Communal harmony

ঘরের আঁধার ভুলে অন্যের ঘরে আলো জ্বালাতে ব্যস্ত

করোনা-পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সংবর্ধনা পেয়েছেন বছর বাইশ-তেইশের এই যুবতী।

Advertisement

অর্জুন ভট্টাচার্য  

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:০২
Share:

মাসুদা পরভীন। নিজস্ব চিত্র

নিজের ঘরে জমেছিল অন্ধকার। অথচ, অন্যের ঘরে আলো জ্বালিয়ে আজ সকলের কাছে পরিচিত মাসুদা পারভীন। কলেজের পড়া শেষ করে এখন নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পড়ছেন মাসুদা। পড়াশোনার পাশাপাশি, কখনও ময়নাগুড়ির আনিসুল হক আবার কখনও বা লাটাগুড়ির অনামিকা মাহালির চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে চলেছেন। রক্তদান শিবির আয়োজন, ইদ ও দুর্গা পুজোয় গরিব শিশুদের হাতে জামা কাপড় তুলে দেওয়া— সবেতেই রয়েছেন তিনি।

Advertisement

করোনা-পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সংবর্ধনা পেয়েছেন বছর বাইশ-তেইশের এই যুবতী। জলপাইগুড়ির মেটেলির বাতাবাড়ির পশ্চিমপাড়ার ছোট টিনের ছাউনি দেওয়া তাঁর কাঁচা বাড়িটাকে আজ অনেকে এক ডাকে চেনে।

মাসুদার বাবা মানিক রহমান পেশায় গাড়ি চালক। অভাবের সংসারে আর্থিক সাহায্য করতে গ্রামে একশো দিনের কাজেও হাত লাগাতে হয়েছে মাসুদাকে। টাকার অভাবে কলেজে ভর্তির টাকা দিতে পারেননি। নতুন জামা-কাপড়ও অনেক সময় কিনে দিতে পারেননি বাবা। না খেয়ে কলেজে যেতে হয়েছে। প্রাইভেট টিউশনের টাকা যোগাড় করতে অসুবিধা ছিল। সংসারে অর্থ সাহায্য করতে একশো দিনের কাজের প্রকল্পেও কাজ করতে হয়েছে।

Advertisement

তবে কোদাল নিয়ে মাটি কাটা হাতেই নিজেকে স্বনির্ভর করতে সেলাই শিখছেন মেয়ে। শুধু নিজে নয়, এলাকার অন্যদেরও উৎসাহিত করছেন সেলাই প্রশিক্ষণে। নাবালিকা বিয়ে রুখতে সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছেন এলাকায়। সামাজিক মাধ্যমে আবেদন করে অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করে পৌঁছে দিচ্ছেন গরিব মানুষের কাছে। যুক্ত রয়েছেন বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে।

জলপাইগুড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় নার্সিং প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গ্রামীণ মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে সে প্রশিক্ষণ বলে জানিয়েছেন তিনি। এলাকায় কেউ অসুস্থ হলেই ডাক পড়ে মাসুদার। হাসি মুখে এগিয়ে গিয়ে কখনও রক্তচাপ মেপে দিচ্ছেন, আবার কখনও বা চিকিৎসকের পরামর্শে ইঞ্জেকশন দিচ্ছেন। কখনও অসুস্থ রোগীদের নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতালে। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গি ও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ঠেকাতে এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোতেও যুক্ত মাসুদা।

মাসুদার সহযোগিতাতেই তাঁর অসুস্থ, বৃদ্ধ স্বামীর চিকিৎসা করাতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন বাতাবাড়ির একটি রিসর্টের পরিচারিকা বৃদ্ধা রুমা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘মাসুদা আমার মেয়ের চেয়েও অনেক অনেক বেশি। ও আমাদের পাশে না দাঁড়ালে, আজ আমার স্বামীর বেঁচে থাকাই সম্ভব হত না। উনি হাঁটতে পারতেন না এক সময়। তখন ওয়াকারও জোগাড় করে দিয়েছিল।’’

বর্ষার বিদায় বেলায় মাসুদা পারভীনের গ্রামে এখন শরতের অনুপম সৌন্দর্য। মূর্তি নদী পাড়ের ডুয়ার্সের বাতাসে ভাসছে পুজোর গন্ধ। মাসুদা এখন গরিব মানুষের হাতে দুর্গা পুজোর জামা কাপড় তুলে দিতে ব্যস্ত। বলেন, ‘‘গ্রামের দুর্গাপুজোয় সকলে মিলেই আনন্দ করি। ইদ বা দুর্গা পুজো মানুষের উৎসব। মানুষকে বাদ দিয়ে কোনও উৎসব হয় না কি! সব ধর্মের মূল কথা মানব সেবা।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন