বাঘ নাকি! বক্সার জঙ্গলে সন্ধেয় ওটা কী দর্শন

বক্সার জঙ্গলে আদৌ বাঘ রয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। শেষ বহু বছর ধরে ওই জঙ্গলে সরাসরি বাঘ দেখা যায়নি বলেই সব মহলের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:১৭
Share:

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প।

বক্সায় বাঘ! চমকে উঠছেন নাকি? সোশ্যাল মিডিয়ায় কিন্তু এমনই দাবি করেছেন কোচবিহারের এক শিক্ষক। যে জঙ্গলে গত অন্তত দু’দশক বাঘের কোনও চিহ্ন মেলেনি, সেখানে এমন দাবিতে নড়েচড়ে বসেছে বন দফতরও। যেখানে ওই শিক্ষক বাঘ দেখেছেন বলে দাবি, সেখানে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যদিও বক্সা জঙ্গল সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁদের বক্তব্য, বাঘ নয়, সন্ধেবেলা ওটা ওঁর চোখের ভুল।

Advertisement

বক্সার জঙ্গলে আদৌ বাঘ রয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। শেষ বহু বছর ধরে ওই জঙ্গলে সরাসরি বাঘ দেখা যায়নি বলেই সব মহলের দাবি। যদিও বন দফতরের কর্তারা সব সময় দাবি করেন, দেখা না গেলেও বাঘ আছে ওই জঙ্গলে। ২০১৮ সালের বেশ কয়েক বছর আগে এখানে শেষ যে বাঘসুমারি হয়েছিল, তাতে তিনটি বাঘের চিহ্ন মিলেছিল বলেও দাবি তাঁদের। যদিও গত বছর হওয়া সুমারির রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি।

এই অবস্থায় বনকর্তাদের হাতে যেন অন্ধের যষ্ঠি ধরিয়ে দিলেন কোচবিহারের শিক্ষক সব্যসাচী রায়। মহিষবাথানে তাঁর বাড়ি। সব্যসাচীবাবুর কথায়, গত রবিবার বাড়ির সকলকে নিয়ে তিনি ছোট মহাকাল মন্দিরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে যখন তাঁরা ২৩ মাইলের কাছে আসেন, তখন প্রায় সন্ধে। সব্যসাচীবাবুর দাবি, সেখানেই হঠাৎ বাঘ দেখতে পান তিনি।

Advertisement

সব্যসাচী বলেন, ‘‘২৩ মাইলের কাছে গাড়িতে বসেই লক্ষ্য করি, দূরে ঝোপের পাশে দুটি চোখ জ্বলজ্বল করছে। মুহূর্তের মধ্যে দেখি, সেটি ঝোপের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। আমাদের গাড়িটা ওই জায়গা পাড় করার সময় মনে হল, বাঘ দেখলাম। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি পিছনে নিয়ে গিয়ে দেখি, একটি বাঘ আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে ছবি তোলার মতো সময় পাইনি।”

বিষয়টি তিনি ফেসবুকে দেন। তার পরেই হইচই পড়ে যায়। সব্যসাচীবাবুর সঙ্গে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্তারা যোগাযোগ করেন। শিক্ষকের কথা শুনে তাঁরা উৎসাহিত। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা জানি বক্সার জঙ্গলে বাঘ রয়েছে। কারণ, বক্সায় বাঘ থাকার বিষয়ে সব সময়ই আমরা কিছু না কিছু প্রমাণ পেয়ে থাকি। এই অবস্থায় কেউ সরাসরি বাঘ দেখে থাকলে আরও ভাল। একজন সচেতন মানুষ নাগরিক হিসেবে উনি আমাদেরও বিষয়টি জানিয়েছেন। সে জন্য আমরা খুশি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণও বলেন, “আমরা সব সময়ই নিশ্চিত বক্সায় বাঘ রয়েছে। এবার এক জন সরাসরি সেখানে বাঘ দেখেছেন, সেটা অবশ্যই ভাল খবর।”

তবে ছবি না থাকায় বন দফতরের কর্তাদের একাংশই সব্যসাচীবাবুর দাবি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে একমত পরিবেশপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠনও। রাজাভাতখাওয়ার পশ্চিম রেঞ্জ, যেখানে বাঘটি দেখেছেন বলে দাবি সব্যসাচীর, সেটা ‘কোর’ এলাকাও নয়। বন দফতর সূত্রের খবর, ওই শিক্ষক যে এলাকায় বাঘ দেখেছে বলে দাবি করেছেন, তার আশপাশে কিছু ট্র্যাপ ক্যামেরা রয়েছে। কিন্তু কোনও ক্যামেরাতেই এখনও অবধি বাঘের ছবি ধরা পড়েনি। এ বার অবশ্য সব্যসাচীর দাবি মতো ২৩ মাইলে ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তবে সকলেই বনমন্ত্রী বা শুভঙ্করবাবুর মতো আশাবাদী হতে পারছেন না, ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন সে কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন