ডাকঘরে পড়ে থাকছে অনেক টাকা, উদ্বেগ

৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের সেই সব বাতিল নোট বদল করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি, বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্টে সেই সব নোট জমাও নেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

রায়গঞ্জ মুখ্য ডাকঘরের সামনে ভিড়। — ফাইল চিত্র

৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের সেই সব বাতিল নোট বদল করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি, বাসিন্দাদের অ্যাকাউন্টে সেই সব নোট জমাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ধীরে ধীরে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের সমস্ত ডাকঘরে জমা পড়া বাতিল নোট জমা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

বর্তমানে বালুরঘাটে ডাকবিভাগের দুই দিনাজপুরের প্রধান ডাকঘর, রায়গঞ্জের মুখ্য ডাকঘর ও ইসলামপুর মহকুমা ডাকঘরে ৫২ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন গত রবিবার থেকে ইসলামপুর ডাকঘর থেকে পুলিশের নিরাপত্তা তুলে নেওয়ায় যে কোনও সময়ে টাকা চুরি সহ নানা দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, দুই দিনাজপুরের তিনটি ডাকঘরে বিপুল পরিমাণে টাকা পড়ে থাকায় নিরাপত্তার অভাববোধও করছেন তাঁরা। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ডাকঘর কর্তৃপক্ষের মধ্যে।

ডাকঘরের দিনাজপুর ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নাজমুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘ডাকঘরগুলিতে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। তাই কোনও কারণে টাকা চুরি, অগ্নিকাণ্ড সহ কোনও দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটলে তার দায় ডাকবিভাগের কর্মী আধিকারিকদের উপর বর্তাবে। কেন টাকা জমা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হল, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তার সদুত্তর দিতে পারেননি।

Advertisement

তাঁর দাবি, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ টাকা জমা নেওয়া বন্ধ করার দিন থেকে ডাকঘর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ওই তিনটি ডাকঘরে পুলিশি নিরাপত্তা দেয় দুই দিনাজপুর জেলা প্রশাসন। কারণ, দুই জেলার সমস্ত ডাকঘরে জমা পড়া টাকা দিনের শেষে ওই তিনটি ডাকঘরে মজুত রাখা হয়। কিন্তু গত রবিবার ইসলামপুর মহকুমা ডাকঘর থেকে পুলিশের নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়।

সোমবার রায়গঞ্জের মুখ্য ডাকঘরেও পুলিশের কোনও নিরাপত্তা ছিল না। পরে ডাকঘর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে রায়গঞ্জের মুখ্য ডাকঘরে ফের পুলিশের নিরাপত্তা দেওয়া হলেও ইসলামপুর মহকুমা ডাকঘরে নতুন করে সেই নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। নাজমুল বলেন, ‘‘ইসলামপুর মহকুমা ডাকঘরের কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের একাংশ রবিবার সারা রাত জেগে টাকা পাহারা দিয়েছেন।’’

উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর বলেন, প্রশাসনের নির্দেশে ডাকঘরগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তাই যা বলার জেলাশাসক বলবেন।

জেলাশাসক আয়েসা রানির দাবি, তাঁর সঙ্গে পুলিশ সুপারের কথা হয়েছে। যে সমস্ত ডাকঘরে টাকা জমা রয়েছে, ‘‘সেই সব জায়গায় আপাতত পুলিশের নিরাপত্তা না তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘স্টেট ব্যাঙ্কের দুই দিনাজপুরের রিজিওনাল ম্যানেজারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে! দু-তিনদিনের মধ্যে ডাকঘরের টাকা জমা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।’’

রিজিওনাল ম্যানেজার শ্রীনিবাসন রাও বলেন, ‘‘আমি কোনও মন্তব্য করব না। ডাক বিভাগের দিনাজপুর ডিভিশনের অধীনে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ৪৪টি ডাকঘর রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে গত ৯ নভেম্বর থেকে প্রতিটি ডাকঘরে বাসিন্দাদের বাতিল হওয়া ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বদল করে দিচ্ছেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ।’’

নাজমুলবাবুর দাবি, ‘‘গত ১৭ ও ১৮ নভেম্বর থেকে রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর মহকুমার সমস্ত ডাকঘরে বদল ও অ্যাকাউন্টে জমা পড়া টাকা স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জমা নিচ্ছেন না। ফলে বর্তমানে রায়গঞ্জের মুখ্য ডাকঘর ও ইসলামপুর মহকুমা ডাকঘরে যথাক্রমে ১৪ কোটি ও ৯ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে।’’ একইভাবে গত ১৩ নভেম্বর থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের সমস্ত ডাকঘরে জমা পড়া
টাকাও জমা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ওই ব্যাঙ্ক। ফলে বর্তমানে বালুরঘাটে ডাক বিভাগের দুই দিনাজপুরের প্রধান ডাকঘরে ৩২ কোটি টাকা
পড়ে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন