্ধী ছেলে-সহ এক পরিবারকে চরম হেনস্থার অভিযোগ উঠল রেল পুলিশ ও রেল কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে। শুক্রবার বিকেলে তেভাগা এক্সপ্রেসে ঘটনাটি ঘটে মালদহের একলাখি স্টেশন থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর স্টেশন পর্যন্ত। ওই কর্মীদের দাবি মতো ৪০০ টাকা না দেওয়ায় তাঁদের কয়েক দফায় নিগৃহীত হতে হয় বলে শনিবার অভিযোগ করেন বালুরঘাটের শিবতলি এলাকার বাসিন্দা ওই ট্রেনের যাত্রী স্বপন সরকার। রেলের পাশাপাশি তিনি পুলিশের কাছেও অভিযোগ করবেন বলে জানান।
রেলপুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় বীমাকর্মী স্বপনবাবু তাঁর ১৭ বছরের মুখ ও বধির ছেলের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় গিয়েছিলেন। শুক্রবার তাঁরা দু’জন এবং তাঁর স্ত্রী ও ১২ বছরের ছোট ছেলেকে নিয়ে চিৎপুর থেকে তিনি তেভাগা এক্সপ্রেসে ওঠেন। স্বপনবাবুর দাবি, সংরক্ষিত আসনে টিকিট কেটে একটি আসন তাঁদের নিশ্চিত হয়েছিল। বাকি তিনটি আসন ছিল ওয়েটিংয়ে। ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় চিৎপুরে টিটি-র পরামর্শে তিনি ছেলেকে নিয়ে ট্রেনের প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় উঠেছিলেন। আর তাতেই তিনি নিয়ম ভেঙেছেন বলে দাবি করে ৪০০ টাকা ফাইন চেয়ে তাঁর উপর চাপ বাড়ানো হয় বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, বিনা রসিদে স্বপনবাবু ফাইন দেবেন না বলে জানালে তাঁদের ওই কামরায় একা পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি, হুমকি-সহ চরম অপমান করেন রেলকর্মীরা। রাতে বালুরঘাট স্টেশনে নেমে গোটা ঘটনাটি তিনি ভারপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার বঙ্কিম সরকারকে জানান। দু’জন রেলরক্ষী, বুনিয়াদপুরের স্টেশন ম্যানেজার-সহ বেশ কয়েক জন রেলকর্মীর বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। স্টেশন ম্যানেজার অভিযোগ পেয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।
এ দিন অবশ্য স্বপনবাবু অনলাইনে রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করেন, প্রতিবন্ধী কামরায় অসুস্থ ছেলের সঙ্গে এক জনই থাকতে পারবেন বলে নিয়ম ভাঙার দাবি করে প্রথমে একলাখিতে দু’জন আরপিএফ কর্মী ৪০০টাকা ফাইন চান। বৈধ টিকিট সঙ্গে রয়েছে দেখিয়ে কামরায় অত্যাধিক ভিড়ের বিষয়টি তাদের জানানো হয়। কিন্তু তারা ক্রমাগত টাকার জন্য চাপ দিতে থাকায় তখন রাজি হয়ে রসিদ দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘এতে ওই দু’জন প্রচণ্ড ক্ষেপে হুমকি দিয়ে কাকে যেন ফোন করে। এর পর বুনিয়াদপুর স্টেশনে আসতে সেখানকার স্টেশন ম্যানেজার সহ কয়েক জন উর্দি ছাড়া যুবক কামরা উঠে আমাদের ধমকাতে থাকে। পুরো যাত্রপথের ফাইন দাবি করে। স্বপনবাবু মত না বদলালে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে প্রায় মারমুখি হয়ে ওঠে দলটি। জোর করে স্ত্রীকে ওই কামরা থেকে নামিয়ে পাশের মহিলা কামরায় যেতে বাধ্য করা হয়। এবং তারা ‘অনেক কিছু করতে পারে’ বলে হুমকি দিতে থাকে।’’
সে সময় এক বয়স্ক রেলকর্মী এসে দলটির আচরণে আপত্তি জানালে তারা শাসিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ। উর্দিধারী সম্ভবত বুনিয়াদপুরের স্টেশন ম্যানেজার মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে স্বপনবাবু দাবি করেন। এর আগেও বালুরঘাট-একলাখি পথে এক শ্রেণির রেলকর্মীর বিরুদ্ধে যাত্রী হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে বলে স্বীকার করে বালুরঘাট স্টেশনের এক রেলকর্মী বলেন, ‘‘কোনও যাত্রী লিখিত অভিযোগ করেন না দেখে ওই দলটির দিনদিন সাহস বেড়ে গিয়েছে।’’ পাশাপাশি সিগন্যাল বিহীন বালুরঘাট লাইনে যাত্রী সুরক্ষার ব্যবস্থায় অবহেলা নিয়েও বাসিন্দারা অভিযোগে সরব হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএমকে ফোন করেও কোনও জবাব মেলেনি।