ঘুরতে হল হাসপাতালে হাসপাতালে

রবিবার বিকেলে ওই তরুণীকে রায়গঞ্জে ভর্তি করায় পুলিশ। অভিযোগ, ধর্ষণের পরে যৌনাঙ্গে ভারী কিছু ঢুকিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। ফলে, অন্ত্রের অংশ বেরিয়ে পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০১
Share:

প্রতীকী ছবি।

শনিবার সন্ধেয় গণধর্ষণের শিকার হন এক যুবতী। তাঁর যৌনাঙ্গে ভোঁতা অস্ত্র ঢুকিয়ে আঘাত করা হয়। স্থানীয় যে বাসিন্দারা তাঁকে প্রথম দেখতে পান, তাঁরা দেখেন, শরীরের কিছু অংশ বেরিয়ে এসেছিল। যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সেই ভাবেই ইছামতী পড়েছিলেন প্রায় ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা। তারপরে তাঁকে কুশমণ্ডি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারপরে সেখানে অস্ত্রোপচারের পরে তাঁকে নিয়ে যেতে হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, ‘সুপার স্পেশালিটি’ হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও কুশমণ্ডির নির্যাতিতা যুবতীকে কেন রাতারাতি মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হল। একাধিক আদিবাসী সংগঠন ও রাজনৈতিক দল এই প্রশ্ন তুলেছে।

রবিবার বিকেলে ওই তরুণীকে রায়গঞ্জে ভর্তি করায় পুলিশ। অভিযোগ, ধর্ষণের পরে যৌনাঙ্গে ভারী কিছু ঢুকিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। ফলে, অন্ত্রের অংশ বেরিয়ে পড়ে। সেই তরুণীর দেহে অস্ত্রোপচারের পরে রাতেই কেন মালদহে পাঠিয়ে দেওয়া হল তাই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে আদিবাসী সংগঠন।

Advertisement

আরও পড়ুন: কী করছিল পুলিশ, প্রশ্ন

একাধিক আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে সন্দেহ করা হয়েছে, দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতেই মাঝ রাতে রেফার করে দেওয়া হয়েছে। যদিও রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের সুপার গৌতম মণ্ডল বলেছেন, ‘‘রবিবার সঙ্গে সঙ্গেই অস্ত্রোপচার শুরু হয়। দেহাংশ ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তবে পরিস্থিতি একটু জটিল হওয়ায় আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছে।’’এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ সেভ ডেমোক্রেসির রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী সহ অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, পরিকাঠামো তৈরি না করেই সুপার স্পেশ্যালিটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে কি না, সেটাও সামনে আসা দরকার। তিনি বলেন, ‘‘কুশমণ্ডির ঘটনায় যুক্তদের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। সকলকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।’’

আরও পড়ুন: ধর্ষণের পরে পড়ে রইলেন ১৮ ঘণ্টা!

চঞ্চলবাবুর দাবি, ‘‘শুধু ২০১৭ সালেই রাজ্যের নানা এলাকায় ২৩ জন আদিবাসী কিশোরী-তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ২ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন খুন হয়েছেন। কাজেই একজনকে ধরলে হবে না, পুলিশকে অতি মাত্রায় তৎপর হয়ে সকলকে ধরে সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মালদহ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, নির্যাতিতা ওই তরুণীর গোপানাঙ্গে গভীর ক্ষত হয়েছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে বলে দাবি চিকিৎসকদের। তবে বাইরে থেকে সেই ক্ষত বোঝা যাচ্ছে না। তাই এ দিন সন্ধেয় ওই যুবতীর অস্ত্রোপচার করেন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্ষত মেরামতের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আদিবাসী সমাজ ও লোক কল্যাণ মঞ্চের সদস্যরাও এক হাসপাতাল থেকে অন্যত্র ঠেলাঠেলি নিয়ে সরব হয়েছেন। সংগঠনের সভাপতি বুধন হেমব্রম বলেন, ‘‘মরণাপন্নকে নিয়ে এক হাসপাতাল তেকে আরেক জায়গায় ঠেলাঠেলি যে কবে বন্ধ হবে কে জানে! এটা চলতে পারে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে। প্রত্যেকের যাতে সাজা হয় পুলিশকে সেই পদক্ষেপ করতে হবে। আমরা জেলা জুড়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদাও ওই সংগঠনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারও ভীষণ উদ্বিগ্ন। পুলিশ কড়া পদক্ষেপ করবে। আমরা নির্যাতিতা আদিবাসী পরিবারের পাশে আছি।’’ এ দিন রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাস বাড়ছে! পুলিশ, প্রশাসন ও রাজ্য সরকার নির্বিকার। কুশমণ্ডির ধর্ষণের ঘটনায় নির্ভয়াকাণ্ডের ছায়া দেখতে পাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন