বিয়ে রুখে এ বার মডেল শান্তি-ঋতুপর্ণা

স্কুলে যেতে চেয়ে বাড়ির বড়দের হাতে পায়ে ধরেছিল ওরা। বারবার আর্জি জানিয়েছিল বিয়ে বন্ধের। কিন্তু কাজ হয়নি। উপায় না দেখে এরপর স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে বিয়ে রুখে এখন সহপাঠীদের কাছে মডেল মালদহের হবিবপুরের দুই নাবালিকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১৩
Share:

স্কুলে যেতে চেয়ে বাড়ির বড়দের হাতে পায়ে ধরেছিল ওরা। বারবার আর্জি জানিয়েছিল বিয়ে বন্ধের। কিন্তু কাজ হয়নি। উপায় না দেখে এরপর স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য নিয়ে বিয়ে রুখে এখন সহপাঠীদের কাছে মডেল মালদহের হবিবপুরের দুই নাবালিকা।

Advertisement

দিনমজুর পরিবারের এই দুই মেয়ে ঋতুপর্ণা হালদার ও শান্তি সাহানির এমন উদ্যোগ অন্যদেরও সাহস জোগাবে বলে আশা তাদের স্কুল দাল্লা চন্দ্রমোহন উচ্চ বিদ্যা মন্দিরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। রবিবার ওই দুই ছাত্রীকে স্কুলের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ি বলেন, ‘‘ওই দুই নাবালিকা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের বিয়ে রুখেছে। তাদের জন্য আমরা গর্বিত। তাদের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ বহন করব আমরা। আর তাদের দেখে যাতে অন্যান্য ছাত্রীরাও শিখতে পারে, সেই জন্য প্রকাশ্যে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।’’

হবিবপুর ব্লক সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দুরে বৈদ্যপুর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় দাল্লা চন্দ্রমোহন উচ্চ বিদ্যা মন্দির। স্কুল সংলগ্ন দাল্লা গ্রামে বাস ঋতুপর্ণা হালদারের। এ বারই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা তার। ঋতুপর্ণার বাবা শ্যামল হালদার পেশায় দিনমজুর। তাঁর তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে ঋতুপর্ণা মেজো। জানুয়ারি মাসে বামনগোলার নালাগোলার এক বাসিন্দার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করা হয় ঋতুপর্ণার। কিন্তু পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে আপত্তি জানায় সে। সেই আপত্তি উড়িয়ে দিয়েই পরিবারের লোকেরা তাকে বিয়ে দিতে তৎপর হয়। এমনকী, তার স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়। উপায় না দেখে স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানায় মেয়েটি। তারপরই স্কুলের শিক্ষকেরা তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে ভেঙে দেন।

Advertisement

ঋতুপর্ণার মতোই বাড়ির লোক বিয়ে ঠিক করে ফেলায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী শান্তি সাহানির। শান্তি বৈদ্যপুর অঞ্চলের পার্বতীডাঙার বাসিন্দা। তার বাবা বরিন্দর সাহানি পেশায় কৃষক। তাঁর চার ছেলে মেয়ের মধ্যে শান্তিই বড়ো। শান্তির বিয়ে ঠিক হয়েছিল হবিবপুরের আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই বিয়ে স্থির হয়েছিল তার। ঋতুপর্ণার মতোই বিয়েতে আপত্তি জানিয়েছিল শান্তি। কিন্তু অভিভাবকরা কান না দেওয়ায় সহপাঠীদের মাধ্যমে স্কুলে বিষয়টি জানিয়েছিল সে। এ ক্ষেত্রেও স্কুলের শিক্ষকরা তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে বন্ধ করে দেন।

দুই ছাত্রী ঋতুপর্ণা ও শান্তি বলে, ‘‘ছোট বয়সে বিয়ে করলে কী কী ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে তা শুনেছি। তাই বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি নয়, আমরা এখন স্কুলে যেতে চাই। আর সরকার থেকেও আমাদের পড়াশোনার জন্য অনেক সাহায্য করছে।’’ মেয়েদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আর বিয়ে দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন ওই দুই নাবালিকার পরিবার। তাঁরা বলেন, ‘‘বুঝতে না পেরে মেয়েদের বিয়ে ঠিক করেছিলাম। আর সেই ভুল করব না।’’ প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলের ওই দুই ছাত্রীর এমন পদক্ষেপে খুশি ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। হবিবপুর ব্লকের বিডিও ফুর্বা দরজি শেরপা বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েরা যে সচেতন হচ্ছে ঋতুপর্ণা ও শান্তিই তার দৃষ্টান্ত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন