অমরনাথের পুণ্যার্থীদের খোঁজ মিলল দু’দিন পরে

কোচবিহারের অমরতলা এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব ঘোষের সঙ্গে  টানা দু’দিন মোবাইল ফোনে দফায় দফায় চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁর পরিবার। চিন্তায় পড়েছিলেন সকলে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ ও অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫৫
Share:

উদ্বেগ: দুশ্চিন্তায় বিপ্লব পালের পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

কারও সঙ্গে দু’দিন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কেউ আবার জম্মু পৌঁছেই ভিড়ে ঠাসাঠাসি ট্রেনে চেপে ফিরেছেন দিল্লি। জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক তৎপরতার পরে অমরনাথ যাত্রায় বেরিয়ে কার্যত এমনই অবস্থার মধ্যে পড়লেন কোচবিহার তথা উত্তরবঙ্গের তীর্থযাত্রীদের অনেকেই। সকলেই চেষ্টা করছেন, যত দ্রুত সম্ভব ভূস্বর্গ থেকে বেরিয়ে আসার।

Advertisement

কোচবিহারের অমরতলা এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব ঘোষের সঙ্গে টানা দু’দিন মোবাইল ফোনে দফায় দফায় চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁর পরিবার। চিন্তায় পড়েছিলেন সকলে। শেষ পর্যন্ত রবিবার রাতে অচেনা একটি নম্বর থেকে ফোন আসে। সেই ফোনে ছেলের গলা শুনে স্বস্তি পান পরিজনেরা। তার পরেও অবশ্য ঘরের ছেলে নির্বিঘ্নে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত পুরোপুরি উদ্বেগমুক্ত হতে পারছেন না তাঁরা।

গত ৩১ জুলাই অমরনাথ দর্শন করতে কোচবিহার থেকে রওনা হয়েছিলেন ওই যুবক। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জম্মুর একটি হোটেলে রয়েছেন তিনি। ফেরার টিকিট পেলে রওনা হবেন।

Advertisement

পরিবারের লোকেরা জানান, বিপ্লব একাধিকবার দেওঘর দর্শনে গিয়েছেন। অনেক দিন থেকেই অমরনাথ দর্শনে যাবেন বলে আগ্রহী ছিলেন। এ বার এক বন্ধুর সঙ্গে রওনা হন। সেখানে পৌছনোর পর একবার কথাও বলেন বাড়ির লোকদের সঙ্গে। তার পরেও ২ ও ৩ অগস্ট টানা দু’দিন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বিপ্লবের মা মঞ্জুদেবী বলেন, “শুক্র ও শনিবার যোগাযোগ হয়নি। ভীষণ চিন্তায় পড়েছিলাম। রবিবার রাতে ছেলে ফোন করায় সেই চিন্তা অনেক কমেছে। তবে ঠিক ভাবে বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত উদ্বেগ কমবে না।” বিপ্লবের স্ত্রী সঙ্গীতা বলেন, “এখানকার সিম কাজ করছিল না। তাই নতুন সিম নিয়ে ফোন করেছিল। বাড়ি ফেরার জন্য মুখিয়ে আছে। ট্রেনের টিকিট পেলেই রওনা হবে।”

পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, জম্মুর হোটেলে একটি বড় ঘরে অন্তত ২০ জনের সঙ্গে রয়েছেন বিপ্লব। এলাকায় দোকানপাটও সব প্রায় বন্ধ। খাবারের সমস্যাও আছে। মঞ্জু বলেন, “ছেলেকে চিড়ে, মুড়ি খেয়েও কাটাতে হচ্ছে।” কোচবিহার আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক তপন গুহরায় বলেন, “বিপ্লব সমিতির অফিসেই কাজ করেন। বাড়ি ফেরার টিকিটের ব্যাপারে রবিবার যোগাযোগ করেছিল।”

কোচবিহারের সর্বজিৎ সাহা, আলিপুরদুয়ারের ভাস্কর দেবনাথরাও এ বারে অমরনাথ যাত্রায় বের হন। ৩ অগস্ট সকালে তাঁরা পৌঁছে যান জম্মু। সেখানে পৌঁছেই বুঝতে পারেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। চার দিকের পরিবেশ একটু অন্য রকম মনে হয়েছিল তাঁদের কাছে। বিশ্বহিন্দু পরিষদের অফিসে গিয়েই জানতে পারেন, এই মুহূর্তেই ফিরে যেতে হবে তাঁদের।

ফেরার জন্য হুড়োহুড়ি পরে গিয়েছিল। কার আগে কে যাবেন তা নিয়ে যেন লড়াই চলছিল। ট্রেনের সাধারণ কামরায় ফেরাই তখন একমাত্র উপায় তাঁদের কাছে। ট্রেনের ভেতর কার্যত এক জনের উপরে আরেক জন দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর মধ্যে কোনও ভাবে পা রাখার জায়গা করে ৪ অগস্ট সকালে দিল্লিতে ফেরেন তাঁরা। পেশায় ফটোগ্রাফার সর্বজিৎ সাহা বলেন, “এমন ভাবে ফিরতে হয়েছে তা কষ্টকর। তবে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে খুব খুশি হয়েছি।”

উত্তরবঙ্গ থেকে তাঁরা ১৫ জনের মতো সে দিন জম্মুতে পৌঁছেছিলেন। সবাই ওই দিনই ফিরে চলে যান। পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী ভাস্কর বলেন, “এ বারে পারলাম না। আগামীতে অবশ্যই আবার যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন