এই নোটিস ঘিরে বিতর্ক।—নিজস্ব চিত্র।
সপ্তাহে দু’দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে নোটিস ছাড়াই স্কুল থেকে নাম কেটে দেওয়া হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের এই বিজ্ঞপ্তির জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। ঘটনাটি রায়গঞ্জ গার্লস ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের। উল্লেখ্য, শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার স্কুলছুট পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করতে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। এরই মধ্যে কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকেরা। খবর পৌঁছেছে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দফতরেও।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান বেঞ্জামিন হেমব্রম বলেন, ‘‘সংসদকে কিছু না জানিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যায় না। এটা বেআইনি। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছুটিতে আছেন। তিনি কাজে যোগ দিলেই, তাঁকে ডাকা হবে। আমরা আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেব।’’ চেয়ারম্যান জানান, জেলাশাসক স্কুল পরিদর্শনে আসতে পারেন, সে কথা উল্লেখ করে ওই নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক বাদল পাত্র ঘটনার তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর কী মন্তব্য জানতে, চেষ্টা করেও জেলাশাসক রনধীর কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
বর্তমানে স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা ৮৩২। ১ জন শিক্ষক ও ৮ জন শিক্ষিকা রয়েছেন। প্রধান শিক্ষিকা শিখা দত্ত গত ২ জুলাই ওই নোটিস গেটে লাগিয়ে দেন। তাতে লেখা আছে, সকল অভিভাবকদের জানানো হচ্ছে, যে সকল শিশুরা সপ্তাহে ২ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকবে তাদের নাম কোনও নোটিস ছাড়াই কেটে দেওয়া হবে। কারণ, প্রতি মূহূর্তে জেলাশাসক পড়ুয়াদের উপস্থিতি হার ও মিড-ডে মিল ঠিকঠাক চলছে কি না পরিদর্শন করছেন। এরই মধ্যে গত ৮ জুলাই থেকে ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে প্রধান শিক্ষিকা কলকাতায় যান। ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘‘পরীক্ষার সময় ছাড়া সারা বছর গড়ে ২৫-৩০ শতাংশের বেশি ছাত্রী স্কুলে আসে না। পড়ুয়াদের হাজিরা কম থাকা-সহ পোশাক, পাঠ্যপুস্তক বিলি ও মিড-ডে মিল প্রকল্প স্বাভাবিক না থাকার কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষকে নানা কৈফিয়ত দিতে হয়। তাই স্কুলের হাজিরা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থেই সমস্ত শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।’’ স্কুলের সহশিক্ষক গৌরাঙ্গ চৌহান বলেন, ‘‘আমরা অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছিলাম। যদি কোনও ছাত্রীর নাম কেটে দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকত, তা হলে নোটিস জারি হওয়ার পরে এত দিনে অনুপস্থিত বহু ছাত্রীর নাম কাটা পড়ত।’’
রায়গঞ্জের পূর্ব নেতাজিপল্লির বাসিন্দা সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমার ভাইজি ওই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পারিবারিক সমস্যা ও অসুস্থতার কারণে পড়ুয়ারা অনুপস্থিত থাকতেই পারে। কিন্তু, এটা তো ফতোয়ার মতো। বিষয়টি শুনেই অবাক হয়ে যাই। এই নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ানোটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা রীনা ঘোষ, অভিজিৎ কুণ্ডুর প্রশ্ন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষের জারি করা নোটিশের জেরে যদি প্রাথমিক স্কুলেই পড়ুয়াদের নাম কাটা যায়, তা হলে পড়ুয়ারা কী ভাবে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে?’’ আবার একাংশ অভিভাবক বলেন, ‘‘হাজিরা নিয়ে স্কুল কড়া হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে অভিভাবকদের এক দফায় মিটিং ডেকে সতর্ক করা উচিত ছিল।’’