মালদহের পর মংপং। মুখ্যমন্ত্রীর সফরে ফের বাতানুকূল যন্ত্রের বিভ্রাট ঘটল।
বুধবার নতুন জেলা আলিপুরদুয়ারের উদ্বোধনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাতে ছিলেন সেবকের অদূরে মংপং বনবাংলোয়। সেখানে যে ঘরে তিনি ছিলেন, সেই ঘরেই রাত সওয়া ৯টা নাগাদ বাতানুকূল যন্ত্রের স্টেবিলাইজারটি থেকে আচমকা ধোঁয়া বেরোতে শুরু করে। বাতানুকূল যন্ত্রটিও বন্ধ হয়ে যায়। অফিসারেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী সে সময় ঘরেই ছিলেন। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে বাংলোর বসার ঘরে চলে যান। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে পূর্ত দফতরের মালবাজার বিদ্যুৎ শাখার সহকারী ইঞ্জিনিয়ার শেখর সূর ও সহ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার রাজা সেনগুপ্তকে এই ঘটনার জন্য সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
স্টেবিলাইজারটি রাখা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের মেঝের উপরে। ইঞ্জিনিয়াররা তাড়াতাড়ি গিয়ে পুড়ে যাওয়া স্টেবিলাইজারটি সরিয়ে দেন। বাংলোয় যে জেনারেটর চলছিল, সরাসরি তার সঙ্গে সংযোগ করে বাতানুকূল যন্ত্র চালাতে যান পূর্ত বিভাগের বাস্তুকারেরা। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা কিন্তু তাতে আপত্তি জানান। ইতিমধ্যে পূর্ত বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বিদ্যুৎ) এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের দল পৌঁছয় মংপং বাংলোয়। নতুন স্টেবিলাইজার বসিয়ে রাত ১১টা নাগাদ ফের বাতানুকূল যন্ত্র চালানো সম্ভব হয়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘরের ওই স্টেবিলাইজারটি পুরনো হয়ে যাওয়ায় সেটি পুড়ে গিয়েছে বলে বাস্তুকাররা জানিয়ে দেন।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে তিনি খোঁজখবর নেন। সেই মতো দায়িত্বে থাকা বাস্তুকারদের নাম নথিভুক্ত করেছেন জেলাশাসক পুনীত যাদব। জেলাশাসক জানান, মুখ্যমন্ত্রী যেখানে থাকছেন, সেখানে সমস্ত কিছু খুঁটিনাটি দেখে নেওয়া উচিত দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের। সেক্ষেত্রে পুরনো স্টেবিলাইজারটি কী করে তাঁদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেল, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।
মংপঙে শিশুকে লজেন্স দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাংলোটি বন দফতরের হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাঁদের। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিকদের তা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, পূর্ত বিভাগের জলপাইগুড়ি ডিভিশনের অধীনে মালবাজার সাব ডিভিশন। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য আয়োজনের ক্ষেত্রে ২৩ জুন বৈঠক করে মংপং বন বাংলোর বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শেখরবাবু ও রাজাবাবুর উপরে।
ভোটের মুখে গত ১৫-২০ এপ্রিল মালদহ সফরে এসে নারায়ণপুরে একটি বেসরকারি হোটেলে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় তিনি হোটেলের ঘরে ফিরে স্নানে যান। সে সময় ঘরের বাতানুকূল যন্ত্র থেকে ধোঁয়া বার হতে শুরু করে। তা নিয়ে হইচই হয়। দমকলের তরফে ওই হোটেলের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল।
সম্প্রতি মাদারিহাটে ট্যুরিস্ট লজে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় রাতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে। সেই রাতেই জলদাপাড়া বাংলোয় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে পড়েছিলেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রও। তখনও মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তারপরে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিককে দু’সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ডও করা হয়। এরপর বুধবার মংপংয়ের ঘটনাতেও অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী। বাংলোটি বন দফতরের হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাঁদের। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগের আধিকারিকদের তা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, পূর্ত বিভাগের জলপাইগুড়ি ডিভিশনের অধীনে মালবাজার সাব ডিভিশন। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের জন্য আয়োজনের ক্ষেত্রে ২৩ জুন বৈঠক করে মংপং বন বাংলোর বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মালবাজার সাব ডিভিশনের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং এক জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের উপর। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তাঁদের কাছ থেকে লিখিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মংপং বাংলোতে পৌঁছন। প্রশাসনের একটি সূত্রই জানিয়েছে, মংপং বাংলোয় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সংযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ‘ভোল্টেজ’ ক্রমাগত ওঠানামা করে বলে সেখানে জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই মতো দু’টি জেনারেটর রাখা হয়। তারই একটি চালিয়ে বাংলোর ৩টি ঘরে আলো, বাতানুকূল যন্ত্র চালানো হচ্ছিল।