দাবিপত্রে সই করছেন শঙ্কর মালাকার।ছবি:বিশ্বরূপ বসাক
শিলিগুড়িকে জেলা ঘোষণার দাবিতে বিজেপি ছাড়া সব দলকে এক ছাতার তলায় আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি জেলা দাবি আদায়ের জন্য একটি অরাজনৈতিক মঞ্চও তৈরি করেছেন তিনি। নবগঠিত জেলা দাবি আদায় মঞ্চের আহ্বায়ক হয়েছেন শঙ্করবাবু নিজেই। তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৭ মার্চ শিলিগুড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নাগরিক কনভেনশন ডাকা হয়েছে। সেখানে শিলিগুড়ি শহর তো বটেই, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া সহ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা আসবেন। লাগোয়া চোপড়া, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির অনেকেই যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আমরাও বিজেপি ছাড়া সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’ তাঁর সংযোজন, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই বিজেপির সংস্রবে ওই মঞ্চ যাবে না।
ঘটনাচক্রে, বিজেপির পক্ষ থেকেও শিলিগুড়িকে জেলা ঘোষণার দাবি তোলা হয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সম্প্রতি শিলিগুড়িতে পৌঁছে শিলিগুড়ি মহকুমাকে জেলা ঘোষণার পক্ষে সওয়াল করেছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি প্রবীণ অগ্রবালও তা নিয়ে আন্দোলনে নামার কথা জানিয়েছেন। শিলিগুড়ির স্বার্থে জেলা আদায়ের লক্ষ্যে সকলের মিলেমিশে এগোনো উচিত বলেও বিজেপির নেতাদের অনেকে মনে করছেন। তবে মঞ্চের কাছ থেকে আমন্ত্রণ না পেলে কেউ আগ বাড়িয়ে সেখানে সামিল হবেন না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপি নেতারা।
শিলিগুড়ির মেয়র তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও পৃথক জেলা ঘোষণার পক্ষে। শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোকবাবু মনে করেন, অবস্থানগত গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে শিলিগুড়িকে জেলা করার বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখার কথা ভাবতে হবে রাজ্য সরকারকে। কংগ্রেসের উদ্যোগে গড়ে ওঠা অরাজনৈতিক মঞ্চের কনভেনশনে অশোকবাবু যাবেন কি না তা বৈঠকে স্থির হবে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।
অবশ্য শিলিগুড়িকে জেলা ঘোষণার দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। শিলিগুড়ির নাগরিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা সময়ে তা নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। একটি নাগরিক সংগঠনের মুখপাত্র রতন বণিক বলেন, ‘‘আমরা বহুদিন ধরেই ওই দাবি করছি। এবার সকলে মিলে একযোগে আওয়াজ তুললে কাজটা মসৃণ হবে।’’
পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট হয়েছে। যেখানে আইজি পদমর্যাদার অফিসার পুলিশের শীর্ষে রয়েছেন। বিধি অনুযায়ী, কমিশনারের হাতে বিচার বিভাগীয় কিছু ক্ষমতাও রয়েছে। উপরন্তু, কলকাতার মত বড় শহরে পুলিশ কমিশনারই সাধারণত প্রশাসনের শীর্ষে থাকেন। শিলিগুড়ি জেলা হলে সেখানে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার পদও থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে কমিশনার পদ বিলোপ করার প্রশ্ন উঠতে পারে বলে প্রশাসনের একাংশ মনে করছেন। কিন্তু, একটা শহর এলাকায় কমিশনারেটে আওতায় আসার পরে তা ফের বিলুপ্ত করাটা শহরবাসীরাও অনেকে মেনে নিতে পারবেন না বলেও প্রশাসনের অনুমান। ফলে, তা নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে।
যদিও জেলা দাবি আদায় কমিটির আহ্বায়ক শঙ্করবাবুর বক্তব্য, ‘‘শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট হলেও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তো হয়নি। এখনও শিলিগুড়ি মহকুমা ডিএমের আওতায়। তা ছাড়া ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ির মতো শিলিগুড়ি মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় এসপির অধীনে রয়েছে। নানা কাজে সকলকে জেলা সদর দার্জিলিঙে ছুটতে হয়। শতাধিক দফতরের মূল অফিস দার্জিলিঙে হওয়ায় যাতায়াতে বহু সময় যায়। সেটা মাথায় রেখে কালিম্পঙ জেলা হলে শিলিগুড়ি কেন হবে না সেটা স্পষ্ট করতে হবে রাজ্যকে।’’