টাকা কই, ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে বিক্ষোভ

লাইনে দাঁড়িয়েও তিন দিন ধরে লেনদেন করতে না-পারায় মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের ৩টি পৃথক এলাকায় ব্যাপক হট্টগোল হল। দু’টি ঘটনা ডাকঘরে ঘটে। একটি দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ডাকঘরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
Share:

ধূপগুড়ির পোস্ট অফিসের সামনে ধর্নায় গ্রাহকেরা। —নিজস্ব চিত্র

লাইনে দাঁড়িয়েও তিন দিন ধরে লেনদেন করতে না-পারায় মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের ৩টি পৃথক এলাকায় ব্যাপক হট্টগোল হল। দু’টি ঘটনা ডাকঘরে ঘটে। একটি দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ডাকঘরে। সেখানে তৃণমূলের নেতৃত্বে তালা ঝোলানো হয়। অন্যটি ধূপগুড়ির প্রধান ডাকঘরে। তৃতীয় ঘটনা কোচবিহারের ভেটাগুড়ির একটি গ্রামীণ ব্যাঙ্কে। প্রতি ক্ষেত্রের গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়ে দীর্ঘক্ষণ ডাকঘর, ব্যাঙ্কের কাজকর্ম বন্ধ থাকে। হরিরামপুরের ক্ষেত্রে গ্রাহক বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন এলাকার তৃণমূল নেতা সোনা পাল। অন্যত্র, সাধারণ মানুষই বিক্ষোভ দেখান। সব কটি ক্ষেত্রেই পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

Advertisement

তবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হলেও গ্রাহকরা প্রায় সকলেই টাকা লেনদেন স্বাভাবিক হওয়ার জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে রাজি বলে প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন।

অসহায় ডাককর্মীরা টাকা চেয়ে সদরে ফোন করে পরিস্থিতির কথা জানালেও বালুরঘাট সদর ডাকঘর থেকে হরিরামপুরের ওই সাব পোস্ট অফিসে এ দিন টাকা পাঠানো সম্ভব হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত পোস্ট সুপারিনটেন্ডেন্ট নজমুল হক চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘গত তিন দিন ধরে ব্যাঙ্ক কোনও টাকা দিচ্ছে না। পুরনো টাকাও জমা নিচ্ছে না। ইতিমধ্যে গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রধান ডাকঘরে ৩২ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা জমা পড়ে স্তূপ হয়ে রয়েছে। আগে রোজ নির্দিষ্ট সংগ্রহের টাকা ব্যাঙ্কে জমা করা যেত। তার বদলে প্রয়োজনীয় টাকা ব্যাঙ্ক থেকে সরবরাহ মিলত। নতুন টাকা আসার পর এখনও পর্যন্ত মাত্র ২ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা বদল করেছে ব্যাঙ্ক। পরিবর্তে প্রয়োজনীয় নতুন টাকা মেলেনি বলে অভিযোগ।’’ ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন। বালুরঘাট প্রধান স্টেট ব্যাঙ্ক শাখার এক অফিসার জানান, চাহিদা মতো তাঁরাই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা পাচ্ছেন না। ডাকঘরের চাহিদা কেমন করে মেটাবেন?

Advertisement

হরিরামপুরের কৃষিজীবী মানিক রায়, দেবেন বর্মন, মুজিবর রহমানেরা বলেন, ‘‘গত শনিবার ডাকঘরের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডাক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, সদর থেকে টাকা আসেনি। ভেবেছিলাম, নোট বদলে অন্তত দু’হাজার টাকা পাব আর তার সঙ্গে কিছু ধার করে আলু বীজ কিনব। কিন্তু সোমবারের মতো এ দিনও পোস্ট অফিস খুলে ডাককর্মীদের টাকা আসার অপেক্ষায় ওপরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকতে দেখে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে।’’

গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর জুড়েই স্টেট ব্যাঙ্ক থেকে প্রয়োজনীয় টাকা না পেয়ে কার্যত জেলায় মুখ থুবড়ে পড়ছে ডাক বিভাগের লেনদেন পরিষেবা। এজেলায় বালুরঘাট প্রধান ডাকঘরের অধীন ২২টি সাবপোস্ট অফিস এবং ৫০টি গ্রামীণ ডাকঘর রয়েছে। কোথাও খুচরো জোগাড় করার সমস্যা, কোথাও বা প্রবীণ নাগরিকদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগ।

সমস্যা চলছে কোচবিহারেও। কোচবিহারের গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখা টাকা তুলতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে, এ দিন মঙ্গলবার পথ অবরোধও হয়েছে। ম্যানেজারকে ব্যাঙ্কে ঢুকতে না দিয়ে রাস্তায় বসিয়ে রাখেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের কয়েক জন। সকাল এগারোটা থেকে অবরোধ শুরু হয়। টাকা না পেলে ভাঙচুরের হুমকি দিতে থাকেন অনেকে।

এ দিনই ধূপগুড়িতে টাকা না পেয়ে এ বার ডাকঘরের সামনে ধর্না ও বিক্ষোভ দেখান প্রায় আড়াই’শো গ্রাহক। মঙ্গলবার সকাল থেকে ধূপগুড়ির প্রধান ডাকঘরের সামনে লাইন দেয় গ্রাহকরা। ডাকঘর খোলার পর টাকা নেই শুনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। অফিসের কর্মীদের ভিতরে আটকে রেখে দরজার সামনে টাকার দাবিতে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা জানান, যতক্ষণ টাকা না পাচ্ছি, ততক্ষন ধর্না থেকে সরব না। বিক্ষোভের খবর পেয়ে অবস্থা সামাল দিতে আসে ধূপগুড়ি থানার পুলিশ। বিক্ষোভের মুখে পড়ে পোস্ট মাস্টার বারবার ব্যাঙ্ক ও জেলা পোস্ট অফিসে টাকার জন্য আবেদন জানাতে থাকেন। দু’আড়াই ঘণ্টা বিক্ষোভ চলার পর দেড় লাখ টাকা আসে পোস্ট অফিসে। টাকার কথা শুনে বিক্ষোভ উঠিয়ে ফের লাইনে দাঁড়ান গ্রাহকরা। এ দিন গ্রাহকদের মাত্র দু’হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। পোস্ট মাস্টার শেখর সরকার বলেন, “গ্রাহকরা টাকার দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেও আমার কিছুই করার ছিল না। টাকা না থাকলে আমি কি করতে পারি। পরে টাকা আসাতে গ্রাহকদের দু’হাজার করে দেওয়া হয়। আমার অভিযোগ, স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে পর্যাপ্ত টাকা চেয়ে পাচ্ছিনা বলে অসুবিধা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন