শন মাইকেল হ্যান্ডসন।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়েই মারা গেলেন এক বিদেশি পর্যটক। শন মাইকেল হ্যান্ডসন (৫০) নামে ওই পর্যটকের বাড়ি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে।
বুধবার বীরপাড়ার কাছে তাঁর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয় অন্য একটি গাড়ি। শনের সঙ্গে ছিলেন আরও চার জন। তাঁরা তাঁকে বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে আইসিইউ না থাকায় তেমন কোনও চিকিৎসা পরিষেবাই শন পাননি বলে অভিযোগ৷ এমনকি তাঁর সিটি স্ক্যানও হয়নি বলে অভিযোগ৷ এই অবস্থায় তাঁকে নিয়ে শিলিগুড়ি রওনা হন সঙ্গীরা৷ কিন্তু কাছেই রেলগেটে প্রায় ত্রিশ মিনিট তাঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়৷ শনের শ্বাসকষ্ট তখন বেড়ে গেলে ফের অ্যাম্বুল্যান্স ঘুরিয়ে তাঁকে বীরাপাড়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ এই ঘটনা আলিপুরদুয়ার জেলার সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ফের একবার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল৷
ঘটনায় হতবাক নিউজিল্যান্ড থেকে আসা জনের জঙ্গী জেফ ইভান৷ ঘটনার পর সেখানে তদন্তে যাওয়া পুলিশকর্মীদের কাছেও বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি৷ তাঁদের আরও দুই সঙ্গীর একজন পঙ্কজ সিংহের অভিযোগ, ‘‘ডুয়ার্স এত সুন্দর জায়গা৷ কত মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন৷ অথচ, এখানকার একটা হাসপাতালে একটা আইসিইউ পর্যন্ত নেই৷’’ তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর শন কথা বলতে বলতে হাসপাতালে গেলেন, মুখে কোথায় চোট পেয়েছেন তা-ও শন নিজেই চিকিৎসকদের বলেছিলেন, অথচ তার পরেও তাঁকে বাঁচানো গেল না। শনের আরেক ভারতীয় সঙ্গী বিবেক চৌধুরীও বলেন, বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে একটা আইসিইউ থাকলে হয়তো তাঁদের সঙ্গী বেঁচে যেতেন৷
হাসপাতালের সুপার বিদ্যুৎ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল বুকের ভিতরে কোনও চোট ছিল ওই পর্যটকদের৷ কিন্তু সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা না থাকায় তা বোঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না৷ এই অবস্থায় আমাদের পরিকাঠামোয় যতটা সম্ভব চিকিৎসা করেই তাঁকে শিলিগুড়ি রেফার করা হয়৷’’ আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচ পূরণ শর্মা বলেন, ‘‘বীরপাড়ার হাসপাতালে যাতে দ্রুত হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট চালু করার চেষ্টা চলছে৷ ভবিষ্যতে সেটাই আইসিইউ হবে৷’’
বীরপাড়ার ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ উগড়ে দেন পর্যটকদের দলটি৷ তাঁদের অভিযোগ, এখানে সব গাড়িতেই লেখা ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’৷ অথচ, এলাকায় গর্তে ভরা রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চলছে৷ রেলগেটেও ত্রিশ মিনিট দাঁড়াতে হল৷ যদিও রেলের এক কর্তা বলেন, ট্রেন যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় গেট বন্ধ ছিল৷
পুলিশ ও শনের সঙ্গীদের সূত্রের খবর, গত ২৬ সেপ্টেম্বর শন ও তাঁর বন্ধু জেফ ইভন দিল্লি আসেন৷ গাজিয়াবাদের বাসিন্দা তাঁদের আরও দুই বন্ধু পঙ্গজ ও বিবেকের সঙ্গে ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁরা ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি রওনা হন৷ ট্রেনেই দিল্লি থেকে চারটি মোটর সাইকেল নিয়ে আসেন চার জন৷ ২ অক্টোবর নিউ জলপাইগুড়িতে নেমে নিজের নিজের মোটর সাইকেলে গ্যাংটক যান৷ বুধবার সেখান থেকে ফের রওনা হন তারা৷ উদ্দেশ্য ছিল অসমের কাজিডাঙাতে যাওয়া৷ কিন্তু বীরপাড়া এলাকা আসতেই অন্ধকার নেমে যাওয়ায় তাঁরা হাসিমারার কাছে কোনও হোটেলে রাতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন৷ কিন্তু সেখান থেকে কিছুটা এগোতেই শনের মোটর সাইকেলে উল্টো দিক থেকে আসা একটি ছোট ভ্যান ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়৷