Earthquake Alarming System

ভূমিকম্প হলে সতর্ক করবে যন্ত্র

সম্প্রতি শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের কাছে বিষয়টি জানিয়ে পুরসভায় সেই যন্ত্র বসানোর প্রস্তাব দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০৭:৪২
Share:

মেয়রের সঙ্গে সুব্রত। নিজস্ব চিত্র

সালটা ২০১৫। কেঁপে উঠেছিল পাহাড়ের পাদদেশের শহর শিলিগুড়ি। তিন তলায় আটকে পড়েছিলেন এক তরুণ। কম্পনের তীব্রতায় তাঁর মনে হচ্ছিল, যে কোনও সময় হুড়মুড় করে গোটা বাড়িটা ভেঙেই পড়বে। আতঙ্কে শহরের অনেক লোকই বহুতল ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার পরেই মাথায় ঘুরছে ভাবনাটা, ভূমিকম্পে সর্তক করার জন্য যন্ত্র আবিষ্কারের। সেই যন্ত্র আবিষ্কার করে সাড়া ফেলেছে শিলিগুড়ির ছেলে সুব্রত পাল। বাড়ি অরবিন্দপল্লিতে। তাঁর ওই যন্ত্র ‘আর্থকোয়েক অ্যালার্মিং সিস্টেম’ ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর থেকে পেটেন্টও করে নিয়েছেন তিনি।

Advertisement

সম্প্রতি শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের কাছে বিষয়টি জানিয়ে পুরসভায় সেই যন্ত্র বসানোর প্রস্তাব দেন। তখনই বিষয়টি জেনে মেয়র মঙ্গলবার তাঁকে পুরসভায় ডেকে বিষয়টি সকলের সামনে তুলে ধরেন। চল্লিশের কোঠায় বয়স সুব্রতর। তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র নন। কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তবে ইলেকট্রনিক্স নিয়ে তাঁর ছোট থেকেই উৎসাহ রয়েছে। বাড়িতে সেই বিষয়ে বই পড়েন। এক শিক্ষকও তাঁকে সাহায্য করেন। সেই মতো ইলেকট্রনিক্সের বিভিন্ন সার্কিটের মডেল তৈরি করেন শখে। শিলিগুড়ির রাজা রামমোহন রায় রোডে তাঁর একটি কম্পিউটার মেরামতের দোকানও রয়েছে। মেয়র বলেন, ‘‘শিলিগুড়ির ছেলে এ রকম একটা আবিষ্কার করেছে সেটাই বড় ব্যাপার। আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাই। তার ওই যন্ত্র পুরসভায় লাগানোর কথা জানিয়েছেন। আমরা সেটা করেছি। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা না করেও নিজের উৎসাহ থেকেই এই যন্ত্র তৈরি করে ফেলেছেন সুব্রত। তার চেষ্টাকে প্রশংসা না-করে পারা যায় না।’’

কী নাম দিয়েছেন যন্ত্রের? নাম ‘ডিজি কোর’। নিজের কম্পিউটারের দোকানের নাম ডিজি কোরের নামেই যন্ত্রের নাম রেখেছেন। কী ভাবে কাজ করে ওই যন্ত্রটি। সুব্রতর কথায়, ‘‘ভূমিকম্পের সময় কম্পন বা ওয়েব তৈরি হয়। যন্ত্রে পেন্ডুলাম ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো হয়েছে। ওয়েব তৈরি হলেই পেন্ডুলামের দোলন হবে। সেটাই সেন্সর গ্রহণ করে বার্তা পাঠাবে। অ্যালার্ম বাজতে শুরু করবে। ‘প্রাইমারি’ এবং ‘সেকেন্ডারি’ দুই ধরনের কম্পন হয়।’’ এই যন্ত্রটির মাপকাঠি এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে যাতে ৩.৫ রিখটার স্কেলের উপরে কম্পন হলে অ্যালার্ম বাজে। কেন না তার কম হলে অনেক সময় ট্রেন বা বড় গাড়ি চলাচলের জন্য কম্পন হলেই অ্যালার্ম বাজতে থাকবে।

Advertisement

শিলিগুড়ি শহর সিসমিক জোন-৪ এর অন্তর্ভুক্ত। সুব্রত বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের জন্য শহরের বহু মানুষ আতঙ্কে থাকেন। এই যন্ত্রে ভূমিকম্প টের পেলে সময় মতো বাড়ি থেকে বার হতে পারবেন।’’ তা ছাড়া যন্ত্রে একটি আলোর ব্যবস্থা এবং চার্জিং সিস্টেম রয়েছে। সেখান থেকে তার টেনে কয়েকটি আলোর ব্যবস্থা করলে ভূমিকম্পের সময় কারেন্ট চলে গেলে সেই আলো সাহায্য করবে। সুব্রত জানান, মানুষের কাছে যন্ত্রটি পৌঁছে দিতে শিল্পোদ্যোগী কেউ এগিয়ে এলে ভাল হয়। যা খরচ হয় তাতে দাম সাত হাজারের কাছাকাছি রাখা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন