তিন-খুদে: মায়ের দুধ খেতে ব্যস্ত শাবকেরা। নিজস্ব চিত্র
সবচেয়ে বড় সে, গায়ের জোরও বেশি। তাই দস্যিপনাতেও বাকি দুই শাবককে পিছনে ফেলে দিয়েছে শীলার ‘বড় সন্তান’। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শীলার বড় শাবকের গায়ের রং সাদা। বাকি দুটি হলদে ডোরাকাটা। বড়টি স্তন্যপানের সময়ে বাকি দুই শাবককে ধারেকাছে আসতে দিতে চায় না সে।
শীলার অবশ্য তিনজনের প্রতি সমান টান। পালা করে সবাইকে স্তন্যপান করাচ্ছে সে। আচমকা তাপমাত্রার পারদ নামলে মাটিতে থাকা শাবকদের মুখে তুলে খড়ের গাদার উপরে রাখছে। মাঝরাত হোক বা সকাল, নিয়মের অন্যথা হয় না। মাঝেমধ্যে সন্তানদের সঙ্গে খুনসুঁটিতেও মাতে শীলা। শিলিগুড়ির কাছে বেঙ্গল সাফারি পার্কে বাঘ পরিবারের এই স্নেহের দৃশ্যই এখন কর্মী, পর্যটকদের মুখে মুখে ফিরছে। খুশি বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনও। তিনি বলেন, “বেঙ্গল সাফারিতে এই তিন শাবক খুব বড় প্রাপ্তি। সেখানকার কর্মী, আধিকারিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শাবকেরা বেড়ে উঠছে।’’
পার্কে মাদি শীলা ছাড়াও স্নেহাশিস ও বিভান নামে দু’টি পুরুষ বাঘ রয়েছে। স্নেহাশিসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় গর্ভবতী হয় শীলা। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিন সন্তান প্রসব করে শীলা। কখনও শাবকদের গা জিভ দিয়ে চেটে আদর করছে শীলা। কখনও শাবকের ঘুম ভাঙার শব্দ পেয়েই খাবার ফেলে উঠে আসছে। পার্কের এক কর্মী জানান, সাদা শাবকটা মায়ের কাছে বেশি সময় থাকতে চাইছে। বাকি দু’টো মায়ের কাছে যেতেই তীব্র আপত্তি জানান দিচ্ছে বড়টি।
শাবকগুলো পুরুষ না মাদি তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট হয়নি। পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, সংক্রমণের আশঙ্কা এড়াতে মা ও সদ্যোজাতদের ভীষণ যত্নে রাখা হয়েছে। সিসিটিভিতে নজর রাখা হচ্ছে। কেউ কাছে যাচ্ছেন না। ফলে শাবকগুলোর লিঙ্গ জানা সম্ভব হয়নি। পার্ক কর্মীরা জানাচ্ছেন, তিন শাবককে সুস্থভাবে বড় করে তোলার জন্যই সমস্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
এখন শীলাকে হাড় ছাড়া মাংস দেওয়া হচ্ছে। শাবকের শব্দ শুনলেই যেভাবে সে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাতে গলায় হাড় বিঁধে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পার্কের কর্মীরা। তাই এই সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে শীলাকে ভিটামিন দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ প্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “সন্তান প্রতিপালনে বাঘিনীই সব দায়িত্ব পালন করে। শীলাও সেই কাজটা দারুণভাবে করছে।”