মালদহ শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে জলের কষ্ট। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতিশ্রুতি চাই না, চাই পরিস্রুত জল
সবে তো মার্চের শেষ। গ্রীষ্ম অনেক দূরে। এরই মধ্যে পাইপের জলের রেখা সরু হতে শুরু করেছে মালদহ শহরে। নলকূপ বেশির ভাগই অকেজো হয়ে পড়েছে। যদিও বহু ওর্য়াডে নলকূপ নিয়ে তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই। বিভিন্ন ওর্য়াডে রয়েছে জলাধার। সূচনা পর্বে সে সব জল কেন্দ্রে বোতল হাতে মানুষের প্রবল ভিড় ছিল। বর্তমানে অপরিচ্ছন্ন জলের আশঙ্কায় সেখানে ভিড় নেই। যাদের উপর কেন্দ্র গুলির তদারকির এবং দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁরা অন্য কাজে ব্যস্ত।
জল সমস্যাকে আরও জটিল করেছে ফ্ল্যাট কালচার। বিজ্ঞান বলে, ভূস্তরের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, দুটি জল তোলা পাম্পের মধ্যে ব্যবধান হওয়া উচিত ২০০ থেকে ৫০০ ফুট। না হলে জলস্তর নেমে যায়। সেই জল আবার ভয়ঙ্কর আর্সেনিক দূষিত হতে পারে। কিন্তু পরিবেশ চিন্তা যেন হারিয়ে যাচ্ছে। লজ্জা করছে, পরিবেশ চিন্তা বলতে। বাস্তবে পরীক্ষার খাতায় এবং নেতাদের ভাষণে পরিবেশ চিন্তা রয়েছে বলে মনে হয়। ফলে জলস্তর দিন দিন নীচে নামছে।
ইংরেজবাজার পুরসভার ৭ নম্বর ওর্য়াডের বাসিন্দা আমি। শহরের মধ্যে সব থেকে বড়ো ওর্য়াড। একই সঙ্গে ওর্য়াডটি গুরুত্বপূর্ণও। এই ওর্য়াডে পুর ভোটার ৪৬৭৯ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে পাঁচটি। এলাকায় হাই স্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে ৩টি, প্রাইমারি স্কুল রয়েছে ৬টি, নার্সিং হোম ২টি, সংশোধনাগার, পুলিশ লাইন, দুটি বাসস্ট্যান্ড, বাজার, হাওয়া অফিস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ওর্য়াডে। এ ছাড়া এই ওর্য়াডেই জলকল রয়েছে। তবুও জলের সমস্যা মেটেনি।
বর্তমানে এই ওর্য়াডে পরিস্রুত জলাধারের সংখ্যা রয়েছে পাঁচটি, টিউবওয়েল রয়েছে ছয়টি, রাস্তার কল ১১টি। পুরসভা থেকে দিনে তিনবার দল সরবরাহ করে। যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। এ ছাড়া জলের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় ওর্য়াডবাসীর দুর্ভোগের চিত্র পাল্টায় না। ভোট এলেই সমস্যা নিয়ে রাজনেতিক দলের নেতা নেত্রীরা এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। মানুষ তাদের প্রতিশ্রুতি শুনে ভোট দেন। তবে ভোট ফুরোলে সমস্যার কোন সমাধান হয় না। তাই আমার আর্জি, প্রতিশ্রুতির বদলে যাতে জলের পরিষেবা ভালো দেওয়া হয় সে দিকে খেয়াল রাখা হোক।
সোমশঙ্কর সিংহ, অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, মকদমপুর, ইংরেজবাজার।
(২)
গরম পড়লে পানীয় জলের সমস্যা এখন একা গ্রামের নয়, মালদহ শহরেরও নিত্যদিনকার সঙ্গী। গ্রামের মহিলাদের কলসি কাঁখে নিয়ে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে জল আনতে যাওয়ার ছবি এখন শহরেরও পরিচিত দৃশ্য। শহরের বাসিন্দারা ব্যাগের ভেতর জলের জার নিয়ে জলের সন্ধানে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরতে থাকেন। পানীয় জল পাওয়ার জন্য এমন ভাবেই ছোটাছুটি করতে হয় ইংরেজবাজার পুরসভার ১৪ নম্বর ওর্য়াডের বাসিন্দাদেরও। এই ওর্য়াডে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪৫০০ জন। তবে পর্যাপ্ত জলাধার, কলের অভাব রয়েছে। অভাব বলা ভুল, সে সংখ্যা এতই কম, যে জল কষ্টের এমন দৃশ্য রোজ দেখতে হয় আমাদের। বিদায়ী কাউন্সিলরের অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ওর্য়াডে তিনটি জলাধার রয়েছে। সুকান্ত মোড়ে, বাঁশ বাড়ি ও নিউ বাঁশ বাড়িতে। এই জলাধারগুলির কোনওটির বয়স চার, আবার কোনওটির তিন। উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে সেগুলি আদৌ পরিষ্কার হয়েছে কিনা, তা সাধারণ মানুষের অজ্যনা। জলাধার গুলির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো না করার ফলে নলগুলি অকেজো হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া এলাকায় সাত-আটটি টিউবওয়েল থাকলেও সেগুলি ভেঙে গিয়েছে।
এ ছাড়া ওয়ার্ডে কলের সংখ্যা প্রায় ২০টি। সাধারণ মানুষের জন্য জলের ব্যবস্থা বলতে এটুকুই। পুরসভা থেকে বাড়ি বাড়ি জল পরিষেবার জন্য কর বাড়ানো হয়েছে। এ দিকে, জল দেওয়ার সময়সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিন বার করে জল দেওয়া হলেও তা ঘণ্টা খানেকের জন্য। আর জলের যা গতি, সে প্রসঙ্গ না তোলাই ভাল। সামন্য পানীয় জলের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছি আমরা। এখন ভোট এসে যাওয়ায় সকলের দেখা মিলছে। বাড়িতে বাড়িতে আসছেন তাঁরা। যা প্রতিশ্রুতি তাঁরা দিচ্ছেন, তার এক ভাগ কাজ করলেই জল সমস্যা থেকে অনেকটা নিস্তার পাওয়া যাবে।
মৃণাল চৌধুরী, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক, ১৪ নম্বর ওর্য়াড, বাঁশবাড়ি।